ক্যালসিয়াম ঘাটতি

ঘাটতি বুঝবেন যেসব লক্ষণে

বণিক বার্তা ডেস্ক

ক্যালসিয়ামের অভাবে শুষ্ক ত্বক, শুষ্ক ও ভঙ্গুর নখের সমস্যা দেখা দেয় ছবি: ওয়ার্ল্ড নিউজ টুডে

স্কুলে পড়ার সময় শেখানো হয়, হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য ক্যালসিয়াম খুবই জরুরি একটি উপাদান। কিন্তু রিউম্যাটোলজিস্ট চাদ দিল মেডিকেল নিউজ টুডেকে বলেন, শুধু হাড়ের স্বাস্থ্য নয় অন্যান্য আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের জন্য আমাদের শরীরের ক্যালসিয়াম দরকার হয়। তার মধ্যে মাংসপেশি, স্নায়ু, রক্তনালি এবং হরমোন ও এনজাইম নিঃসরণ হওয়ার জন্য এটি দরকার। সে কারণে যদি আমাদের শরীরে কখনো ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা যায়, তাহলে পুরো শারীরিক প্রক্রিয়ার ধ্বংস শুরু হয়ে যায়। তাই ক্যালসিয়াম সম্পর্কে জানতে হবে বিস্তারিত। যেন কোনোভাবে এ সমস্যায় না পড়তে হয়। 

শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হলে তার প্রভাব পড়তে পারে মাংসপেশি, হাড়, দাঁত এমনকি মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও। স্বল্প সময়ে এর তেমন কোনো লক্ষণ চোখে না পড়লেও দীর্ঘমেয়াদে এর ফলে অস্টিওপেনিয়া বা হাড়ের ঘনত্ব কম হওয়ার সমস্যা দেখা দেয়। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না নিলে হতে পারে অস্টিওপোরোসিস বা ভঙ্গুর হাড়ের সমস্যা।

তবে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি তৈরি হলে বেশকিছু লক্ষণ দেখা দেয়। সেগুলো সম্পর্কে জেনে নিন। তাহলে শুরুতেই এসব সমস্যা দূর করতে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হবে। 

যদি শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি থাকে তাহলে মাংসপেশিতে ব্যথা, ক্র্যাম্প বা খিঁচুনি হতে পারে। হাঁটাচলার সময় ঊরু বা বাহুতে সমস্যা হতে পারে। হাত, বাহু, পায়ে অসাড়তা বা শিহরণ দেখা দিতে পারে, মুখেও এমন লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এসব লক্ষণ আসে-যায় কিন্তু কাজ করলেও এসব পুরোপুরি নাই হয়ে যায় না। 

ক্যালসিয়ামের ঘাটতির কারণে অতিরিক্ত ক্লান্তিও দেখা দেয় অনেক সময়। শরীরে ক্যালসিয়ামের মাত্রা অনেক কম থাকলে এমন চিত্র দেখা যায়। এর ফলে এনার্জি কমে যায়, আবার কখনো কখনো নিদ্রাহীনতা দেখা দেয়।

ক্যালসিয়ামের ঘাটতির কারণে যে ক্লান্তি দেখা দেয় সেখানে মাথা শূন্য হয়ে যাওয়া, মাথা ঘোরা বা ফোকাস কমে যাওয়া, ভুলে যাওয়ার প্রবণতা বা দ্বিধায় পড়ার মতো পরিস্থিতি দেখা যায়। কিছু লক্ষণ দেখা যায় নখ ও ত্বকেও। এ সমস্যা তৈরি হলে শুষ্ক ত্বক, শুষ্ক ও ভঙ্গুর নখ, মোটা চুল, অ্যালোপেশিয়া, একজিমা বা প্রদাহের কারণে ত্বকে কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। 

হাড়ে ক্যালসিয়াম জমা থাকে। হাড় শক্ত ও মজবুত থাকতে হলে এটি বেশি পরিমাণে থাকতে হয়। যদি মোটের ওপর শরীরে ক্যালসিয়ামের মাত্রা কম হয়, তখন ঘাটতি পূরণে শরীর হাড় থেকে ক্যালসিয়াম নিয়ে নেয়। এতে হাড় ভঙ্গুর হয়ে যায় ও ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। 

এভাবে ক্যালসিয়াম টেনে নেয়ার কারণে হাড়ের মধ্যে মিনারেলের ঘনত্ব কমে গিয়ে অস্টিওপেনিয়া দেখা দেয় এবং ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। পরবর্তী সময়ে তা থেকে হতে পারে অস্টিওপোরোসিস। এ রোগের কারণে হাড় আরো পাতলা হয়ে ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। তাছাড়া অস্টিওপোরোসিসের সমাধান করতে হলে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। 

ক্যালসিয়ামের মাত্রা কম হলে ঋতুস্রাবের আগের লক্ষণগুলো কিছুটা তীব্র হয়। তাছাড়া দাঁতেরও কিছু সমস্যা দেখা দেয়। শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি তৈরি হলে তা দাঁত থেকেও টেনে নেয়। এর ফলে দাঁতে ক্ষয়, ভঙ্গুর দাঁত, দাঁতে কোনো অস্বস্তি বা দাঁতের মাড়ি নরম হয়ে যাওয়ার সমস্যা দেখা দেয়। শিশুকালে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি তৈরি হলে দাঁতের গঠন বাধাগ্রস্ত হয়। 

আবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হলে মুড ডিসঅর্ডারের সমস্যাও দেখা দেয়। এর কারণে কারো হতাশা তৈরি হয়। যদিও এক্ষেত্রে বাড়তি গবেষণার দরকার রয়েছে। 

তাই এ ধরনের কোনো লক্ষণ দেখা দিলেই একবার ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে নেয়া দরকার। তখন হয়তো ডাক্তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সঠিক তথ্য বলতে পারবেন এবং কোনো সাপ্লিমেন্ট প্রয়োজন হলে সেটা গ্রহণের পরামর্শ দেবেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন