দাঁতের যত্ন

যত্ন নিতে হবে গুরুত্ব সহকারে

বণিক বার্তা ডেস্ক

মুখ পরিষ্কার ও রোগমুক্ত রাখার জন্য ওরাল হাইজিন বা মুখের হাইজিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ওরাল হাইজিনকে বলা হয় প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ। এর মাধ্যমে মুখের কিছু সমস্যা যেমন ক্যাভিটি, মাড়ির রোগ, নিশ্বাসের দুর্গন্ধ বা অন্যান্য রোগ প্রতিরোধ করা যায়। ওরাল হেলথ বা মুখের স্বাস্থ্যের সঙ্গে শরীরের অনেক কিছু সম্পর্কিত। এর মাধ্যমে বোঝা যায় মুখের ভেতর কোনো ইনফেকশন রয়েছে কিনা, শরীরের অন্য কোনোস্থানে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ রয়েছে কিনা ইত্যাদি। তাই দীর্ঘমেয়াদে পুরো স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হলে দাঁত ও মাড়ি অবশ্যই সুস্থ রাখতে হবে। মুখ পরিষ্কার রাখার অনেক পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করা এবং ফ্লস, নিয়মিত ডেন্টিস্টের কাছে গিয়ে ডেন্টাল এক্স-রে করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং পরিষ্কার করা।

ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের তথ্য অনুসারে জেনে নিন দাঁতের যত্ন ঠিকভাবে নেয়ার কিছু উপায়:

দাঁত সুস্থ রাখতে সকালে নাশতার পর ও রাতে খাবারের পরে দুবার নিয়মিত সঠিকভাবে দুই মিনিট সময় নিয়ে ব্রাশ করতে হবে। যথাসম্ভব আলতো করে সার্কুলার মোশনে দাঁত ব্রাশ করতে হবে। ব্যবহৃত ব্রাশটি অবশ্যই ভালো মানের ও নরম হতে হবে। আর টুথপেস্ট ব্যবহার করতে হবে ফ্লোরাইডসমৃদ্ধ। প্রতি তিন থেকে পাঁচ মাস পর পর ব্রাশ পরিবর্তন করতে হবে। চেষ্টা করুন দাঁতের সামনের ও পেছনের দুই দিকই পরিষ্কার করতে। 

এর পাশাপাশি ফ্লস বা সুতা দিয়ে প্রতিটি দাঁতের ফাঁকের খাদ্যকণাগুলো বের করে ফেলতে হবে। এতে দাঁতের ফাঁকে জমে থাকা খাদ্যকণা থেকে ব্যাকটেরিয়া সৃষ্টি হয়ে মুখে দুর্গন্ধ হবে না। দিনে অন্তত একবার ১৮ ইঞ্চি ফ্লস দিয়ে দাঁতের ভেতরে জমে থাকা ময়লাগুলো বের করে নিন। দুই হাতের মাঝের আঙুলে ফ্লসের দুই প্রান্ত জড়িয়ে নিয়ে প্রতি দুটি দাঁতের ফাঁকে ফ্লস নিয়ে অন্তত ১০ বার ওপর-নিচ করে জমে থাকা ময়লা বের করে নিন। 

এছাড়া নজর দিতে হবে মুখ নিয়মিত কুলকুচি করার দিকে। প্রতিবার খাবারের পরে কুলকুচি করতে হবে। আর দিনে একবার জীবাণুনাশক মাউথ ওয়াশ দিয়ে অথবা এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে এক চিমটি লবণ মিশিয়ে মুখ কুলিকুচি করলেও ভালো উপকার মিলবে। এভাবে দাঁতের ক্ষয় রোগ ও মাড়ির রোগ বেশির ভাগই প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়। 

অনেকেরই বাঁকা দাঁতের সমস্যা থাকে। বাঁকা দাঁতে ময়লা জমে বেশি। এ সমস্যা সমাধানে দীর্ঘ সময় নিয়ে দাঁত ব্রাশ করতে হবে। দাঁত বাঁকা থাকলে খাবারের পরে অবশ্যই কুলি করা উচিত। তা না হলে দাঁতের ফাঁকে জমে থাকা চর্বি ও শর্করাযুক্ত খাবার দাঁতকে দ্রুত ক্ষয় করে এবং দাঁতের মসৃণতা নষ্ট করতে পারে। 

ওরাল হাইজিন নিশ্চিত করতে দাঁতের পাশাপাশি জিহ্বাও ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। দাঁত ব্রাশ করার সময় জিহ্বা ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। টাং স্ক্র্যাপার অথবা ব্রাশ দিয়েই আস্তে আস্তে জিহ্বা পরিষ্কার করতে হবে।

শরীরের মতো মানুষের দাঁত-মুখেরও ব্যায়াম আছে, এতে করে দাঁত-মুখ সুস্থ রাখা সম্ভব হয়। জাইলোকল জাতীয় চুইংগাম খেলে দাঁত ও মুখের মাসলের ব্যায়াম হয়। এছাড়া যদি টুথপিক ব্যবহারের অভ্যাস থাকে তবে তা ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। টুথপিকের ব্যবহারে অনেক সময় মাড়িতে ইনফেকশন হতে পারে। অনেকেই দাঁত পরিষ্কারে কয়লা, ছাই, মাটি, গাছের ডাল ইত্যাদি ব্যবহার করেন, তাতে সমস্যা আরো বাড়তে পারে।

পান, তামাক, জর্দা খাওয়ার অভ্যাস থাকলে তা অনেক সময় মুখে ঘা, ক্ষত বা ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। এগুলো দাঁতের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। তাই এসব অভ্যাস বাদ দিতে হবে। বিরত থাকতে হবে ধূমপান থেকেও। সিগারেটে থাকা নিকোটিন দাঁতের এনামেল ক্ষয় করে ফেলে। এতে দাঁতে কালো দাগ তৈরি হয়। তাই সেটাও এড়িয়ে চলা উচিত। 

দাঁতে বা মুখের ভেতর যেকোনো সমস্যা হলে কখনই অবহেলা করা উচিত নয়। মুখের ভেতর কোনো পরিবর্তন দেখা দিলে (যেমন ঘা, লাম্প ইত্যাদি) যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত। প্রতি ছয় মাসে অন্তত একবার ডেন্টিস্টের কাছে গিয়ে মুখ ও দাঁতের পরীক্ষা করানো দরকার। বছরে দুবার পরীক্ষা করা এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হলে সারা জীবন দাঁত থাকবে সুরক্ষিত ও মজবুত।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন