ওবেসিটি বা স্থূলতা

ছড়িয়ে রয়েছে নানা ভুল ধারণা

বণিক বার্তা ডেস্ক

বর্তমানে স্থূলতা একটি বড় সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। কিন্তু এ নিয়ে এখনো তেমন সচেতনতা গড়ে ওঠেনি। বরং ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে নানা ভুল ধারণা। জেনে নিন যেসব ভুল ধারণা ছড়িয়ে রয়েছে সেগুলো। 

সবার একটা খুব সাধারণ ধারণা থাকে যে স্থূলকায় মানুষরা বেশি অলস হয়। আদতে তা নাও হতে পারে। এটি একটি প্রচলিত ভুল ধারণা। শুধু সাধারণ মানুষ নয়, স্বাস্থ্যসেবা পেশাজীবীদের মধ্যেও এ ধারণা প্রবল। কানাডার হেলথ মেজারস সার্ভে অর্থাৎ স্বাস্থ্য পরিমাপ জরিপের ফলাফল বলছে ভিন্ন কথা। জরিপের তথ্যমতে, স্থূলতায় আক্রান্ত মেয়েরা প্রতিদিন গড়ে ১১ হাজার ১৫৯ বার পদক্ষেপ ফেলে, যেখানে স্বাভাবিক ওজনের মেয়েদের ক্ষেত্রে এ সংখ্যা ১০ হাজার ২২৪। ছেলেদের ক্ষেত্রে যদিও ফল উল্টো। স্থূল ছেলেরা প্রতিদিন গড়ে ১০ হাজার ২৫৬ বার পা  ফেলে। বিপরীতে স্বাভাবিক ওজনের ছেলেরা ফেলে ১২ হাজার  ৫৮৪টি পদক্ষেপ।

স্থূলতার কারণ হিসেবে বারবরই উল্লেখ করা হয় অস্বাস্থ্যকর খাবার ও কায়িক পরিশ্রম কম করার বিষয়টি। কিন্তু এখন চিকিৎসাশাস্ত্র বলছে, এগুলো ছাড়াও আরো কিছু কারণে স্থূলতা দেখা দিতে পারে। যেমন অপর্যাপ্ত ঘুম, মানসিক চাপ, অবসাদ, এন্ডোক্রাইন বা অন্তঃস্রাবে বিঘ্ন, ওষুধ, দীর্ঘদিনের ব্যথা, গর্ভধারণের প্রভাব ইত্যাদি। নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার উদ্ধৃতি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন বা জৈবপ্রযুক্তি তথ্যবিষয়ক কেন্দ্র বলছে, অপর্যাপ্ত ঘুম ওজন কমানোর প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে। ওজন কমানোর প্রচেষ্টায় তাই চিকিৎসা পেশাজীবীদের এসব কারণের দিকে মনোযোগ দেয়ার কথা বলা হচ্ছে বেশি বেশি। 

স্থূলতার হার নিয়েও অনেক ভুল ধারণা আছে। অনেকেরই ধারণা স্থূলতার হার উন্নত দেশগুলোতে অনেক বেশি। কিন্তু সারা বিশ্বের স্থূলতার তালিকার দিকে তাকালে অনেককেই অবাক হতে হবে। স্থূলতার ব্যাপকতার দিক থেকে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হলো প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ, আমেরিকান সামোয়া, যেখানে বাসিন্দাদের ৭৫ শতাংশই স্থূলতায় আক্রান্ত বলে ধারণা করা হয়।

অতিরিক্ত ওজন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এটাই সবার প্রচলিত বিশ্বাস। ২০১২ সালে ইউরোপিয়ান সোসাইটি অব কার্ডিওলজি অর্থাৎ হৃদরোগবিষয়ক ইউরোপীয় সমিতির এক গবেষণায় কিছুটা বিপরীত তথ্য পাওয়া যায়। ওই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, কিছু মানুষের স্থূলতা থাকলেও হজম প্রক্রিয়া ভালো হওয়ায় তাদের সাধারণ মানুষের তুলনায় হৃদরোগ বা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার ঝুঁকি কম। তারা উচ্চ কোলেস্টেরল ও রক্তচাপে ভোগেন না এবং অন্য স্থূল মানুষদের চেয়ে অনেক বেশি শারীরিকভাবে সুস্থ থাকেন।

স্থূলতার সঙ্গে বংশগতিরও বেশ সম্পর্ক রয়েছে। সম্প্রতি নরওয়েজিয়ান ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির একদল গবেষকের গবেষণা বলছে, যাদের পরিবারে কারো না কারো স্থূলতার ইতিহাস আছে, তাদের বংশধরদের মধ্যে এ রোগ বেশি হয়। এখানে ব্যক্তির ইচ্ছা-অনিচ্ছা বা খাদ্যাভ্যাস খুব একটা বেশি ভূমিকা রাখতে পারে না।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন