মুখগহ্বরের ক্যান্সার

প্রভাব পড়তে পারে রোগীর কথা বলার ক্ষমতায়

ডা. আবদুল্লাহ আল মাসুদ

সারা পৃথিবীতেই মুখগহ্বরের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ছে। বিশেষত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান তাইওয়ানে এতে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা ঊর্ধ্বমুখী। অসচেতনতা মুখের অযত্ন মূলত এর জন্য দায়ী। একটু সতর্কতার সঙ্গে নিয়মিত মুখের খেয়াল রাখলে মুখগহ্বরের ক্যান্সার থেকে সহজেই পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। 

মুখের ভেতরের কোনো ক্ষত তিন সপ্তাহের বেশি সময়েও না সারলে মুখগহ্বরের ক্যান্সারের ঝুঁকি তৈরি হয়। আবার কারণ ছাড়াই মুখের ভেতরের কোনো অংশে মাংস বৃদ্ধি পেলে বা লাম্প দেখা গেলে এবং দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকলে তা মুখগহ্বরের ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। কোনো দাঁত যদি কারণ ছাড়াই নড়তে থাকে এবং সেই দাঁত তুলে ফেলার পর যদি ক্ষত না শুকায় কিংবা ভাঙা কোনো দাঁতের কারণে যদি মুখের ভেতরে ক্ষত তৈরি হয় তাহলে সচেতন হতে হবে। এগুলো ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। মুখের ভেতর লাল বা সাদা দাগ দেখা দেয়া, বেশি মাত্রায় গলা ব্যথা হওয়া, ব্রাশ করার সময় বা থুতু ফেলার সময় মুখ বা মাড়ি থেকে রক্ত বের হওয়া ইত্যাদি বিষয় মুখগহ্বরের ক্যান্সারের ঝুঁকিপূর্ণ লক্ষণ।

মুখগহ্বরের ক্যান্সার হওয়ার ক্ষেত্রে পারিবারিক ইতিহাস একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। এছাড়া অনেকেরই পান-সুপারি খাওয়ার অভ্যাস আছে। গবেষণা বলছে, পান-সুপারি-জর্দায় ৪৭টি ক্যান্সার উপাদান আছে। মুখে গুল ব্যবহার করলে এবং নিয়মিত পরিষ্কার না করলে মুখগহ্বরের ক্যান্সার হতে পারে। হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) সংক্রমণেও এটি হয়ে থাকে। অতিরিক্ত মদ্যপান, বিকৃত যৌনাচারের কারণেও ক্যান্সার হতে পারে।

নারীদের তুলনায় পুরুষরা এতে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকেন। সাধারণত ৫১ থেকে ৫৫ বছর বয়সীরা রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে বেশি রয়েছেন। তবে বিকৃত যৌনাচার এবং এইচপিভি সংক্রমণের কারণে যে মুখগহ্বরের ক্যান্সার হয়, তাতে ৩০ থেকে ৪০ বছরের বয়সীদের বেশি আক্রান্ত হতে দেখা যাচ্ছে। যারা অতিরিক্ত তামাকজাত দ্রব্য অ্যালকোহল সেবন করেন তাদেরও ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে।

অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ক্যান্সার আক্রান্ত অংশ নির্মূল করাই মূলত মুখগহ্বরের ক্যান্সারের প্রথম প্রধান চিকিৎসা। মাইক্রোভাসকুলার রিকনস্ট্রাকশনসহ মুখগহ্বরের ক্যান্সারের অত্যাধুনিক উন্নত প্রযুক্তির সব ধরনের অস্ত্রোপচার এখন বাংলাদেশেই সম্ভব। এছাড়া আক্রান্তের মাত্রা অনেক বেশি হলে সার্জারির আগে নিউ অ্যাডজুভ্যান্ট কেমোথেরাপি দরকার হতে পারে। সার্জারির পর সার্জারি-পরবর্তী রেডিওথেরাপি, টার্গেটেড ড্রাগ থেরাপি, কেমোথেরাপি বা ইমিউনোথেরাপি প্রয়োজন হতে পারে।

মুখগহ্বরের ক্যান্সারের চিকিৎসা চলাকালে বা পরবর্তীকালে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। যেমন খাদ্যগ্রহণে অসুবিধা থেকে পানিশূন্যতা পুষ্টির অভাব, মুখের মিউকাস মেমব্রেনের জ্বালা-যন্ত্রণা। এছাড়া অবসাদ, ক্লান্তি বিষণ্নতা দেখা দিতে পারে। ক্যান্সারের চিকিৎসার ফলে রোগীর কথা বলার ক্ষমতাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

লেখক: এফসিপিএস (ওএমএস), ওরাল ক্যান্সার অ্যান্ড রিকনস্ট্রাকটিভ সার্জন, কনসালট্যান্ট, ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতাল, সহকারী অধ্যাপক ঢাকা ডেন্টাল কলেজ হাসপাতাল

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন