লিপিড প্রোফাইল

নিয়ন্ত্রণে রাখতে পরিবর্তন আনুন জীবনযাপনে

ডা. নুর মোহাম্মদ

ছবি: ওমেন্স হেলথ

কোলেস্টেরল দেহের জন্য একটি প্রয়োজনীয় উপাদান। তবে তা অবশ্যই পরিমিত মাত্রায় থাকা উচিত। রক্তে এর মাত্রা বেড়ে গেলে ধমনির গায়ের সঙ্গে তা লেগে গিয়ে পলির মতো স্তর জমে। এতে ধমনি সরু হয়ে যেতে পারে, এমনকি ধমনি বন্ধও হয়ে যেতে পারে। ফলে করোনারি আর্টারি ডিজিজসহ নানাবিধ হৃদযন্ত্রঘটিত রোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি তৈরি হয়।

ভালো ও মন্দ কোলেস্টেরল: কোলেস্টেরল এক প্রকার চর্বিজাতীয় পদার্থ, যা প্রাকৃতিকভাবে আমাদের শরীরে পাওয়া যায়। ‘এইচডিএল’ ও ‘এলডিএল’—দেহে ভালো ও খারাপ এ দুই ধরনের কোলেস্টেরলই থাকে। এইচডিএল বা হাই ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন কোলেস্টেরল শরীরের জন্য ভালো। এটি হৃদরোগসহ অন্যান্য রোগের ঝুঁকি কমায়। অন্যদিকে এলডিএল বা লো ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন হলো খারাপ কোলেস্টেরল। মূলত এর অতিরিক্ত উপস্থিতিই দুশ্চিন্তার কারণ।  

যাদের ঝুঁকি বেশি: সাধারণত বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়তে থাকে। যাদের বয়স ২০ বছর কিংবা তার চেয়ে বেশি, তাদের পাঁচ বছরে অন্তত একবার রক্ত পরীক্ষা করে দেখা উচিত। পুরুষের তুলনায় নারীদের দেহে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধির ঝুঁকি বেশি। যারা ধূমপান করেন, শরীরচর্চা বা কায়িক শ্রম করেন না কিংবা অধিক পরিমাণে মাংস, ঘি, মাখন, পনির প্রভৃতি স্যাচুরেটেড ও ট্রান্স ফ্যাটজাতীয় খাবার খেয়ে থাকেন তারাও অন্যদের তুলনায় বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন।  

কোলেস্টেরলের কাঙ্ক্ষিত মাত্রা নির্ধারণ: নারী বা পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই এইচডিএল বা ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা ৪৫ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটারের ওপরে থাকা দরকার। ৬০-এর ওপরে রাখতে পারলে সবচেয়ে ভালো। অন্যদিকে উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, অতিরিক্ত মেদভুঁড়ি বা হৃদরোগ হওয়ার ঝুঁকি আছে যাদের তাদের ক্ষেত্রে কম ঘনত্বের কোলেস্টেরলের মাত্রা ৭০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটারের নিচে থাকা উচিত। যাদের হৃদরোগের ঝুঁকি নেই তাদের ১৬০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটারের নিচে রাখা যেতে পারে।

খারাপ কোলেস্টেরল কমাবেন যেভাবে: কোলেস্টেরল কমানোর জন্য প্রধান নির্দেশনা হচ্ছে জীবনাচরণ পদ্ধতির পরিবর্তন তথা নিয়মমাফিক জীবনযাপন। প্রয়োজন পড়লে ওষুধ খাওয়ারও দরকার হতে পারে।

খাদ্যাভ্যাসে সতর্কতা: কোলেস্টেরল কমাতে সঠিক খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত জরুরি। কিছু কিছু খাবার আছে যা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। আবার কিছু খাবার খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায়।

এড়িয়ে চলবেন যেসব খাবার: ডিমের কুসুম এবং অন্যান্য কোলেস্টেরলযুক্ত খাবার। মাখন, ঘি, পনির, কেক প্রভৃতি। চর্বিযুক্ত গরু, খাসি বা ভেড়ার মাংস। কৃত্রিম চিনিযুক্ত পানীয়। যেমন আইসক্রিম ও বিভিন্ন ধরনের সফট ড্রিংকস। বিভিন্ন ভাজাপোড়া ও সরাসরি তেলে ভাজা খাবার। 

যেসব খাবার খাবেন: আনস্যাচুরেটেড তেল, যেমন সয়াবিন তেল, সূর্যমুখী তেল, জলপাইয়ের তেল। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডসমৃদ্ধ মাছ। বিশেষত সামুদ্রিক মাছ। ফল ও শাকসবজি। চিনাবাদাম, কাঠবাদাম। হোল গ্রেইন, যেমন গম, ভুট্টা, ওটমিল। লাল চাল, লাল আটা।

নিয়মিত শরীরচর্চা ও শারীরিক শ্রম: শারীরিক পরিশ্রম ও শরীরচর্চা রক্তের খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমায়। পাশাপাশি উপকারী কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়ায়। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট শরীরচর্চা করুন। রাতের খাবারের পর কমপক্ষে ৪৫ মিনিট হাঁটুন। সিঁড়িতে ওঠানামাও বেশ কার্যকর। কর্মস্থলে অবস্থানকালে প্রতি ঘণ্টায় অন্তত মিনিট পাঁচেক হাঁটাহাঁটি করুন।  

ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার: ধূমপান ও মদ্যপানের অভ্যাস থাকলে তা পরিহার করুন। এগুলো রক্তে উপকারী কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমিয়ে দেয়।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন: অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন।

নিয়ন্ত্রিত ওজন: দেহের অতিরিক্ত ওজন কোলেস্টেরল বৃদ্ধির পক্ষে সহায়ক। তাই দেহের বাড়তি মেদ ঝরিয়ে ফেলুন। বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী বিএমআই বা ‘বডি মাস ইনডেক্স’-এর মান বজায় রাখুন।

দুশ্চিন্তামুক্ত থাকুন: মানসিক চাপ সামলাতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি মানসিক দুশ্চিন্তা ভালো কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমিয়ে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তাই দৈনন্দিন জীবনে প্রফুল্ল থাকুন।

লেখক: সিনিয়র কনসালট্যান্ট, কার্ডিওলজি

ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হাসপাতাল

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন