একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

মূল্যস্ফীতি আর যেন না বাড়ে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল রাজধানীর এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক সভায় সভাপতিত্ব করেন ছবি: পিআইডি

মূল্যস্ফীতি ও বিদ্যুতের জন্য মানুষের কষ্ট হচ্ছে। তাই মূল্যস্ফীতি যেন আর না বাড়ে সেজন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি জানান, অল্প দূরত্বেও কেন দামের এত তারতম্য হবে? পচনশীল কৃষিপণ্য সংরক্ষণের জন্য আঞ্চলিক সংরক্ষণাগার নির্মাণেরও নির্দেশ দিয়েছেন সরকারপ্রধান। 

গতকাল রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এ সভায় ১৮টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। সভা শেষে প্রধানমন্ত্রীর সব অনুশাসন তুলে ধরে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান এমপি।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের প্রথম লক্ষ্য হবে মূল্যস্ফীতি আর যেন না বাড়ে। এজন্য বাজারে স্টক বাড়াতে হবে। ইমপোর্ট অথবা অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়াতে হবে। দেশব্যাপী বিভিন্ন পয়েন্টে নিত্যপণ্যের স্টক বাড়াতে হবে। সংবেদনশীল যেসব আইটেমের দাম রাতারাতি বেড়ে যায় সেগুলোর স্টক বাড়াতে হবে। টিসিবিকে আরো জোরালোভাবে স্টক করতে হবে।’

বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শুধু ঢাকায় স্টক করলে হবে না; রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জায়গায় সংবেদনশীল পণ্যের স্টক বাড়াতে হবে। বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে চাল, ডাল, আলু, তেল, পেঁয়াজ যা আছে সবকিছুর স্টক বাড়াতে হবে। এসব কৌশল দ্রুত নিতে হবে।’

এ সময় সরকারপ্রধান মূল্যস্ফীতি কেন বাড়ছে এর কারণ খুঁজে বের করার নির্দেশও দেন। সভায় তিনি বৈদেশিক মুদ্রার চাপ কমাতে বৈদেশিক ঋণের প্রকল্পগুলোয় অগ্রাধিকার দিতে বলেন। এজন্য জিটুজি ভিত্তিতে নেয়া ঋণের অর্থের ব্যবহার বাড়াতেও তাগিদ দেন শেখ হাসিনা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কারণে কোনো কাজ বা অর্থ ব্যয়ে যাতে দেরি না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলেন। 

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘সভায় প্রধানমন্ত্রী ভারত ও চীনের মতো বিভিন্ন দেশের সঙ্গে জিটুজি প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার ওপর জোর দিয়েছেন। কারণ ওইসব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি (লাইন অব ক্রেডিট) রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আজকের একনেক সভায় মোট ১১ হাজার ৩৮৭ কোটি ৯১ লাখ টাকা ব্যয়ের মোট ১৮টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের অংশ থেকে ৭ হাজার ৪৪৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, ৮০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা সংশ্লিষ্ট সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ও বাকি ৩ হাজার ৮৬১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা প্রকল্প সহায়তা হিসেবে আসবে।’

১৮টি অনুমোদিত প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে নয়টি নতুন ও নয়টি সংশোধিত প্রকল্প। এছাড়া বৈঠকে একটি প্রকল্পের ব্যয় না বাড়িয়ে সময়সীমা বাড়ানোর অনুমোদন দেয়া হয়।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী সব ক্ষেত্রে কঠোরতা বজায় রাখতে ও এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি না রেখে দেশীয় উৎপাদন বাড়াতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে পুনরায় নির্দেশ দিয়েছেন।’

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে শেখ হাসিনা বিভিন্ন বাজার ও কাঁচাবাজারের পণ্যের দামের পার্থক্য থাকায় গবেষণা পরিচালনার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। প্রধানমন্ত্রী পেঁয়াজ ও আদার মতো পচনশীল আইটেমগুলোর জন্য আঞ্চলিক স্টোরেজ ব্যবস্থা স্থাপনের ওপরও জোর দেন সভায়।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বর্তমান ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির প্রবণতা এবং দেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ঘাটতির কারণে লোডশেডিংয়ের কথা স্বীকার করেছেন। সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার এখন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি পরিস্থিতি সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা।’

মূল্যস্ফীতি কমবে বলে তার আগের ভবিষ্যদ্বাণী উল্লেখ করে এমএ মান্নান বলেন, ‘কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তা কমেনি, বরং বেড়েছে; যার জন্য সরকার তার উপলব্ধ উপকরণ ব্যবহার করার মতো যা যা প্রয়োজন তা করবে।’

পরিকল্পনামন্ত্রী আরো বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের প্রথম কৌশল হবে এটিকে আর বাড়তে না দেয়া এবং তারপরে তা আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা।’

এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘শুধু মার্কিন ডলারের উচ্চ বিনিময় হারের কারণেই দেশে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে এটা ঠিক নয়। এর পেছনে আরো কিছু কারণ রয়েছে।’

মার্কিন ডলার ছাড়া অন্যান্য মুদ্রার সঙ্গে বাণিজ্য পরিচালনার চেষ্টা চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিদেশী মুদ্রার রিজার্ভ এখনো ৩০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে রয়েছে। তবে এটি আবারো ৫০ বিলিয়ন ডলারে যেতে পারে।’

গতকালের একনেকে অনুমোদিত প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে ফরিদপুর জেলাধীন মধুমতী নদীর বাম তীর ভাঙন থেকে শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ স্মৃতি জাদুঘর সংযোগ রাস্তাসহ অন্যান্য এলাকা সংরক্ষণ ও ড্রেজিং প্রকল্প। বাগেরহাট জেলার পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প। নতুন ছয়টি আঞ্চলিক কার্যালয় স্থাপনের মাধ্যমে স্থানভিত্তিক ধানের জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং বিদ্যমান গবেষণার উন্নয়ন। নেত্রকোনা জেলার গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প। আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প (পঞ্চম সংশোধন)। ১০টি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য আধুনিক ১৯টি হোস্টেল ভবন নির্মাণ প্রকল্প। পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন আর্টস ফ্যাকাল্টি বিল্ডিং স্থাপন প্রকল্প। হায়ার এডুকেশন এক্সিলারেশন অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন প্রকল্প। গুরুত্বপূর্ণ নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প। বাগেরহাট কালেক্টরেটের নতুন ভবন নির্মাণ প্রকল্প। বাংলাদেশ রিজিওনাল কানেক্টিভিটি প্রজেক্ট-১, শেওলা, রামগড় ও ভোলাগঞ্জ স্থলবন্দর উন্নয়ন এবং বেনাপোল স্থলবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার আধুনিকায়ন প্রকল্প। সাতক্ষীরা সড়ক সিটি ও সিটি বাইপাস সড়ককে সংযুক্ত করে সংযোগ সড়কসহ তিনটি লিংক রোড নির্মাণ প্রকল্প। সাভার সেনানিবাস এলাকায় মিট প্রসেসিং প্লান্ট স্থাপন প্রকল্প। ডিজিএফআইয়ের টেলিযোগাযোগ ও আইসিটি অবকাঠামো, মানবসম্পদ এবং কারিগরি সক্ষমতা উন্নয়ন প্রকল্প। বাংলাদেশ রেলওয়ের ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে তৃতীয় ও চতুর্থ ডুয়াল গেজ লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ডুয়াল গেজ ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্প। নড়াইল জেলার পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প। লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন