বিচারককে অযোগ্য ঘোষণার দাবি ডোনাল্ড ট্রাম্পের

বণিক বার্তা ডেস্ক

ছবি: এপি

স্টর্মি ড্যানিয়েল নামের এক নারীকে ‘হুশ মানি’ বা অবৈধভাবে অর্থ প্রদানের অভিযোগে নিউইয়র্ক রাজ্যের ম্যানহাটনের আদালতে অভিযুক্ত হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সাবেক এ মার্কিন প্রেসিডেন্ট তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করায় মামলাটির কোনো রায় এখনো আসেনি। এর পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণ হয়েছে আগামী বছরের মার্চে। তবে তার বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনাকারী বিচারকের বিরুদ্ধে সম্প্রতি গুরুতর অভিযোগ এনেছেন সাবেক এ প্রেসিডেন্ট। বিচারককে পক্ষপাতদুষ্ট ও অযোগ্য ঘোষণার মাধ্যমে দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি। খবর দ্য হিল।

ট্রাম্পের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, নিউইয়র্ক রাজ্যের বিচারক হুয়ান মার্চানের মেয়ে ম্যানহাটনে একটি কনসাল্টিং ফার্মে কাজ করেন। ওই প্রতিষ্ঠানটি কাজ করে ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে। পারিবারিক এ সংশ্লিষ্টতার কারণে ওই বিচারক পক্ষপাত দোষে দুষ্ট বলে মনে করা হচ্ছে। এছাড়া ট্রাম্পের আইনজীবীরা উল্লেখ করেছেন, বিচারক হুয়ান মার্চান সর্বশেষ নির্বাচনের আগে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেন ও উদারপন্থী গোষ্ঠীগুলোকে রাজনৈতিক অনুদান দিয়েছেন। এছাড়া গত বছর ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের বিরুদ্ধে কর ফাঁকি মামলায় ওই বিচারকের অংশগ্রহণের বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে। আইনজীবীরা বলছেন, ‘‌ওই সময়ে কর ফাঁকি মামলায় সহযোগিতা করতে ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের সিএফও অ্যালান উইসেলবার্গকে চাপ দিয়েছিলেন বিচারক হুয়ান মার্চান।’ 

যুক্তরাষ্ট্রের আদালতের কাছে মামলাটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। দেশটির ইতিহাসে প্রথম কোনো প্রেসিডেন্ট ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত হয়েছেন। ট্রাম্পের আইনজীবীরা বলছেন, ‘‌নিউইয়র্ক রাজ্যের মানুষ ও মার্কিন নাগরিকদের বিশ্বাস এ মামলা পরিচালনাকারী বিচারক এবং সংশ্লিষ্টরা নিরপেক্ষ থাকবেন। অথচ ওপরের ঘটনাগুলো থেকে স্পষ্ট হচ্ছে, সম্মানিত বিচারক এসব বিষয় মেনে চলেননি। সুতরাং তার পদত্যাগ করা উচিত।’

দ্য হিলের তথ্যানুযায়ী, ২০১৬ সালের নির্বাচনের আগে অপ্রদর্শনযোগ্য চলচ্চিত্রের তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার হুশ মানি প্রদানের অভিযোগ ওঠে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। অভিযোগ অনুযায়ী, লেনদেনটিতে মধ্যস্থতা করেন ট্রাম্পের সাবেক আইনজীবী মাইকেল কোহেন। পাশাপাশি অর্থ লেনদেন সম্পর্কিত ও ব্যবসায়িক রেকর্ড জালিয়াতিসহ ৩৪টি অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে স্টর্মি ড্যানিয়েলের অভিযোগটি সরাসরি অস্বীকার করেছেন ট্রাম্প। এজন্য এ মামলার পাশাপাশি আরো একাধিক অপরাধমূলক মামলার তদন্ত চলছে।

ফেডারেল নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, নিউইয়র্ক আদালতে কর্মরত হুয়ান মার্চান নামে এক ব্যক্তি ২০২০ সালের জুলাইয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ৩৫ ডলার অনুদান করেছিলেন। ওই অনুদান থেকে বাইডেনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারে ১৫ ডলার, প্রগতিশীল অংশগ্রহণ প্রকল্পে ১০ ডলার ও ‘স্টপ রিপাবলিকান’ নামে একটি গ্রুপে বাকি ১০ ডলার জমা করা হয়েছে। এজন্যই ট্রাম্পের আইনজীবীরা বিচারক মার্চানের কাছে এ ধরনের অনুদানের ব্যাখ্যা চেয়েছেন।

আইনজীবীরা আদালতকে দেয়া লিখিত বিবৃতিতে বলেছেন, ‘‌আপনার সম্মানিত বিচারক ২০২০ সালে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বীকে অর্থ দিয়েছেন। সুতরাং বিষয়টি যুক্তিযুক্ত, এ আদালত নিরপেক্ষ না থেকে ট্রাম্পের তুলনায় আগামী নির্বাচনের জন্য অন্য এক প্রার্থীর পক্ষে রায় দেবে।’

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ বিবৃতি ট্রাম্পের সর্বশেষ আইনগত কৌশল, যাতে বিচারক মার্চানকে মামলার রায় দেয়া থেকে বিরত রাখা যায়। 

গত মাসে, ট্রাম্প মামলাটি ফেডারেল আদালতে স্থানান্তর করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। তবে ট্রাম্পের পক্ষে মার্চানকে অযোগ্য প্রমাণ করা কঠিন হতে পারে। কেননা এ সিদ্ধান্ত বিচারক মার্চান নিজেই নেবেন। এর আগে ট্রাম্পের সংস্থাটি কর ফাঁকি মামলার সময়ও তাকে পদত্যাগ করানোর ব্যাপারে সফল হয়নি।

কিন্তু নিউইয়র্কের বিচার ব্যবস্থা রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা বা প্রভাবকে নিষিদ্ধ করে। বিচার বিভাগের নীতিবিষয়ক রাজ্য কমিশনের প্রশাসক রবার্ট টেমবেকজিয়ান, বিচারক মার্চানের ৩৫ ডলার অনুদানের বিষয়টি তদন্তের বিষয় হতে পারে কিনা, সে বিষয়ে মন্তব্য করেননি। এছাড়া ম্যানহাটন ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির এক মুখপাত্র বলেছেন, ‘‌আনুষ্ঠানিকভাবে কাগজপত্রের মাধ্যমে জবাব দেয়া হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন