
শিশুর স্পিচ ডিলে বা কথা বলতে দেরি হচ্ছে মনে হলে বাবা-মাকেই প্রথমত সতর্ক হতে হবে। প্র্রথমে তারা কোনো একজন শিশু বিশেষজ্ঞের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করে নিতে পারেন। তিনি হয়তো বুঝতে পারবেন আসলে শিশুটি এ সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছে কিনা। পরে সম্ভাব্য কারণ নির্ধারণ করে তিনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে পাঠিয়ে দেবেন। কারণভেদে শিশু স্নায়ুরোগ, শিশু মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বা স্পিচ অ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপিস্টের কাছে পাঠাতে পারেন।
দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে এ-সংক্রান্ত সেবা রয়েছে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল নিউরো ডিজঅর্ডারের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে ইনস্টিটিউট অব পেডিয়াট্রিক নিউরো ডিজঅর্ডার অ্যান্ড অটিজম। বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও জেলা পর্যায়ে ‘শিশু বিকাশ কেন্দ্র’
নামে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব স্থানে গেলে মিলবে এ সমস্যাসংক্রান্ত সেবা। কোন ধরনের পরিচর্যায় শিশু স্বাভাবিক জীবনে ফিরবে, সেসব দিকনির্দেশনাও মিলবে সেখান থেকে।
তবে শিশু এ সমস্যায় আক্রান্ত হলে একটা রুটিন চিকিৎসা দরকার পড়ে। আজ ওষুধ খেলাম আর কাল সেরে গেল তেমন হয় না। দীর্ঘ সময় লাগে। সেই সঙ্গে দরকার হয় ধৈর্য। শিশুকে স্পিচ থেরাপি দিয়ে ঠিকঠাক অবস্থায় আনতে এক-দুই বছর পর্যন্ত লাগতে পারে। যেহেতু এটি একটি দীর্ঘকালীন চিকিৎসা, তাই অনেক প্রতিষ্ঠানে স্কুলভিত্তিক কার্যক্রম নেয়া হয়, পাশাপাশি শিশুকে থেরাপিও হয়। সেসব স্কুলের চার্জ অনেক সময় বেশি হতে পারে। ঢাকা বা বিভাগীয় শহরগুলোতে ৪৫ মিনিটের একটি থেরাপি সেশনের জন্য ১ হাজার থেকে ১৫০০ টাকা লাগতে পারে। অনেক সময় গড়ে ৫০০ থেকে ৬০০-তেও পাওয়া যায়।
তবে কোনো শিশু এ ধরনের সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছে বুঝতে পারলে, বাবা-মা ও শিশুর সেবা প্রদানকারীকে বেশি সতর্ক হতে হবে। চিকিৎসক বা থেরাপিস্ট শিশুকে হয়তো এক ঘণ্টা সময় দেবেন কিন্তু পরিবারের সঙ্গেই শিশুটি থাকবে বাকি ২৩ ঘণ্টা। এ সময়েও যেন শিশু কোনো না কোনোভাবে পরিচর্যার মধ্যে থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। নিউরোলজিক্যাল বা জেনেটিক্যাল কোনো কারণ ছাড়া শুধু পারিপার্শ্বিক পরিবেশগত কারণে শিশু এ সমস্যায় আক্রান্ত হলে পরিবারের স্বজনদের চেষ্টা করতে হবে যেন শিশু ডিভাইসের আসক্তি থেকে মুক্ত হয়। তাকে প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে মেশারও সুযোগ দিতে হবে। অন্য শিশুদের সঙ্গে খেলাধুলার সুযোগ বাড়ানোর কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। অন্য শিশু ও প্রাকৃতিক পরিবেশে সময় কাটাতে পারলেই শিশুর স্বাভাবিক ভাষিক বিকাশ দক্ষতা অর্জন করা সহজ হবে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করেন এ সমস্যায় থেরাপির খরচের তুলনায় বাবা-মাকে বেশি খরচ করতে হয় যাতায়াতে। কারণ সবখানে এ সেবা নেই, তাই দূর-দূরান্তের বিভিন্ন জায়গা থেকে সন্তানদের আনা-নেয়া করতে হয় বাবা-মায়েদের। ফলে দূর থেকে আসা-যাওয়া করে থেরাপি নেয়া ও চার্জের কারণে খরচের পাল্লাটা বেশ ভারীই হয়।