বিক্রম গোখলের অভিনয়গুণে ছোট চরিত্রেও দর্শকরা মুগ্ধ হতেন

মাহমুদুর রহমান

নায়ক ও নায়িকার বাইরে সিনেমায় অনেক সময়ই অভিনেতার অভিনয়গুণে ছোটখাটো চরিত্রও প্রধান হয়ে ওঠে। প্রধান অনেকেই হন কিন্তু কেউ কেউ হয়ে ওঠেন কিংবদন্তি। ততটা আলোচিত হয়তো হন না কিন্তু অভিনয় জগতে তাদের সবাই চেনে এবং সম্মান করে। বিক্রম গোখলে এমনই এক অভিনেতা। সত্তরের দশকে অভিনয় শুরু করে এই সেদিন পর্যন্ত দাঁড়িয়েছেন ক্যামেরার সামনে। বার্ধক্য তাকে ঘিরে ধরেছিল। হাসপাতালে ছিলেন প্রায় ২০ দিন। এরপর একাধিক অঙ্গ অকার্যকর হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। ৭৭ বছর বয়সে তিনি পুনের দীননাথ মঙ্গেশকর হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

জীবৎকালে দুই শতাধিক অধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন বিক্রম গোখলে। ভারতীয় সিনেমার দর্শকরা তাকে বৈচিত্র্যময় চরিত্রে অভিনয় করতে দেখেছে। ১৯৮৯ সালের সেলিম লাংড়ে পে মাত রো সিনেমায় এক মুসলিম বেকার ছেলের বাবার চরিত্রে অভিনয় করেছেন। সেখানে বাবা চরিত্রের গাম্ভীর্য হয়তো অনেকের চোখে পড়েনি। কিন্তু ১৯৯৯ সালের হাম দিল দে চুকে সানামের পণ্ডিত দরবারের চরিত্রটি সবার মনে থাকবে। ভারতীয় রক্ষণশীল একটি পরিবারের প্রধানের চরিত্র এর চেয়ে দৃঢ়ভাবে কেউ হয়তো করতে পারতেন না। গোখলের চরিত্রটিকে তুলনা করা যায় একমাত্র অমিতাভ বচ্চন অভিনীত দুটি চরিত্রের সঙ্গে-কাভি খুশি কাভি গমের যশবর্ধন রায়চাঁদ ও মোহাব্বতের নারায়ণ শঙ্করের। করণ জোহরের সিনেমায় অমিতাভ বচ্চন একটি পরিবারের এবং আদিত্য চোপড়ার সিনেমাটিতে একটি প্রতিষ্ঠান প্রধানের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। বানসালীর হাম দিল দে চুকে সানাম সিনেমায় বিক্রম গোখলের চরিত্রটি ছিল এ দুটির মিশেল। রক্ষণশীল একটি পরিবারের প্রধান হওয়ার পাশাপাশি তিনি সংগীতের একজন ওস্তাদের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন।

দুই শতাধিক সিনেমার অভিনেতার কয়েকটি সিনেমা তুলে এনে তার সম্পর্কে লেখা কঠিন। তবে কমল হাসানের ‘‌হে রাম’ সিনেমার মহারাজা, তুম বিনের গিরিধারি শাহ, রাঙ রাসিয়ার কেশব শাস্ত্রীর কথা বলিউড সিনেমার দর্শকদের নিশ্চিত মনে থাকবে। অনেক সিনেমায়ই খুব ছোট পরিসরের চরিত্রে অভিনয় করেছেন বিক্রম গোখলে। কিন্তু সেখানেও তার অভিনয় দক্ষতার ছাপ রেখেছেন পুরোপুরি। এর মধ্যে ভুল ভুলাইয়ার (২০০৭) আচার্য যজ্ঞপ্রকাশ শাস্ত্রী ও মিশন মঙ্গলের ইসরোর প্রধানের চরিত্র উল্লেখ করার মতো। দুটি চরিত্রে মাত্র কয়েক মিনিটের উপস্থিতিতে তিনি দর্শককে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখেন।

বিক্রম গোখলে মারাঠি মঞ্চে অভিনয়ের মাধ্যমে তার অভিনয় জীবন শুরু করেন। মজার ব্যাপার, বড় পর্দায় তার অভিষেক সিনেমায় অমিতাভ বচ্চনও ছিলেন। ১৯৭১ সালে পরওয়ানা দিয়ে সিনেমায় আসেন গোখলে। এ সিনেমার মধ্য দিয়ে অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব, শ্রদ্ধা ও প্রীতির সম্পর্ক তৈরি হয়। ১৯৯০ সালে তারা অগ্নিপথ, ১৯৯২ সালে খোদা গাওয়াহ ও ২০২০ সালে এবি আনি সিডি সিনেমায় স্ক্রিন শেয়ার করেছেন।

বলিউডের সিনেমা জনপ্রিয় বলে গোখলে বলিউডের সিনেমায় তার অভিনয় ও চরিত্রগুলোর জন্য বিখ্যাত কিন্তু এর বাইরেও তিনি মারাঠি সিনেমায়ও অভিনয় করেছেন। এর মধ্যে নালাত নাকালাত, দেবদাসী, অনুমতি প্রভৃতি প্রশংসিত। মারাঠি পরিচালক গজেন্দ্র আহিরের সঙ্গে তিনি বেশকিছু সিনেমায় কাজ করেছেন। ‘‌অনুমতি’র জন্য পেয়েছেন সেরা অভিনেতার জাতীয় পুরস্কার। এছাড়া মঞ্চে অভিনয়ের জন্য ২০১১ সালে পেয়েছেন সংগীত নাটক আকাদেমি অ্যাওয়ার্ড। সিনেমার পাশাপাশি টেলিভিশন সিরিজে অভিনয় করেছেন তিনি। ২০১০ সালে ‘‌আঘাত’ দিয়ে পরিচালনায় আসেন গোখলে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন