তীব্রতা বাড়ে ৩৫-এর পর

মাইগ্রেন একটি সাধারণ স্নায়বিক ব্যাধি, যা বারবার মাথাব্যথা তৈরি করে। মাইগ্রেন সবচেয়ে ঘন ঘন মাথাব্যথা হওয়া ব্যাধিগুলোর মধ্যে একটি। এটি ফরাসি শব্দমেগ্রিমথেকে উদ্ভূত হয়েছে, যা পরবর্তী সময়ে লাতিন হেমিক্রেনিয়া বামাথার অর্ধেক ব্যথাথেকে উদ্ভূত হয়েছে এবং এটি হেমিগ্রেনিয়া এবং মাইগ্রেনিয়ায় রূপান্তরিত হয়েছে। মাইগ্রেনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি প্রাথমিক বিবরণ ১৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে লেখা প্রাচীন মিসরের এবার্স প্যাপিরাসে পাওয়া যায়।

বিশ্বব্যাপী প্রায় ১৫ শতাংশ বা আনুমানিক একশ কোটি মানুষ মাইগ্রেনে আক্রান্ত। ২০১০ সালের গ্লোবাল বার্ডেন অব ডিজিজ স্টাডিতে এটি বিশ্বের তৃতীয় সর্বাধিক প্রচলিত ব্যাধি হিসেবে স্থান পায়। প্রায়ই এই রোগ বয়ঃসন্ধিকালে শুরু হয় এবং মধ্য বয়সে সবচেয়ে খারাপ হয়। ২০১৬ সালের হিসাবে, এটি অক্ষমতার সবচেয়ে সাধারণ কারণগুলোর একটি। যুক্তরাষ্ট্রে কোটি ৫০ লাখ মানুষ মাইগ্রেনে আক্রান্ত। মাইগ্রেনের হার পশ্চিমা দেশগুলোর তুলনায় এশিয়া আফ্রিকায় সামান্য কম। দশমিক থেকে দশমিক শতাংশের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী মাইগ্রেন দেখা দেয়। তাছাড়া মাইগ্রেনে ভুক্তভোগীদের প্রায় থেকে শতাংশ পুরুষ এবং ১২ থেকে ১৪ শতাংশ নারী। নারীদের মধ্যে মাইগ্রেনের আজীবন প্রকোপ ২৫ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। সাধারণত ৩৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সের মধ্যে এর সর্বোচ্চ আক্রমণ দেখা দেয়। নারীরা পুরুষের তুলনায় দুই থেকে তিন গুণ বেশি মাইগ্রেনে ভোগেন।

মাইগ্রেনের অন্তর্নিহিত কারণ এখনো অজানা। পরিবেশগত এবং জেনেটিক বিষয়গুলোর মিশ্রণের কারণে মাইগ্রেন হয় বলে মনে করা হয়। এরপর এগুলো প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ ক্ষেত্রে পরিবারে সঞ্চালিত হয় এবং এটি একটি একক জিনের গলদের কারণে খুব কমই ঘটে। হরমোনের মাত্রা পরিবর্তনও এক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করতে পারে। কারণ মাইগ্রেন বয়ঃসন্ধির আগে মেয়েদের তুলনায় সামান্য বেশি হয় ছেলেদের। পুরুষের তুলনায় এই ব্যথা দুই থেকে তিন গুণ বেশি নারীদের প্রভাবিত করে। মাইগ্রেনের ঝুঁকি সাধারণত গর্ভাবস্থায় এবং মেনোপজের পরে কমে যায়। তবে অন্তর্নিহিত প্রক্রিয়া সম্পূর্ণরূপে জানা নেই কারো। মাইগ্রেনের ক্ষেত্র হিসেবে মস্তিষ্কের স্নায়ুু রক্তনালি জড়িত। যদিও মাইগ্রেন একসময় উচ্চ বুদ্ধিমত্তার ব্যক্তিদের মধ্যে বেশি সাধারণ বলে মনে করা হতো, তবে এখন আর তা সত্য বলে মনে হয় না। অসুস্থতা, বিষণ্নতা, অনেক জৈবিক ঘটনা যেমন উদ্বেগ বাইপোলার ডিসঅর্ডারসহ বেশ কয়েকটি মনস্তাত্ত্বিক অবস্থার সঙ্গে যুক্ত মাইগ্রেন।

সাধারণত মাইগ্রেন সম্পর্কিত মাথাব্যথা মাথার এক পাশকে প্রভাবিত করে। এর তীব্রতা মাঝারি থেকে গুরুতর হতে পারে এবং কয়েক ঘণ্টা থেকে তিন দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। মাইগ্রেনের লক্ষণগুলোর মধ্যে বমি বমি ভাব, বমি এবং আলো, শব্দ বা গন্ধের প্রতি সংবেদনশীলতা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। মাইগ্রেন আক্রমণের সময় শারীরিক কার্যকলাপের দ্বারা সাধারণত ব্যথা আরো খারাপ হয়। যদিও যারা নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করেন তারা ভবিষ্যতে আক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারেন। আক্রান্ত ব্যক্তিদের এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত আবেষ্টনসহ (aura) মাথাব্যথায় ভোগেন, এটি একটি সংক্ষিপ্ত সময়ের ভিজ্যুয়াল ব্যাঘাত, যা ইঙ্গিত দেয় যে মাথাব্যথা শিগগিরই ঘটবে। মাঝে মাঝে অরা অল্প বা অন্য কোনো মাথাব্যথার সঙ্গেও ঘটতে পারে, কিন্তু প্রত্যেকেরই উপসর্গ থাকে না। মাইগ্রেনে আক্রান্তদের প্রায় ১৫-৩০ শতাংশ আবেষ্টনসহ পর্ব অনুভব করেন এবং বাকিরা আবেষ্টন ছাড়া পর্ব অনুভব করেন। যদি একটি মাইগ্রেনের আক্রমণ ৭২ ঘণ্টার বেশি স্থায়ী হয় তাকে স্ট্যাটাস মাইগ্রেনোসাস বলা হয়।

মাইগ্রেনের আক্রমণের চারটি সম্ভাব্য পর্যায় রয়েছে।

. প্রোড্রোম, যা মাথাব্যথার কয়েক ঘণ্টা বা দিন আগে ঘটে, . আবেষ্টনসহ, যা মাথাব্যথার অবিলম্ব আগে ঘটে, . ব্যথার পর্যায়, যা মাথাব্যথার পর্যায় নামেও পরিচিত, . পোস্টড্রোম যা মাইগ্রেনের আক্রমণ শেষ হওয়ার পরের প্রভাবগুলো অনুভব করা হয়

মাইগ্রেন নির্ণয়

মাইগ্রেন নির্ণয়ের কাজটি কিছু লক্ষণ উপসর্গের ভিত্তিতে করা হয়। মাইগ্রেন নির্ণয়ের জন্য নিউরোইমেজিং পরীক্ষা প্রয়োজন হয় না। তবে যদি পরীক্ষা এবং ইতিহাস শুনেও মাইগ্রেন নির্ণয় নিশ্চিত করা না যায় তাদের ক্ষেত্রে মাথাব্যথার অন্যান্য কারণ খুঁজে বের করা যেতে পারে।

মাইগ্রেন চিকিৎসার জন্য নিবন্ধিত ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। তবে প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা হিসেবে সুপারিশ করা হয়, সাধারণ ব্যথার ওষুধ যেমন আইবুপ্রোফেন এবং মাথাব্যথার জন্য প্যারাসিটামল, বমি বমি ভাবের জন্য ওষুধ এবং মাথাব্যথার যেসব কারণ দায়ী সেগুলো এড়ানো। যাদের জন্য সাধারণ ব্যথার ওষুধ কার্যকর নয় তাদের ক্ষেত্রে ট্রিপটান বা আরগোটামিনের মতো নির্দিষ্ট ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। অন্যান্য ব্যথানাশক ওষুধের সঙ্গে একসঙ্গে ক্যাফেইন তীব্র মাইগ্রেনের চিকিৎসা নিরাপদ কার্যকর। মেটোপ্রোলল, ভালপ্রোয়েট টপিরামেটসহ বেশকিছু ওষুধ আক্রমণ প্রতিরোধে কার্যকর।

 

ডা. আমিনুর রহমান, সহকারী অধ্যাপক, নিউরোলজি বিভাগ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, ঢাকা

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন