কনজাংটিভাইটিস : ছোঁয়াচে, তবে বাতাসে ছড়ায় না

অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের কর্নিয়া ডিপার্টমেন্টের প্রধান। সারা দেশে ছড়িয়ে পড়া চোখ ওঠা রোগের লক্ষণ প্রতিকার নিয়ে তিনি কথা বলেছেন বণিক বার্তার সঙ্গে। সাক্ষাত্কার নিয়েছেন মুহাম্মাদ শফিউল্লাহ

চোখ ওঠা রোগ কেন হয়?

চোখ ওঠা রোগ ভাইরাসজনিত এবং ছোঁয়াচে। একে কনজাংটিভাইটিস বলে। কনজাংটিভাইটিস বিভিন্ন কারণে হয়। অ্যালার্জি বা ইনফেকশনের জন্যও হতে পারে। ইনফেকশনের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ হলো ব্যাকটেরিয়া ভাইরাস। এখন যেটা হচ্ছে তা ভাইরাসজনিত। প্রতি বছর গরমের সময় ভাইরাল ইনফেকশন বেশি হয়। এডিনো নামের এক ভাইরাস সংক্রমণের জন্য দায়ী। আরেকটি ধরন রয়েছে, যেটিকে বলা হয় ফলিকুলার কনজাংটিভাইটিস। এটা চার-পাঁচদিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়। দেশে এখন যে কনজাংটিভাইটিস ছড়িয়ে পড়েছে, কমিউনিটি সংক্রমণ হওয়ায় তাকে আমরা এপিডেমিক হিসেবে চিহ্নিত করছি। শুধু ঢাকায় না, এটি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। পরিবারের একজন আক্রান্ত হলে অন্যদেরও হচ্ছে। এটা অত্যন্ত ছোঁয়াচে রোগ। এটির সংক্রমণ ঘটলে সাধারণত -১৪ দিনের মধ্যে এমনিতেই সুস্থ হয়ে ওঠে আক্রান্তরা। তবে যাদের চোখ বেশি ফুলে যায়, লাল হয়ে যায়, ব্যথা করে, পানি পড়ে তাদের ক্ষেত্রে চক্ষুবিশেষজ্ঞ দেখানো প্রয়োজন।

চোখ ওঠা রোগ কি চোখের একমাত্র সংক্রমণ?

চোখ ওঠা রোগ চোখের একমাত্র সংক্রমণ না। কর্নিয়াতেও সংক্রমণ হতে পারে। তবে ছোঁয়াচে ধরনের মধ্যে সাধারণত কনজাংটিভাইটিস বেশি হয়।

এই রোগের লক্ষণ কী কী?

চোখ জ্বালাপোড়া করে, চোখ দিয়ে পানি পড়ে, চোখের পাতা ফুলে যায়, লাল হয়ে যায় এবং আলো সহ্য করার ক্ষমতা কমে যায়। এগুলো প্রধান কারণ। অনেক সময় চোখের ভেতরে কর্নিয়ায় সমস্যা হয়। সেসব ক্ষেত্রে ক্লিনিক্যাল চিকিৎসা লাগবে।

কখন চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে?

শুরুতেই চিকিৎসকের কাছে নাও যেতে হতে পারে। আমরা সাধারণত অ্যান্টিভাইরাস দিয়ে এটির চিকিৎসা শুরু করি। ক্লোরামফেনিকল, লিভোফ্লক্সাসিন এগুলো প্রাথমিকভাবে রোগীদের দেয়া হয়। এটি তিন-চার দিন ব্যবহারের পরও যদি না কমে এবং চোখ ফুলে যেতে থাকে, লাল হয়ে যায় পানি পড়তে থাকে তাহলে বুঝতে হবে রোগটি তীব্র আকার ধারণ করছে। সে ক্ষেত্রে একজন চক্ষু চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। সাধারণত সাতদিনে রোগটি ভালো হয়ে যায়। সর্বোচ্চ দুই সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।

চোখের বড় ধরনের সমস্যা হতে পারে? অথবা অন্য কোনো জটিলতার আশঙ্কা রয়েছে?

কনজাংটিভাইটিস বেশি আতঙ্কিত হওয়ার মতো কোনো রোগ নয়। কর্নিয়ায় সমস্যা হলে কর্নিয়া বিশেষজ্ঞ দেখানোর প্রয়োজন হতে পারে। তবে চোখের সমস্যা ছয় মাস বা এক বছর ধরে চলমান থাকলে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ রয়েছে। চোখ ওঠা রোগ অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই ঠিক হয়ে যায়।

রোগ প্রতিরোধে কী কী পদক্ষেপ নেয়া জরুরি?

যিনি আক্রান্ত হবেন তিনি আইসোলেশনে থাকবেন। অন্যদেরও যাতে আক্রান্ত করতে না পারে। সেজন্য যারা স্কুলে পড়ে সেসব শিশুকে স্কুলে যেতে না দেয়া। চাকরিজীবীদের অফিসে না যাওয়া। কিছুদিন আলাদা থাকতে হবে। যাদের মধ্যে তোয়ালে, গামছা, রুমাল, বালিশএগুলো শেয়ারের প্রবণতা রয়েছে তাদের মধ্যে এই সংক্রমণ অন্যদের তুলনায় দ্রুত হবে। শিশুদের মধ্যে এই রোগ বেশি হয়, কারণ তারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। চোখে হাত দিয়ে কোনো জিনিস ধরলে বা অন্যজনের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করলে এগুলো বেশি হয়। এটা বাতাসে ছড়ায় না। রোগীর চোখে তাকালেই রোগটা হবে না। অবশ্যই তাকে রোগীর সংস্পর্শে আসতে হবে।

বছরের কোন সময় সতর্ক থাকতে হবে?

সাধারণত এটা গরমের সময় দেখা যায়। কিন্তু বছর এটা একটু পরে শরতের সময় হচ্ছে। এই ভাইরাসটি গ্রীষ্মকালে বেশি হয়ে থাকে।

চোখ ওঠা রোগীর সংখ্যা গত বছরের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে?

বর্তমানে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে আসা শিশু বড়দের অর্ধেকই রোগে আক্রান্ত। এখানে প্রতিদিন দুই থেকে তিন হাজার রোগী আসে। এর মধ্যে কনজাংটিভাইটিস রোগী অর্ধেক। উপজেলা পর্যায়ের এমবিবিএস চিকিৎসকরা কনজাংটিভাইটিসের চিকিৎসা জানেন। তবে যদি জটিলতা তৈরি হয়, তাহলে সেগুলো রেফার্ড করে দেয়া উচিত। 

রাজধানী তৃণমূল পর্যায়ে শনাক্ত রোগীদের মধ্যে পার্থক্য কী?

রোগীদের ধরন প্রায় কাছাকাছি। তৃণমূল থেকে রোগ নিয়ে সরাসরি আমাদের ইনস্টিটিউটে কেউ আসে না। বাইরে থেকেও রোগী আসছে যাদের বেশি সমস্যা হচ্ছে। এসব রোগী বেশি পাচ্ছি যেসব জায়গায় ওভার ক্রাউডেড (অতিরিক্ত জনসমাগম) থাকে। যেমন- হোস্টেল, বাজার, স্কুল ফ্যামিলি। তাদের মাঝে সংক্রমণ বেশি হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন