রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ

সাইবার আক্রমণ বাড়লেও প্রভাব প্রকাশ্যে আসেনি

বণিক বার্তা ডেস্ক

ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন শুরু করে রাশিয়া। এরপর সাত মাসেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। দুই দেশে হ্যাকিং, নেটওয়ার্কের ক্ষতিসাধনসহ অন্যান্য সাইবার আক্রমণ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতি, হতাহতের পরিমাণ সম্পর্কে জানা গেলেও চলমান সাইবার হামলার প্রভাব এখনো আড়ালেই রয়ে গিয়েছে। খবর এএফপি।

পশ্চিমের মিত্র দেশগুলো প্রাথমিকভাবে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোয় বড় ধরনের সাইবার আক্রমণের আশঙ্কা করছে। যে কারণে দেশটি তাদের সীমান্তে রাশিয়ান সেনাদের প্রবেশ আটকাতে ব্যর্থ হয়েছিল। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের তথ্যানুযায়ী, সুইজারল্যান্ডভিত্তিক নন-গভর্নমেন্টাল প্রতিষ্ঠান (এনজিও) সাইবার পিস ইনস্টিটিউট জানায়, ফেব্রুয়ারিতে সামরিক আগ্রাসন শুরুর পর থেকে দুটি দেশের ৫৭টি দল প্রতি সপ্তাহে ১২টি করে প্রায় ৪৫০টি সাইবার আক্রমণ পরিচালনা করেছে বলে জানতে পেরেছে প্রতিষ্ঠানটি।

ইউরোপ যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় কিয়েভ এখন পর্যন্ত বড় ধরনের প্রযুক্তিগত হামলা প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়েছে। ইউনিভার্সিটি অব কুইবেকের গবেষক অ্যালেক্সিস রাপিন বলেন, বড় ধরনের সাইবার আক্রমণ অবশ্যই পরিচালিত হয়েছে। তবে বিষয়ে সবাই একমত যে হামলাগুলো বড় ধরনের কোনো ভয় বা শঙ্কা তৈরি করতে পারেনি।

স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ সাইট লে রুবিকনের লেখক বলেন, সবচেয়ে ক্ষতিকর ভয়াবহ আক্রমণ পরিচালনা করতে হলে এর পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কয়েক মাস কিংবা এক বছর সময়ের প্রয়োজন হয়। আর চলমান সামরিক অভিযানের সঙ্গে এর মিশ্রণ আরো জটিল। আরেকটি বিষয় হচ্ছে মিত্রদের কাছ থেকে ইউক্রেন বড় ধরনের সহায়তা পাচ্ছে। এর মধ্যে সফটওয়্যারের পাশাপাশি নেটওয়ার্ক সিস্টেম রক্ষায় সার্বিক সহায়তা পাল্টা আক্রমণের মতো বিষয়ও রয়েছে, যেগুলোর কারণে বারবার মস্কোর সাইবার হামলা-সংক্রান্ত পরিকল্পনা ব্যাহত হচ্ছে।

প্যারিসের জ্যাক ডেলরস ইনস্টিটিউটের গবেষক আর্নল্ট বারিচেল্লা বলেন, কয়েক মাস ধরে রাশিয়ার এক দল আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী হ্যাকিং সংস্থার সাইবার হামলার শিকার হয়ে আসছে, যার মধ্যে বেনামি আন্দোলন উল্লেখযোগ্য। সম্প্রতি লিখিত এক প্রতিবেদনে তিনি জানান, রাশিয়াকে লক্ষ্য করে প্রতিনিয়ত যেসব আক্রমণ করা হয়েছে সেগুলো কতটা কার্যকর ছিল সেটি জানা যায়নি। তবে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর মতো সাইবার নিরাপত্তা আক্রমণের বিষয়টিকেও অবমূল্যায়ন করেছে রাশিয়া।

পূর্ব ইউরোপের যুদ্ধস্থল একটি বিষয় প্রমাণ করে যে একুশ শতকে সশস্ত্র যুদ্ধের ক্ষেত্রে সাইবার আক্রমণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ইউক্রেনে রাশিয়ার প্রথম ট্যাংক প্রবেশের আগে জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে হ্যাকাররা ইউক্রেনের ৭০টি সরকারি ওয়েবসাইটকে লক্ষ্য করে হুইসপারগেট ম্যালওয়্যার আক্রমণ করেছিল। এরপর ডিস্ট্রিবিউটেড ডিনায়াল অব সার্ভিস (ডি ডস) আক্রমণও করা হয়েছিল, যার কারণে ব্যাংক, রেডিও স্টেশন ওয়েবসাইটের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়েছিল।

দুই ধরনের আক্রমণের পর মস্কোর বিরুদ্ধে হারমেটিক ওয়াইপার ভাইরাস আক্রমণ পরিচালনার অভিযোগ উঠেছিল। এর মাধ্যমে ইউক্রেনের ৩০০-এর বেশি তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সময় হ্যাকাররা ভিয়াসাট স্যাটেলাইট অপারেটরকে শিকারে পরিণত করার মাধ্যমে কয়েক হাজারের বেশি ইন্টারনেট মডেম বন্ধ করে দিয়েছিল।

ইসরায়েলের জাতীয় সাইবার ব্যুরোর ইভিয়াটার মাতানিয়া বলেন, অনেক মানুষ এটা বিশ্বাস করতে চায় না যে রাশিয়ার প্রতিটি আক্রমণের আগে পরে সাইবার হামলার ঘটনা জড়িত ছিল। আর সাইবার হামলায় কোনো মানুষ হতাহত হয় না। সেই সঙ্গে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যেসব আইটি নেটওয়ার্ক হামলার শিকার হয় সেগুলো কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ঠিক করা না গেলেও কয়েক দিনের মধ্যে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন