চিপ উৎপাদন খাতে আধিপত্য হারাচ্ছে ইন্টেল

বণিক বার্তা ডেস্ক

বিনিয়োগকারীদের সামনে সেমিকন্ডাক্টর নিয়ে আলোচনা করছেন প্যাট গেলসিঙ্গার ছবি: সিএনবিসি

চিপ উৎপাদন খাতে একসময় যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম কোম্পানি ছিল ইন্টেল। তবে বর্তমানে সংকটজনক পরিস্থিতিতে রয়েছে এ প্রযুক্তি জায়ান্ট। বাজার অবস্থা পরিবর্তনে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যাশা ব্যক্ত করলেও বছরের প্রথম প্রান্তিকের আয় প্রতিবেদন ভিন্ন তথ্য দিচ্ছে। 

সিএনবিসিতে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, বিষয়টি নিয়ে বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগের প্রতিফলন ঘটেছে ইন্টেলের শেয়ারমূল্যে। আয় প্রতিবেদন প্রকাশের পর মার্কিন বাজারে কোম্পানিটির শেয়ারমূল্য কমেছে প্রায় ৯ শতাংশ। এর মাধ্যমে ক্রমশ এ খাতে কোম্পানিটির আধিপত্য হারানোর বিষয়টি উঠে এসেছে। তবে ইন্টেলের পরিচালন আয় এখনো সেভাবে কমেনি। বিশেষ করে কম্পিউটার, ল্যাপটপের জন্য প্রসেসর তৈরির মাধ্যমে এ খাতের শীর্ষে রয়েছে কোম্পানিটি। কিন্তু চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে আশানুরূপ বিক্রি হয়নি ইন্টেলের। বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকেও চাহিদা নিম্নমুখী থাকার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।

ইন্টেলের বর্তমান পরিস্থিতি কোম্পানির প্রধান নির্বাহী প্যাট গেলসিঙ্গারের জন্য কঠিন। ২০২১ সালে গেলসিঙ্গারের হাতে দায়িত্ব যাওয়ার আগেই বাজার অবস্থান হারাতে থাকে কোম্পানিটি। তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি (টিএসএমসি) থেকে শুরু করে অন্য কোম্পানির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় শীর্ষস্থান হারায় ইন্টেল। 

এক বিবৃতিতে গেলসিঙ্গার জানান, বিনিয়োগের অভাবে প্রযুক্তিগত দিক থেকে ইন্টেল অনেক পিছিয়ে। বর্তমানে যে সমস্যা তৈরি হয়েছে, তার সমাধান হিসেবে প্রযুক্তিগত দক্ষতা বাড়াতে হবে। ২০২৬ সাল নাগাদ কোম্পানি আগের অবস্থায় ফিরে আসবে বলেও বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করেছেন গেলসিঙ্গার। 

অন্যদিকে এআই সার্ভারের মাধ্যমে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে রয়েছে এনভিডিয়া ও সুপার মাইক্রো কম্পিউটারের মতো কোম্পানি। বাজার মূলধনের দিক থেকেও এনভিডিয়ার তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে ইন্টেল। এমনকি কোয়ালকম, ব্রডকম, টেক্সাস ইনস্ট্রুমেন্টস ও এএমডিও এগিয়ে রয়েছে। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, জেলসিঞ্জার ইন্টেলের ব্যবসাকে একটি ঝুঁকিপূর্ণ মডেলে পরিবর্তনের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। কোম্পানিটি নিজস্ব ব্র্যান্ডেড প্রসেসরের পাশাপাশি এনভিডিয়া, অ্যাপল ও কোয়ালকমসহ অন্য চিপ কোম্পানিগুলোর জন্য কারখানা হিসেবে কাজ করছে। 

অন্যদিকে টিএসএমসির বিকল্প খুঁজছে অন্যান্য চিপ কোম্পানি। সেদিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক নেতারা মার্কিন প্রসেসর সরবরাহ চেইনে ইন্টেলকে অন্যতম বিকল্প মনে করছেন। 

বড় সুযোগগুলো কাজে লাগিয়ে বাজার প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকার ক্ষেত্রে ইন্টেলের ব্যর্থতার বিষয়গুলো স্পষ্ট। ২০০৭ সালে অ্যাপল যখন প্রথম আইফোন উন্মোচন করে সে সময় ইন্টেল চিপ সরবরাহকারী হিসেবে যুক্ত হতে পারত। কিন্তু মূল্য নির্ধারণসহ বিভিন্ন কারণে অ্যাপলের সঙ্গে বিরোধে জড়ায় কোম্পানিটি। এর বিপরীতে চিপের জন্য স্যামসাংয়ের সঙ্গে কাজ শুরু করে কুপারটিনোভিত্তিক প্রযুক্তি জায়ান্ট এবং পরবর্তী সময়ে নিজস্ব চিপ উৎপাদন শুরু করে।

অ্যাপলের পর অ্যাটম চিপ দিয়ে স্মার্টফোনের বাজারে প্রবেশ করতে চাইলেও ব্যর্থ হয় ইন্টেল। মোবাইল খাত ছাড়াও উৎপাদন কার্যক্রমেও ইন্টেলের পিছিয়ে পড়ার বিষয়গুলো স্পষ্ট। কম্পিউটিং পাওয়ার বাড়ানোর জন্য ট্রানজিস্টরের সংখ্যা কমানোর ক্ষেত্রে এগিয়ে ছিল ইন্টেল। কিন্তু ১০ ও ৭ ন্যানোমিটার প্রযুক্তিতে আটকে থাকায় এএমডির মতো কোম্পানি প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যায়। সংশ্লিষ্টদের তথ্যানুযায়ী, বিভিন্ন খাতে পিছিয়ে পড়লেও কোম্পানিটি এখনো বড় পরিসরে বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছে এবং সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা ২০২৬ সাল নাগাদ টিএসএমসির সমকক্ষ হয়ে উঠবে মার্কিন এ চিপ নির্মাতা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন