কোন থেরাপি কখন প্রয়োজন

ফিচার ডেস্ক

দেশে পক্ষাঘাতগ্রস্ত বা আঘাতের কারণে প্রতিবন্ধিতার শিকার হয়ে কর্মহীন মানুষের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এদের চিকিৎসায় ফিজিওথেরাপির ভূমিকা রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রোগের ধরন অনুযায়ী চিকিৎসা পদ্ধতিও  ভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন স্পোর্টস ফিজিওথেরাপি, জেরিয়াট্রিক ফিজিওথেরাপি, অর্থোপেডিক ফিজিওথেরাপি, পেডিয়াট্রিক ফিজিওথেরাপি, স্নায়বিক ফিজিওথেরাপি, কার্ডিওভাসকুলার ফিজিওথেরাপি।

স্পোর্টস ফিজিওথেরাপি: ক্রীড়াবিদদের সঠিক স্বাস্থ্য, ব্যথা রোধ কর্মক্ষমতা ফিরে পেতে স্পোর্টস ফিজিওথেরাপিস্ট কাজ করে থাকেন। শুধু তা- নয়, স্পোর্টস ইনজুরি থেকে দ্রুত পুনরুদ্ধার করতে কর্মক্ষমতা বাড়াতে স্পোর্টস ফিজিওথেরাপিস্টের কার্যকরী ভূমিকা রয়েছে।

জেরিয়াট্রিক ফিজিওথেরাপি: বয়স্ক ব্যক্তিদের পেশির শক্তি কমে যেতে থাকে। এছাড়া তাদের চলাফেরায় জড়তা, বাত এবং ভারসাম্য কমে যাওয়ারও প্রবণতা রয়েছে। বয়স্কদের এসব স্বাস্থ্যঝুঁকি নিরাময়ে জেরিয়াট্রিক ফিজিওথেরাপির প্রয়োজন। এটি প্রয়োগের ফলে বয়স্ক ব্যক্তিদের বাত ব্যথাসহ অ্যালঝেইমার রোগ নির্মূল করা যেতে পারে।

অর্থোপেডিক ফিজিওথেরাপি: অর্থোপেডিক নানা সমস্যা দেখা দেয় মানুষের মধ্যে। যেমন পিঠ, ঘা হাঁটুর আঘাতের কারণে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা জয়েন্টের ব্যথা। এসব মারাত্মক ব্যথা নির্মূলে প্রয়োজন অর্থোপেডিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা। বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি শরীরের কোনো হাড় ভেঙে যায় বা মেরুদণ্ডের হাড় ক্ষয় হয়ে যায় তবে অর্থোপেডিক ফিজিওথেরাপি খুবই কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতি।

পেডিয়াট্রিক ফিজিওথেরাপি: শিশু-কিশোরদের বিকাশজনিত ব্যাধি নির্ণয়, প্রতিরোধ এবং চিকিৎসা হলো পেডিয়াট্রিক ফিজিওথেরাপি। মস্তিষ্কে আঘাতের কারণে অঙ্গপ্রত্যঙ্গের অস্বাভাবিকতা ঠিক করতে এবং পেশির অক্ষমতা বাড়াতে পেডিয়াট্রিক ফিজিওথেরাপি কার্যকর। এছাড়া জন্মগত অক্ষমতায় আক্রান্ত শিশুদের শক্তি ফিরে পেতে, তাদের কর্মক্ষমতা গতিশীলতা বাড়াতেও পদ্ধতি ব্যবহার হয়ে থাকে।

স্নায়বিক ফিজিওথেরাপি: স্নায়বিক অসুস্থতা মস্তিষ্ক এবং মেরুদণ্ডকে প্রভাবিত করে। কারণে শরীরের ভারসাম্য কমে যায় রোগীদের। স্ট্রোকের কারণে শরীরের এক পাশ বিকল হয়ে যেতে পারে। এছাড়া মুখ বেঁকে যাওয়া, গতির হ্রাস এবং পেশিশক্তি কমে যায় তাদের। কোনো কোনো রোগী প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হয়ে প্রতিবন্ধিতার শিকার হন। এসব সমস্যা নিরাময়ে স্নায়বিক ফিজিওথেরাপি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।

কার্ডিওভাসকুলার ফিজিওথেরাপি: কার্ডিওভাসকুলার ফিজিওথেরাপি এখন স্বীকৃত ব্যায়াম একটি কার্যকর রোগ প্রতিরোধের কৌশল। বিভিন্ন কার্ডিওরেসপিরেটরি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের পুনরুজ্জীবিত করার জন্য চমত্কার পদ্ধতি কার্ডিওভাসকুলার ফিজিওথেরাপি। সাধারণ কার্ডিওভাসকুলার অবস্থার মধ্যে রয়েছে হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস, এমফিসেমা, কনজেস্টিভ কার্ডিয়াক ফেইলিউর, শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ (নিউমোনিয়া), উচ্চরক্তচাপ, পেরিফেরাল ভাসকুলার ডিজিজ, হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ফুসফুসের আঘাত বা অস্ত্রোপচার।

এসব পদ্ধতিতে ফিজিওথেরাপিস্টরা শুধু আঘাত বা অসুস্থতার স্বতন্ত্র দিকগুলোতে আলোকপাত করার পাশাপাশি তারা পুরো শরীরকে পুনরুজ্জীবিত করতে সাহায্য করে। দৈনন্দিন জীবনে প্রভাবিত করতে পারে এমন বিষয়গুলো সম্পর্কে সাধারণ পরামর্শ দেন ফিজিওথেরাপিস্টরা। সঠিকভাবে শরীরের যত্ন নেয়া, কতটুকু ভারী বস্তু উত্তোলন বা বহন করা আপনার জন্য ঝুঁকিমুক্ত, কোন ব্যায়ামের মাধ্যমে আপনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন এবং আপনার জন্য কতটুকু হাঁটাচলা করা উচিতএসব বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতা করে থাকেন তারা।

যুক্তরাজ্যের ইস্ট লন্ডন এনএইচএস ফাউন্ডেশন ট্রাস্টের সিনিয়র চার্টার্ড ফিজিওথেরাপিস্ট বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ডা. সাইদুজ্জামান সাইদ বণিক বার্তাকে বলেন, বিভিন্ন শারীরিক প্রতিবন্ধকতা বা অক্ষমতার কারণে ফিজিওথেরাপি প্রয়োজন হতে পারে। যেমন যন্ত্রণা বারবার ফিরে আসা, হাড় পেশির ব্যথা, নার্ভ বা স্নায়ুতন্ত্রে সমস্যা, স্ট্রোক বা অস্ত্রোপচারের কারণে বিকলাঙ্গ হওয়ার আশঙ্কা থাকলে, জয়েন্টের সমস্যা এবং কোনো ধরনের মারাত্মক আঘাত পাওয়া ব্যক্তির ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি প্রয়োজন হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন