প্রথম প্রতিস্থাপনকারী ওমর আলীর বর্তমান অবস্থা

ফিচার প্রতিবেদক

দেশে প্রথম অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন হয় ২০১৪ সালে। ১০ মার্চ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগে প্রতিস্থাপনটি হয়েছিল। হেমাটোলজির তত্কালীন প্রধান রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মহিউদ্দিন আহমেদ খানের (এমএ খান) নেতৃত্বে একদল চিকিৎসক প্রথম অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনের কাজটি করেন। রংপুরের বাসিন্দা মো. ওমর আলীকে দিয়ে শুরু হয় কার্যক্রম। তখন তার বয়স ছিল ৫৪ বছর। আট বছর আগে চিকিৎসা নেয়া ওমর আলীর সঙ্গে কথা বলেছে বণিক বার্তা। জানিয়েছেন চিকিৎসা সময়ের তার অভিজ্ঞতা বর্তমান অবস্থা।

বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ২০০৯ সালে আমার বাঁ পায়ের নিচের অংশ ভেঙে যায়। রংপুরের একটি হাসপাতালে দুদিন থাকার পর তারা চিকিৎসা করতে পারেনি। তারপর গাজীপুরের টঙ্গীর একটা হাসপাতালে ভর্তি হই। সেখানে অপারেশন করে ২৮ দিন থাকতে হয়। আনুষঙ্গিক খরচসহ ওই অপারেশনে আমার প্রায় লাখ টাকা চলে যায়। অপারেশনের কিছুদিন পর আমি আরো তিনটি হাসপাতালে পরীক্ষা করাই। তখন ডাক্তার বলে আমার হাড়ে ক্যান্সার ধরা পড়েছে। তখন তারা মহাখালী ক্যান্সার হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু শয্যা খালি না থাকায় ক্যান্সার হাসপাতাল থেকে আমাকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়।

তিনি বলেন, ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হওয়ার দুদিন পর সেখানেও থাকা সম্ভব হয়নি। এরপর রংপুরের একজন চিকিৎসক ঢাকার ডা. এমএ খান স্যারের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি বিভিন্ন পরীক্ষা করে বললেন আমার ক্যান্সার আছে। তারপর আমাকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। এখানে এক মাস চিকিৎসা নেয়ার পর বাড়ি চলে যাই। এক মাস পর আবারো ঢাকায় এসে এমএ খান স্যারকে দেখাই। এভাবে ছয় মাস কাটানোর পর স্যার বললেন রংপুরে গিয়ে রেডিওথেরাপি দেয়ার জন্য। এভাবে প্রায় চার বছর চিকিৎসা চলে আমার।

এর মধ্যে তিনি পার্শ্ববর্তী দেশে গিয়েছিলেন চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সেখানে চিকিৎসা ব্যয় ২০ লাখ রুপি চাওয়ায় ফেরত আসেন ওমর আলী।

তিনি বলেন, সবশেষ ২০১৩ সালে এমএ খান বললেন, ঢাকা মেডিকেলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে আসা চিকিৎসকদের একটি দল আসছে। তাদের দিয়ে আপনার চিকিৎসা করাব। তারপর ওনারা আমাকে কিছু টেস্ট দেন। এগুলো করানোর পর আমিসহ আরো সাতজন ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হই। দুই সপ্তাহের চিকিৎসা দিয়ে আমেরিকা চলে যান চিকিৎসকরা। তিন মাস পর ওনারা আবার এলেন আমাদের অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন করানোর জন্য। কিন্তু দেশে নির্বাচনকেন্দ্রিক অস্থিরতা শুরু হলে থমকে যায় কার্যক্রম।

তারপর ২০১৪ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি এমএ খান স্যারের পরামর্শে ঢাকায় এলে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় আমাকে। আমাদের পাঁচজনের মধ্যে দুজনকে বাছাই করা হয়। আমাকে বাংলাদেশের প্রথম রোগী হিসেবে চিকিৎসা দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিল। সে বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয় আমার অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম। তারপর ১০ মার্চ সকাল ৯টা কি ১০টা তখন আমার অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন করেন। তখন মনে হয়েছিল আমি নতুন করে আবারো পৃথিবীতে এসেছি। 

ওমর আলী আরো বলেন, প্রতিস্থাপন করার তিন বছর পর্যন্ত বিভিন্ন ওষুধ সেবন করতে হয়েছে। ডাক্তাররা বললেন আর কোনো ক্যান্সারের জীবাণু নেই। এর পর থেকে এখন পর্যন্ত ক্যান্সারের কোনো ওষুধ খাওয়া লাগেনি। তবে আমার ডায়াবেটিস থাকায় এর চিকিৎসা চলছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন