অর্থাভাবে ডায়ালাইসিস হয় না ৩৯% রোগীর

ফিচার ডেস্ক

কিডনি বিকল হওয়া রোগীদের অতিপরিচিত একটি চিকিৎসা ব্যবস্থা হলো ডায়ালাইসিস। দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগের পাঁচটি ধাপ আছে। শেষ ধাপে রোগীকে ডায়ালাইসিস অথবা প্রতিস্থাপন করতে হয়। রোগে আক্রান্তদের প্রতিস্থাপনের সুযোগ না থাকলে সব সময় দিতে হয় ডায়ালাইসিস। তবে সাময়িক কিডনি বিকল হওয়া রোগীদেরও ডায়ালাইসিসের প্রয়োজন হয়।

দেশে ডায়ালাইসিসের রোগীরা আর্থিক সংকটের কারণে অনেক সময় ডায়ালাইসিস বন্ধ করে দেয়। এদের বেশির ভাগই দরিদ্র নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্য। সম্প্রতি শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের নেফ্রোলজি বিভাগের কয়েকজন শিক্ষকের করা এক গবেষণায় দেখা যায়, কিডনি রোগীদের অর্ধেকই তাদের অসুস্থতার শেষ পর্যায়ে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসে। কয়েকটি ডায়ালাইসিস করানোর পর তা বন্ধ করে দেয় মোট রোগীর ৩৯ শতাংশ, যার সবচেয়ে বড় কারণ আর্থিক সংকট। এছাড়া পরিবহন সুবিধা পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতার অভাবের কারণেও অনেকের ডায়ালাইসিস বন্ধ হয়ে যায়।

মানুষ অন্যান্য প্রাণীর দেহবর্জ্য শরীর থেকে বের করে দেয়ার জন্য ছাঁকনি হিসেবে কিডনি কাজ করে। কিডনি শরীরে প্রবাহিত সব রক্ত ছেঁকে দূষিত বর্জ্য পানির সঙ্গে মিশিয়ে মূত্র হিসেবে বের করে দেয়। কিডনি বিকল হলে প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। কিডনির পরিবর্তে কৃত্রিম ছাঁকনি ব্যবহার করে দেহ থেকে রক্ত ছেঁকে বর্জ্য বের করার প্রক্রিয়াকে চিকিৎসাবিজ্ঞানে ডায়ালাইসিস বলা হয়। মূলত কিডনি বিকল হলে ডায়ালাইসিসের প্রয়োজন পড়ে।

চিকিৎসায় দুই ধরনের ডায়ালাইসিস রয়েছে। হিমোডায়ালাইসিস পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস। হিমোডায়ালাইসিসের মাধ্যমে শরীরে জমে থাকা অতিরিক্ত পানি, বর্জ্য পদার্থ ডায়ালাইসিস যন্ত্রের দ্বারা নিষ্কাশন করা হয়। এক্ষেত্রে রোগীদের সপ্তাহে দুই-তিনবার ডায়ালাইসিসের জন্য হাসপাতালে যেতে হয়। প্রতি সেশনে সাধারণত চার ঘণ্টা লাগে। পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস মূলত বাড়িতে বসেই করা যায়।

কিডনি রোগীদের ডায়ালাইসিস হয় এমন কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ডায়ালাইসিসের জন্য সরকার থেকে কোনো ফি নির্ধারণ করা হয়নি। সরকারি হাসপাতালের ফি কিছুটা কম হলেও বেসরকারি হাসপাতালে তা কয়েক গুণ বেশি। প্রতি ডায়ালাইসিসের জন্য সরকারি হাসপাতালের ফি সাধারণত হাজার টাকার মধ্যে হলেও বেসরকারি হাসপাতালে তা অনেক বেশি। কোনো কোনো বেসরকারি হাসপাতালে ডায়ালাইসিসের ফি হাজার টাকা থেকে শুরু। পরিবহন অন্যান্য ব্যয় যুক্ত হয়ে খরচ দাঁড়ায় মোটা অংকে।

কিডনি ডায়ালাইসিসের জন্য দেশে সরকারি সুবিধা অনেকাংশে কম। একই সঙ্গে সেবামূলক ডায়ালাইসিস কেন্দ্রের সংখ্যাও নগণ্য। রাজধানীতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আদ্-দ্বীন হাসপাতালে সবচেয়ে কম মূল্যে ডায়ালাইসিস সেবা দেয়া শুরু করেছে। দরিদ্র রোগীদের জন্য মাত্র ২৫০ টাকায় সেবা দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে প্রায় ৭০ জন দরিদ্র রোগী নিয়মিত ডায়ালাইসিস সেবা নিচ্ছে এখানে। আর অন্যান্য সাধারণ রোগীকে প্রথমবার ডায়ালাইসিসে দিতে হয় আড়াই হাজার টাকা। পরে তাদের দেড় হাজার টাকা করে দিয়ে যেতে হয়। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র জানিয়েছে, তাদের হাসপাতালে সপ্তাহে একবার ডায়ালাইসিস (রাতের শিফট ব্যতীত) করলে অতিদরিদ্র ৭০০, দরিদ্র ৯০০, নিম্ন মধ্যবিত্ত হাজার ১০০, মধ্যবিত্ত হাজার ৪০০, উচ্চ মধ্যবিত্ত হাজার, ধনী হাজার ৫০০ এবং যাদের গণ স্বাস্থ্যবীমা নেই তাদের হাজার ৭০০ টাকা ফি দিতে হয়। সপ্তাহে তিনবার ডায়ালাইসিস করার ক্ষেত্রেও রয়েছে বিশেষ সুবিধা।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, সবচেয়ে কম খরচে ডায়ালাইসিস করা হলেও অন্যান্য খরচ মিলিয়ে একজন কিডনি রোগীর মাসে ২০-৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। যেখানে বছরে প্রায় - লাখ টাকা ব্যয় হয় তাদের। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে গরিব রোগীরা ডায়ালাইসিসের আওতায় আসে না। এর মূল কারণ হলো খরচ ডায়ালাইসিস সুবিধার অপ্রতুলতা।

বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ১৩০টি ডায়ালাইসিস সেন্টার রয়েছে। এসব কেন্দ্রে প্রায় ৭০০ ডায়ালাইসিস মেশিন রয়েছে। চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশালসহ বিভাগীয় শহরের টারশিয়ারি পর্যায়ের হাসপাতালে কিছু মেশিন থাকলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই কম। এছাড়া জেলা পর্যায়ের পুরনো মেডিকেল কলেজগুলোতে রয়েছে ডায়ালাইসিসের সুবিধা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন