ফুসফুস ক্যান্সার হওয়ার জন্য ৯০ ভাগ দায়ী তামাক ও তামাকজাতীয় দ্রব্যের ব্যবহার। তামাক সেবনকারীদের সবচেয়ে বড় একটি অংশ ধূমপান করে থাকে। এসব ধূমপায়ী এ রোগের ঝুঁকিতে তো থাকেই সঙ্গে অন্যরাও পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয়ে এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। অধূমপায়ীদের মধ্যে ফুসফুস ক্যান্সার হওয়ার ১৭ ভাগ দায়ী পরোক্ষ ধূমপান। চিকিৎসকরা বলছেন, ফুসফুস ক্যান্সার প্রতিরোধে সব তামাকজাতীয় দ্রব্য নিষিদ্ধের পাশাপাশি অস্বাস্থ্যকর খাবার পরিহার ও পরিবেশে বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত জরুরি।
এ বিষয়ে জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. কাজী মোশতাক হোসেন বণিক বার্তা বলেন, রোগটি প্রতিরোধে প্রথমে আক্রান্ত হওয়ার কারণগুলো চিহ্নিত করতে হবে। বিশেষ করে তামাক ও পরিবেশে রাসায়নিকের বিষাক্ত পদার্থ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
তিনি বলেন, অধূমপায়ীদের মধ্যে ফুসফুস ক্যান্সার হওয়ার ১৭ ভাগ দায়ী পরিবেশগত তামাকের ধোঁয়া বা পরোক্ষ ধূমপান। পরিবেশগত তামাকের ধোঁয়ার মধ্যে রয়েছে বেনজিন, যা নানা ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য প্রস্তুত করার কাজে ব্যবহূত হয়। যেখান থেকে সালফার-ডাই-অক্সাইড হয়ে থাকে। এসব রাসায়নিকের মধ্যে রয়েছে আর্সেনিক, বেরিলিয়াম, ক্লোরোমিথেন, ইথার,
রেডিয়ামের মতো তেজস্ক্রিয় মৌলিক পদার্থ, যা ক্যান্সার তৈরি করে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এ সম্পর্কিত কারখানার কর্মীদের অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে।
বাংলাদেশে অন্যান্য ক্যান্সার শনাক্তে নিয়মিত স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম থাকলেও ফুসফুস ক্যান্সারের ক্ষেত্রে এ সুবিধা নেই। তবে তাদের জন্য বছরে অন্তত একবার বুকের এক্স-রে করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
ফুসফুস ক্যান্সার হওয়ার আরেকটি দিক হলো অস্বাস্থ্যকর খাবার। বিশেষ করে ভাজা-পোড়া জাতীয় খাবার। ভাজা পোড়া খাবার শুধু ফুসফুসের নয় লিভার ও হূদরোগ হওয়ারও ঝুঁকি বাড়ায়। এজন্য ফুসফুস ক্যান্সার প্রতিরোধে স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে।
ডা. কাজী মোশতাক হোসেন বলেন, একসময় ভাবা হতো ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট ফুসফুস ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। আসলে এ ধারণা ঠিক নয়। তবে অতিরিক্ত ভিটামিন সাপ্লিমেন্টের প্রয়োজন নেই। কিন্তু খাবারে মিনারেল, ম্যাগনেশিয়াম, জিঙ্ক, কপার, আয়রন থাকতে হবে। এগুলোর অভাবে ফুসফুস ক্যান্সার হতে পারে।
ফল ও শাকসবজি ফুসফুস ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। ফলের মধ্যে আপেল অন্যতম। এতে থাকা ফ্ল্যাভোনয়েডস ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করে। পাশাপাশি রসুনে থাকা সালফাইড ফুসফুস ক্যান্সার প্রতিরোধে সক্ষম। বেশি উপকার পেতে রান্না না করে কাঁচা রসুন খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন অনেকে।
সবুজ সবজির মধ্যে সব থেকে ভালো হলো ব্রকোলি। এতে সালফ্রোফেন থাকে। এ সবুজ সবজি থেকে যে এনজাইম বের হয় তা ক্যান্সার প্রতিরোধে সক্ষম। এছাড়া পালং শাকে প্রচুর পরিমাণে ফোলেট, ভিটামিন এবং লুটেইন থাকে। যা ফুসফুস ভালো রাখতে সাহায্য করে। গবেষণা বলছে, যেসব ব্যক্তি ফল বা শাকসবজি খাবার খায় না তারা ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার তিন গুণ বেশি ঝুঁকিতে থাকে। তাই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, তামাক, পরিবেশ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি অস্বাস্থ্যকর খাবার পরিহার, বিভিন্ন ফল ও শাকসবজি খেলে ফুসফুস ক্যান্সার প্রতিরোধ অত্যন্ত সহজ হবে।