আলোকপাত

বর্তমান বাজার পরিস্থিতি অর্থনীতির জন্য কতটা মঙ্গলজনক?

ড. আর এম দেবনাথ

গত মে বাঙালির সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব রমজানের ঈদ উদযাপিত হয়েছে। অনুষ্ঠিত হয়েছে বেশ শান্তিপূর্ণ পরিবেশে আনন্দ-উচ্ছ্বাসের মধ্য দিয়ে। শত হোক দুই বছর পর এই প্রথম মোটামুটি কভিড-১৯ মুক্ত পরিবেশে মানুষ নির্বিঘ্নে ঈদ উৎসব পালন করতে পেরেছে। এর আগে দুটো গুরুত্বপূর্ণ দিবস পালন করেছি আমরা। নববর্ষ বরণ উৎসব এবং শ্রমিকদের মে দিবস। এদিকে এটি বৈশাখ মাস, যা শেষ হবে ১৩ মে। সারা দেশে প্রধান ধানী ফসল কৃষকরা ঘরে তুলতে ব্যস্ত। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সরকার ধান সংগ্রহের বিশাল টার্গেট পরিপূরণের উদ্দেশ্যে কাজ করছে। সারা বৈশাখ মাস গেছে প্রচণ্ড গরম রোদের তাপে। প্রকৃতির খেলা পবিত্র ঈদের দিন আকাশ ছিল মেঘলা, অনেক জায়গায় পরিবেশ ছিল বৃষ্টিস্নাত। প্রধান ঈদের জামাত ছিল জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে, বায়তুল মোকাররমে, কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় এবং দিনাজপুরের ঐতিহাসিক গোর- শহীদ ময়দানে। লাখো কোটি মুসল্লি যথাযথ ধর্মীয় ভাব-গাম্ভীর্যের মধ্যে পবিত্র ঈদের নামাজ আদায় করেছে। উপলক্ষে লাখ লাখ লোক ঢাকাসহ দেশের বড় বড় শহর থেকে দেশের বাড়িতে নাড়ির টানে গিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই পরিবহন খাতের সব মাধ্যমই ছিল ব্যস্ত, অতিরিক্ত ব্যস্ত। শত হোক দু-চারদিনের মধ্যে লাখ লাখ লোক ঢাকা ছেড়েছে, অন্যান্য শহর ছেড়েছে। আবার ঈদ শেষে মা-বাবার সঙ্গে দেখা শেষে যথারীতি তারা কর্মস্থলে আসতে শুরু করেছে। এক্ষেত্রেও বিড়ম্বনা, বিশৃঙ্খলা, ভাড়া বৃদ্ধি কষ্ট। তবু সই। এটা বরাবরের চিত্র। অনেকটা মৌমাছির বিশৃঙ্খলার মতো। শত শত হাজার হাজার মৌমাছি মধু তৈরিতে ব্যস্ত থাকা অবস্থায় চরম বিশৃঙ্খল থাকে। কিন্তু সময় শেষে ঠিকই মধু পাই আমরা। ঈদ উপলক্ষে গ্রামে যাওয়া-গ্রাম থেকে আসার চিত্র, তাতেও একই অবস্থা লক্ষণীয়। কিন্তু লাখো কোটি মানুষ এমন পরিবেশের মধ্যেই গ্রামে যায়, যথাসময়ে ঈদের নামাজ আদায় করে। মা-বাবার সঙ্গে সময় কাটায় আবার কর্মস্থলে ফিরে আসে। অথচ দৃশ্যত মনে হয় কী বিশৃঙ্খল অবস্থা চারদিকে। মানুষ মই দিয়ে ট্রেনের ছাদে ওঠে। বাসের ছাদে গাদাগাদি করে গন্তব্যে যায়। লঞ্চ-স্টিমার দেখলে মনে হয়, এই বুঝি তা ডুবে যাত্রী সব নিখোঁজ হলো। না, তা হয় না। অভিজ্ঞতা আমার কাছে দারুণ শিক্ষণীয় বিষয়। বিশৃঙ্খলার মধ্যে উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন। দেখা যাচ্ছে মানুষ ঈদ উপলক্ষে শুধু বাড়ি যাচ্ছে না, তারা ছুটে গিয়েছে পর্যটন কেন্দ্রগুলোয়কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, সিলেট, কুয়াকাটাকোথাও তিল ধারণের স্থান নেই। ঢাকার আশপাশে আছে বহু আবাসিক রিসোর্ট, সেখানেও জায়গা নেই। লক্ষাধিক লোক এই অবস্থায়ও গেছে ভারতে। কোটির অধিক বাংলাদেশী ঈদ উদযাপন করেছে বিদেশে। অনেকে ছেলে-মেয়ে-স্ত্রী-পুত্র-পরিজনের সঙ্গে ঈদ করার জন্য গিয়েছে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, মালয়েশিয়া, দুবাই, ইউরোপীয় দেশ এবং কানাডা আমেরিকা। যেহেতু ছুটির দিন ছিল বেশি, তাই মানুষ পাগলের মতো ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েছেদুই বছরের ঘাটতি পুষিয়ে নেয়ার জন্য। কাগজে দেখলাম একমাত্র কক্সবাজারেই এই কয়েক দিনের মধ্যে পাঁচ লাখ পর্যটক বেড়াতে গেছে। হোটেল-রিসোর্ট মালিকরা বলছেন, এতে তাদের ব্যবসা হবে ৫০০ কোটি টাকার। রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, সিলেট, কুয়াকাটা খুলনা হিসাবে নিলে কত টাকার আবাসিক হোটেল ব্যবসা হতে পারে তা অনুমান করা কঠিন। শুধু পর্যটন ব্যবসা নয়, ঈদের সঙ্গে জড়িয়ে আছে নানা ব্যবসা। জামা-কাপড়, জুতা-মোজা, খাদ্যদ্রব্য, বৈদ্যুতিক সাজ-সরঞ্জামাদি থেকে শুরু করে ব্যবসা হয়েছে পরিবহনের। ব্যবসার পরিমাণ কত? এর আনুমানই শুধু করা যেতে পারে, প্রকৃত ব্যবসার পরিমাণ বলা খুবই কঠিন। সরকারি কোনো তথ্য নেই। তবে কয়েকটা সূচক ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন ঈদের আগে ব্যাংক খালি করে লোকে টাকা তুলেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক হাজার হাজার কোটি টাকা বাজারে ছেড়েছে। নতুন নোটই প্রচলন করেছে ২৩ হাজার কোটি টাকার। ৪০ লাখ পোশাক শ্রমিকের অধিকাংশই বেতন-ভাতা পেয়েছেন। ৩০-৪০ লাখ সরকারি-বেসরকারি খাতের কর্মকর্তা কর্মচারী যথারীতি বেতন-ভাতা পেয়েছেন এবং তা নিয়ে বাজারে নেমেছেন। বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশীরা ২০০ কোটি ডলার এপ্রিলে পাঠিয়েছেন। এর সুবিধাভোগী কোটিখানেক পরিবার। ধনী ধনাঢ্য ব্যবসায়ীরা গরিবদের অর্থ সাহায্য দিয়েছেন। জাকাতের টাকা এসেছে বাজারে। আছে মৌসুমি বোরো ধান বিক্রির জমানো টাকা। এমনকি ধার-কর্জের টাকাও ঈদ উপলক্ষে ব্যয় হয়। রংপুর, দিনাজপুর অঞ্চলের হাজার হাজার রিকশাওয়ালা, বুয়া শ্রেণীর লোক আছে, যারা ঈদের সময় তাদের জমানো টাকা নিয়ে দেশে যায় বাসভর্তি, ট্রেনভর্তি হয়ে। রয়েছে বকশিশের টাকা। সব মিলিয়ে লাখ লাখ লোক বিশাল পরিমাণের ক্রয়ক্ষমতা নিয়ে ঈদের বাজার করেছেন। গিয়েছে পর্যটন কেন্দ্রগুলোয়। বিনোদনের জন্য ঢাকাসহ বিভিন্ন শহর এবং মফস্বলের অঞ্চলগুলোয় হাজির হয়েছে লাখ লাখ লোক। চারদিনে কেবল চিড়িয়াখানাতেই গিয়েছে সাড়ে তিন লাখ লোক। তাদের হাতেও খরচের টাকা ছিল। এভাবে দেখলে বোঝা যায় বিলিয়ন বিলিয়ন (এক বিলিয়ন সমান শত কোটি) টাকা খরচ হয়েছে ঈদ উপলক্ষে। ফলে অর্থনীতি চাঙ্গা হয়েছে। বিশেষ করে গ্রামে গিয়েছে প্রচুর ক্যাশ গ্রামের বাজার পুনরুজ্জীবন পেয়েছে দুই বছর পর। বলা যায় এবার ব্যবসায়ী, ভোগ্যপণ্য বিক্রেতা, কাঁচামাল বিক্রেতা, হোটেল-মোটেলওয়ালা, রেস্টুরেন্টওয়ালা, পরিবহন মালিকরা দুই বছরের লোকসান অনেকটা পুষিয়ে নিয়েছেন। তবে শুনেছি বাস-ট্রাকওয়ালারা এবার তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি ছিলেন মোটরবাইকের সঙ্গে। ইজিবাইক, টেম্পো ইত্যাদি পরিবহন মাধ্যম এখন বেশ জনপ্রিয় এবং তাদের ব্যবসা জমজমাট। তরুণ যুবকরা এর সঙ্গে জড়িত।

এবার একটা প্রশ্ন বিবেচনা করতেই হয়। ঢাকা থেকে গ্রামে যাওয়া, গ্রাম থেকে কর্মস্থলে আবার ফিরে আসা লোকগুলো কারা? দামি দামি শপিংমলে বাজার করা, দামি দামি বৈদ্যুতিক সাজ-সরঞ্জাম কেনা, পর্যটন কেন্দ্রগুলোয় ঘোরা, বিনোদন কেন্দ্রে ঘুরে বেড়ানো লোকেরা কারা? এরা সমাজের কোন শ্রেণীর লোক? আমি শ্রমজীবী লোকদের কথা বলছি না। রিকশাওয়ালা, বুয়া শ্রেণীর উত্তরবঙ্গের লোকদের কথা বলছি না। বলছি অন্যদের কথা। এরা কারা? বলা বাহুল্য, লোকেরা উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণীর লোক। তাদেরই গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস কেনার টাকা আছে, ক্রয়ক্ষমতা আছে। মধ্যবিত্ত শ্রেণীর লোকেরাই হবে বেশি। উচ্চবিত্ত, ধনবান লোকেরা বেড়ায় দেশে নয়, বিদেশে। তাদের ক্রয়ক্ষমতা অফুরন্ত। এদের বিদেশে অনেকের ঘরবাড়ি আছে, এদের ছেলে-মেয়ে বিদেশে থাকে। এরা অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ইউরোপ, কানাডা আমেরিকায় যায়। এর পরের শ্রেণীর অপেক্ষাকৃত ধনবানরা যায় পারতপক্ষে প্রতিবেশী ভারতেদার্জিলিং, শিলং, কাশ্মীর, দিল্লি দক্ষিণ ভারতে। বাকিরা সাধারণ মধ্যবিত্ত। তারাই দেশের ভেতরে পর্যটনের মূল ভিত্তি। এরা উঠতি মধ্যবিত্ত। পাকিস্তান আমলে (১৯৪৭-৭১) শ্রেণীটি ছিল না। তখন মধ্যবিত্ত শ্রেণী বলতে সেভাবে কিছু ছিল না। সমাজ ছিল মোটামুটি সমতল। মধ্যবিত্ত বলতে অল্পসংখ্যক যা ছিল তা বাঙালি হিন্দু মধ্যবিত্ত। আর ছিল জমিদার, তালুকদার শ্রেণীর লোক। তখন দেশ-বিদেশ করার বিষয়টি ছিল সীমিত। বাংলাদেশ (তত্কালীন পূর্ববঙ্গ-পূর্ব পাকিস্তান) থেকে অবস্থাপন্ন লোকেরা যেত কলকাতায়। এখন অবস্থায় আমূল পরিবর্তন হয়েছে। বাঙালি পুরনো মধ্যবিত্ত নেই। যারা আছে তারা নতুন উদীয়মান মধ্যবিত্ত, সংখ্যায় অল্প। এর বাইরে বিশাল মধ্যবিত্ত শ্রেণী গড়ে উঠেছে সংখ্যাগুরু সম্প্রদায় থেকে। এর সংখ্যা কেমন হবে? যদি দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ধরে নিই তাহলে মোটামুটি চার কোটি লোক, অর্থাৎ ২৫ শতাংশই নতুন মধ্যবিত্ত শ্রেণীতে পড়ে। এর বাইরেও একটা বড় ধনী শ্রেণীর জন্ম হয়েছে। তাও বেশিদিন আগের কথা নয়। ১৯৭২-৮২ সালেও এদের দেখা পাওয়া ছিল কষ্টকর। মধ্যবিত্তের বিকাশ শুরু হয়েছে ধরতে গেলে দেশে বেসরকারীকরণের (প্রাইভেটাইজেশন) পথ ধরে। বেসরকারীকরণ শুরু হয় ১৯৮২-৮৩ সালের দিকে। এর আগে সবই ছিল সরকারি খাতে। ব্যক্তিগত পর্যায়ে টাকা-পয়সা পাঠানোর সুযোগ ছিল সীমিত। ১৯৮২-৮৩ সালের দিকে বেসরকারি খাতে ব্যাংক-বীমার অনুমতি দেয়া হয়। সরকারি শিল্প-ব্যবসা বেসরকারীকরণ শুরু হয়। এরপর ধাক্কা আসে বাইরে থেকে। উদার বাণিজ্য বিশ্বায়ন, বাজার অর্থনীতি। বিনা বাধায় আমদানি-রফতানি। শুরু হয় মানবসম্পদ রফতানি। বেসরকারি খাত ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। নতুন নতুন চাকরিজীবী, পেশাজীবী, উদ্যমী ব্যবসায়ীর জন্ম হয়। স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। কয়েক হাজার পোশাক তৈরির কারখানা হয়। ওষুধ শিল্প, বস্ত্রশিল্প, সিমেন্ট, ইস্পাত শিল্প, খাদ্যশিল্প, কৃষিভিত্তিক শিল্প, ডেইরি ফার্ম, আইটি ইন্ডাস্ট্রিসহ নানা ধরনের শিল্প গড়ে ওঠে। রাস্তাঘাট অবকাঠামোর উন্নতি হয়। এসে যায় সেলফোন। প্রযুক্তি ব্যবহার সম্প্রসারিত হয়। প্রক্রিয়ায় বহু নতুন নতুন পেশা-জীবিকার জন্ম হয়। সরকারের আকার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। পোশাক কারখানায় ৩০-৪০ লাখ লোকের, বিশেষ করে নারীদের চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হয়। এখন অর্থনীতির ৯০ শতাংশই বেসরকারি খাতে। বিশাল এক কর্মী বাহিনীর সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে গত ১০-১৫ বছরে অবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটে। কর্মী, ব্যবস্থাপক, উকিল, ডাক্তার, ব্যাংকার, বীমাবিদ, ইঞ্জিনিয়ার, প্রযুক্তিবিদ, স্থপতি, শিক্ষক, অধ্যাপক, মালিক, উদ্যোক্তা ইত্যাদি শ্রেণীর উন্মেষ ঘটে। প্রযুক্তির হার বৃদ্ধির পাশাপাশি অবকাঠামোর উন্নতি হয়। গ্রাম হয় বিদ্যুতায়িত। কৃষির উন্নতি হয়। গ্রামেও তৈরি হয় কৃষি উদ্যোক্তা, ছোট ছোট পেশার লোক। রেমিট্যান্সের টাকার বদৌলতে গ্রামগঞ্জে, বিশেষ করে দেশের কিছু অঞ্চলে একটা সুবিধাভোগী শ্রেণীর জন্ম হয়। বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠিত হয়। বড় বড় অবকাঠামো তৈরি হয়। ফলে বড় বড় পুঁজিপতি সামনে আসে। প্রক্রিয়ার ফসলই বর্তমান মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত ধনী শ্রেণী। অবশ্য একশ্রেণীর ধনী লোকের সৃষ্টি হয় সরকারি মদতে। অনেক ক্ষেত্রে আইন লঙ্ঘন করে। অনিয়ম, ঘুষ, দুর্নীতি ইত্যাদিও প্রক্রিয়ায় সহযোগী শক্তি হিসেবে কাজ করে। কাজ করে ঋণখেলাপ, ভূমি দখল, সরকারি সম্পত্তি আত্মসাতের মতো ঘটনাও। ভালো-মন্দ মিলিয়েই গড়ে উঠেছে আজকের বিশাল মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণী। দেশও উন্নয়নশীল ক্যাটাগরি থেকে নিম্নমধ্যবিত্তে পরিণত হয়। প্রক্রিয়ায় জন্ম নেয়া মধ্যবিত্ত শ্রেণীই এখন অর্থনীতির প্রাণভোমরা এরাই বড় বড় শপিংমলে কেনাকাটা করে। এরাই হোটেল-মোটেলে যায়। রেস্তোরাঁয় খায়। এরাই অনলাইন ব্যবসার প্রাণকেন্দ্র। পর্যটক এরাই, বিনোদন কেন্দ্রে পিপাসু এরাই। এরাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্মচারী-কর্মকর্তা-ছাত্রছাত্রী। বিদেশে যায় এরাই। ছুটি হতেই এরা দলবেঁধে চলে যায় পর্যটন কেন্দ্রগুলোয়। ভালো ভালো ব্র্যান্ডের দোকানের ক্রেতা এরাই। বড় বড় মিষ্টি দোকানের ক্রেতাও এরাই। এরাই ফুল কিনে। পহেলা বৈশাখ করে, বিজয় দিবস স্বাধীনতা দিবসে ঢাকা শহরের রাস্তাঘাট কোলাহলে মুখরিত করে। প্রাইভেটকার, মোটরবাইক এরাই চালায়। টেলিভিশন, ফ্রিজ, এসি, দামি মোবাইল ইত্যাদির গ্রাহকও তারাই। বিমানের যাত্রী এরা। মূল কথা অর্থনীতির সেবা খাতের মূল ক্রেতা এরাই। এদেরই কিছু ক্রয়ক্ষমতা আছে। অবশ্য ইদানীংকালে তারা দারুণ চাপের মধ্যে। তাদের আয় বর্ধিষ্ণু নয়। সুদের আয় তাদের এখন কম। মূল্যস্ফীতির শিকার তারা। সয়াবিনের মূল্যবৃদ্ধি, তেল-গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির শিকার তারা। তারাই আয়করের প্রধান উৎস। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, তাদের দেখাশোনা করার কেউ নেই। তাদের স্বার্থ রক্ষা করার কোনো ব্যবস্থা নেই। চারদিকের চাপের শিকার তারা। তারা আয়কর দেয়, ব্যয়ের ওপর কর দেয়। অথচ বিনামূল্যের সরকারি সেবাও তাদের ক্রয় করে ভোগ করতে হয়। তাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা, শিক্ষা আবাসন ব্যবস্থা ব্যয়বহুল। প্রশ্ন: পরিস্থিতি অর্থনীতির জন্য মঙ্গলজনক?

 

. আর এম দেবনাথ: অর্থনৈতিক বিশ্লেষক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন