বিশ্ব অভিবাসন প্রতিবেদন ২০২২

অভিবাসী প্রেরণে বিশ্বে ষষ্ঠ অবস্থানে বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনার কারণে বিশ্বব্যাপী চলাচল নিয়ন্ত্রণ এবং ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও বিপর্যয়, সংঘাত সহিংসতার কারণে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতি বেড়েছে।  ফলে বিশ্বে ক্রমাগতভাবে বাড়ছে অভিবাসীর সংখ্যা। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এখন ২৮ কোটি ১০ লাখ অভিবাসী রয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশী অভিবাসীর সংখ্যা প্রায় ৭৪ লাখ। অভিবাসী সংখ্যার দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশ ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে। আর রেমিট্যান্স আহরণে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম।

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার প্রকাশিত বিশ্ব অভিবাসন প্রতিবেদন ২০২২- সম্প্রতি এমন তথ্য উঠে এসেছে। বিশ্বব্যাপী অভিবাসনের গতিধারা তুলে ধরে নিয়মিত প্রতিবেদন প্রকাশ করে জাতিসংঘের সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম)

প্রতিবেদন অনুসারে, আন্তর্জাতিক অভিবাসীর সংখ্যা ১৯৭০ সালে বিশ্বব্যাপী ৮৪ মিলিয়ন থেকে ২০২০ সালে ২৮১ মিলিয়নে উন্নীত হয়েছে, যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার দশমিক শতাংশ। কভিড-১৯-এর কারণে ২০২০ সালে আন্তর্জাতিক অভিবাসীর সংখ্যা দুই মিলিয়নের মতো কম ছিল।

প্রতিবেদনে বাংলাদেশের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে নানা তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়, ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী বসবাস করা বাংলাদেশী অভিবাসীর সংখ্যা ছিল ৭৪ লাখ। বাংলাদেশের বাইরে বসবাস করেও প্রবাসীরা দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশী অভিবাসীরা ২০১৯ সালে ১৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি দেশে পাঠিয়েছেন, যার মধ্যে ৭৩ শতাংশ এসেছে প্রবাসী শ্রমিকদের কাছ থেকে। মূলত গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিলভুক্ত (জিসিসি) দেশগুলোয় স্বল্প দক্ষ শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন তারা। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স জিডিপির শতাংশের বেশি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বৈদেশিক আয়ের উৎস।

প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানোয় উদ্বুদ্ধ করার জন্য নীতিনির্ধারকদের গৃহীত ব্যবস্থার ফলে প্রবৃদ্ধি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৯ সালে নগদ প্রণোদনা স্কিমের সর্বোচ্চ সীমা তিন গুণেরও বেশি বাড়িয়েছে। এর প্রভাবে রেমিট্যান্স সুবিধাভোগীরা বৈধ পথে অর্থ পাঠানোর ওপর শতাংশ বোনাস পান, যার সর্বোচ্চ সীমা হাজার ডলার পর্যন্ত। এছাড়া রেমিট্যান্স পাঠানোয় উৎসাহ দিতে কিছু বাণিজ্যিক ব্যাংক অতিরিক্ত শতাংশ প্রণোদনা দিয়েছে।

আইওএম বাংলাদেশের অফিসার ইনচার্জ ফাতিমা নুসরাত গাজ্জালি বলেন, রেমিট্যান্সের প্রবাহের ওপর কভিড-১৯ অতিমারীর নেতিবাচক প্রভাব সত্ত্বেও ২০২০ সালে ২১ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যুক্ত হয়েছে। অভিবাসন বাংলাদেশের উন্নতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। অভিবাসীরা উন্নত অর্থনৈতিক, সামাজিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির জন্য অভিবাসন এবং তারপর নিজ দেশে জীবনযাত্রার মান বাড়াতে সহায়তা করেন।

বিশ্ব অভিবাসন প্রতিবেদন ২০২২ প্রতিবেদনটিতে গত দুই বছরে বিশ্বব্যাপী অভিবাসন খাতের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে। এক্ষেত্রে বিষয় বিশ্লেষণে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে অভিবাসনের ঐতিহাসিক সমসাময়িক কারণগুলো। প্রতিবেদন সম্পর্কে আইওএমের মহাপরিচালক অ্যান্টোনিও ভিটোরিনো বলেন, আমরা একটি বৈপরীত্য লক্ষ করছি, যা মানব ইতিহাসে আগে দেখা যায়নি। কভিড-১৯-এর কারণে শতকোটি মানুষ আটকা পড়েছে। তার পরও লাখ লাখ বাস্তুচ্যুতির ঘটনায় বিপুলসংখ্যক মানুষ গৃহহীন হতে বাধ্য হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী আকাশপথে যাত্রী সংখ্যা ৬০ শতাংশ কমেছে। ২০১৯ সালে যাত্রীর সংখ্যা ছিল দশমিক বিলিয়ন, যা ২০২০ সালে দশমিক বিলিয়নে দাঁড়িয়েছে। একই সময়ে দুর্যোগ, সংঘাত সহিংসতার ফলে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতির সংখ্যা বেড়ে ৪০ দশমিক মিলিয়ন হয়েছে, যা এক বছর আগে ছিল ৩১ দশমিক মিলিয়ন।

প্রসঙ্গত, বিশ্ব অভিবাসন প্রতিবেদন সিরিজের ১১তম সংস্করণটিতে অভিবাসন বিষয়ে সাম্প্রতিক তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণের মাধ্যমে অভিবাসনপ্রবণতা তুলে ধরা হয়েছে। ব্যাখ্যা করা হয়েছে অভিবাসন নীতির নতুন নতুন দিক।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন