কভিডের বিপর্যয় কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মহামারীজনিত লোকসান পার করে লাভজনক অবস্থায় ফিরেছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এরই ধারাবাহিকতায় মুনাফায় ফিরেছে দেশটির ব্যাংক খাতও। চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) দুই অংকের মুনাফা বৃদ্ধির কথা জানিয়েছে মার্কিন বৃহত্তম চার ব্যাংক। মুনাফার এ পরিমাণ অর্থনীতিবিদদের প্রত্যাশাকেও ছাড়িয়ে গেছে। মহামারী-পরবর্তী ভোক্তা ব্যয় ও ঋণ বিতরণ বৃদ্ধি ব্যাংকগুলোর এমন ফলাফলে সহায়তা করেছে। যদিও কম সুদের হার ব্যাংক খাতের মুনাফায় চাপ অব্যাহত রেখেছে।
এপির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জুলাই-সেপ্টেম্বর সময় সিটিগ্রুপ, ব্যাংক অব আমেরিকা, ওয়েলস ফার্গো ও জেপি মরগান চেজের মুনাফায় উল্লম্ফন দেখা গেছে। ওয়াল স্ট্রিট ব্যাংকগুলোর সামনে এখন কেবল বাধা হয়ে আছে কম সুদের হার। তার পরও ব্যাংকগুলো মহামারীর শুরুর দিকের তুলনায় বিপুল পরিমাণ ঋণ বিতরণ করেছে। এর মাধ্যমে মার্কিন অর্থনীতি নিয়ে আত্মবিশ্বাসের লক্ষণ ফুটে উঠেছে।
তৃতীয় প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম এ চার ব্যাংকের সম্মিলিত মুনাফার পরিমাণ ২ হাজার ৮৭০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। ব্যাংকগুলোর বিপুল পরিমাণ এ মুনাফা অর্থনীতিবিদদের পূর্বাভাসকেও ছাড়িয়ে গেছে।
ওয়েলস ফার্গোর প্রধান নির্বাহী চার্লস শর্ফ বলেন, অর্থনীতির পূর্বাভাস আশাব্যঞ্জক। ভোক্তাদের আর্থিক অবস্থাও শক্তিশালী। ফলে কোম্পানিগুলোও আর্থিকভাবে শক্তিশালী অবস্থায় রয়েছে। তাছাড়া গ্রাহকদের হাতে অর্থ আছে এবং তারা ব্যয় করতে চাইছেন। পাশাপাশি গ্রাহকদের আমানতের ভারসাম্যও প্রাক-কভিড স্তরকে ছাড়িয়ে গেছে।
জেপি মরগান জানিয়েছে, তাদের ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড মিলিয়ে ব্যয় বেড়েছে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬ শতাংশ। ব্যাংক অব আমেরিকা ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ডের সম্মিলিত ব্যয় বেড়েছে ২১ শতাংশ। এছাড়া সিটিগ্রুপের এ কার্ড ব্যয় বেড়েছে ২৪ শতাংশ।
ব্যাংক অব আমেরিকা জানিয়েছে, তৃতীয় প্রান্তিকে মুনাফা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫৮ শতাংশ বেড়ে ৭২৬ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। শেয়ারপ্রতি ব্যাংকটির মুনাফার হার ৮৫ সেন্ট। ওয়াল স্ট্রিট বিশ্লেষকদের অনুমানের চেয়ে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে এ ব্যাংকটির মুনাফা। বিশ্লেষকরা ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা ৭০ সেন্টের পূর্বাভাস দিয়েছিলেন।
আরেক মার্কিন ব্যাংক ওয়েলস ফার্গোর মুনাফা বেড়েছে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫৯ শতাংশ। মহামারীর শুরুতে কিছু তহবিল আলাদা করতে সক্ষম হওয়ায় উভয় ব্যাংকই উপকৃত হয়েছিল। ব্যাংক অব আমেরিকা ও ওয়েলস ফার্গোর এ মুনাফার ফলাফল জেপি মরগান চেজের ফলাফলকেও প্রতিফলিত করেছে। গত প্রান্তিকে সমস্যাগ্রস্ত ঋণ পোর্টফোলিও থেকে আরো ঋণ ছাড়ার কারণে ব্যাংকটির মুনাফা বেড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় বন্ধকি ঋণদাতা ওয়েলস ফার্গো জানিয়েছে, তাদের নিট সুদের আয় স্থিতিশীল। যদিও সুদ থেকে আয়ের পরিমাণ গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫ শতাংশ কম।
ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার অতি নিম্ন স্তরে রাখার কারণে ওয়েলস ফার্গো ও ব্যাংক অব আমেরিকা উভয়ের সুদের আয় এক বছর আগের তুলনায় কমেছে। তবে ঋণের পরিমাণ বাড়ার কারণে প্রতিষ্ঠানগুলোর মুনাফায় এমন ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা গেছে। দ্বিতীয় প্রান্তিকের তুলনায় এ সময়ে ব্যাংক অব আমেরিকার ঋণের পরিমাণ বেড়ে ২ হাজার ১০০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে।
এদিকে তৃতীয় প্রান্তিকে ২৪ শতাংশ মুনাফা বৃদ্ধির কথা জানিয়েছে জেপি মরগান চেজ। সম্পদের দিক থেকে মার্কিন বৃহত্তম ব্যাংকের মুনাফা গত তিন মাসে ১ হাজার ১৬৯ কোটি ডলারে পৌঁছেছে, যেখানে শেয়ারপ্রতি এ মুনাফার হার ৩ ডলার ৭৪ সেন্ট। গত বছরের একই সময়ে সংস্থাটি ৯৪৪ কোটি ডলারের মুনাফা পেয়েছিল।
এছাড়া আর্থিক কনগ্লোমারেট সিটি গ্রুপ ক্রেডিট কার্ড ও বিনিয়োগ ব্যাংকিং ফ্র্যাঞ্চাইজি থেকে উপকৃত হয়েছে। জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে এক বছর আগের তুলনায় ব্যাংকটির মুনাফা বেড়েছে ৪৮ শতাংশ। ক্রমবর্ধমান শেয়ারবাজার ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে অধিগ্রহণ করার মতো পদক্ষেপ সিটির মুনাফা বাড়াতে সহায়তা করেছে। বিনিয়োগ ব্যাংকটির রাজস্ব বেড়েছে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪০ শতাংশ।