ডিএসইকে চিঠি

নিয়মবহির্ভূত মার্জিন ঋণের তথ্য জানতে চায় বিএসইসি

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিনিয়োগের ঝুঁকি পরিমাপে শেয়ারের মূল্য-আয় অনুপাত (পিই রেশিও) গুরুত্বপূর্ণ একটি নির্দেশক। পিই রেশিও বেশি হলে শেয়ারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ঝুঁকিও বেশি থাকে। অন্যদিকে পিই রেশিও কম হলে সেক্ষেত্রে ঝুঁকির পরিমাণ কমে যায়। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৪০-এর বেশি পিই রেশিও রয়েছে যেসব কোম্পানির, সেগুলোর শেয়ারদর বৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধানে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) পাশাপাশি এসব কোম্পানিতে আইনবহির্ভূতভাবে মার্জিন ঋণ দেয়া হয়েছে কিনা, সেটিও যাচাই করে দেখা হবে। গতকাল বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই) একটি চিঠি পাঠিয়েছে বিএসইসি।

ডিএসইর এমডির কাছে পাঠানো বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠিতে পিই রেশিও ৪০-এর বেশি এমন কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর বৃদ্ধির কারণ খুঁজে বের করে ১৫ দিনের মধ্যে কমিশনের কাছে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি ২০১০ সালের ১৫ জুন কমিশনের জারি করা মার্জিন ঋণসংক্রান্ত নির্দেশনার ব্যত্যয় ঘটিয়ে এসব শেয়ারে ঋণ দেয়া হয়েছে কিনা, সেটিও ডিএসইকে খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে।

কমিশন সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে স্বল্প মূলধনি বেশকিছু কোম্পানির শেয়ারদর অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। এর মধ্যে এমন কোম্পানিও রয়েছে, যেগুলোর পিই রেশিও ৪০-এর বেশি। বিএসইসির নির্দেশনা অনুসারে কোনো কোম্পানির শেয়ারের পিই রেশিও ৪০ কিংবা তার বেশি হলে সেসব শেয়ারে মার্জিন ঋণ দেয়া যায় না। যদিও ধরনের শেয়ারের ক্ষেত্রে নিয়ম ভঙ্গ করে মার্জিন ঋণ দেয়ার বিষয়টি কমিশনের নজরে এসেছে। ৪০-এর বেশি পিই রেশিওর কোম্পানিতে বিনিয়োগ এমনিতেই ঝুঁকিপূর্ণ। তার ওপর ধরনের শেয়ারে মার্জিন ঋণ দেয়া হলে সেটি ঝুঁকির মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেয়। ফলে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া থেকে রক্ষা করতেই কমিশন উদ্যোগ নিয়েছে।

বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক . শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বণিক বার্তাকে বলেন, যেসব কোম্পানির পিই রেশিও ৪০-এর বেশি রয়েছে, সেগুলোর শেয়ারদর যৌক্তিক কারণে বেড়েছে কিনা, সেটি ডিএসইকে খুঁজে দেখতে বলা হয়েছে। এছাড়া বিএসইসির নির্দেশনার ব্যত্যয় করে কেউ এসব শেয়ারে মার্জিন ঋণ দিয়েছে কিনা, সেটিও খুঁজে দেখা হবে। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা যাতে ক্ষতির মুখে না পড়েন, সেটিই আমাদের লক্ষ্য। সর্বোপরি প্রচলিত বিধিবিধান অনুসরণ করে যাতে মার্জিন ঋণ বিতরণ করা হয়, সেটিও আমরা নিশ্চিত করতে চাই।

ডিএসইর তথ্যানুসারে, গতকালের শেয়ারদর অনুযায়ী বিভিন্ন খাতের ৭১টি কোম্পানির পিই রেশিও ৪০-এর বেশি ছিল। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পিই রেশিও ছিল রহিমা ফুডের হাজার ৬৯২ দশমিক ৫। হাজারের বেশি পিই রেশিওর তালিকায় আরো ছিল ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক (আইএসএন) লিমিটেড হাজার ৩১২ দশমিক বঙ্গজ লিমিটেডের হাজার ৭৫ দশমিক ৯১।

১০০ থেকে হাজারের নিচে পিই রেশিও রয়েছে ৩১টি কোম্পানির। এগুলো হচ্ছে লিবরা ইনফিউশন ৯৫২ দশমিক , লিগ্যাসি ফুটওয়্যার ৮৭৭ দশমিক , বাংলাদেশ মনোস্পুল পেপার ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি ৬১৫ দশমিক , অ্যাম্বি ফার্মাসিউটিক্যালস ৫৯৬ দশমিক ৬৫, মুন্নু ফ্যাব্রিকস ৫৬২ দশমিক , সোনালী আঁশ ইন্ডাস্ট্রিজ ৫৩২ দশমিক , কে অ্যান্ড কিউ বাংলাদেশ ৪২১ দশমিক ৮৮, বাংলাদেশ (বিডি) অটোকারস ৪২০ দশমিক ৭৩, মুন্নু এগ্রো অ্যান্ড জেনারেল মেশিনারি ৪১৮ দশমিক ২৫, প্রাইম ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ৪০৪, পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং ৩৯৯ দশমিক ৮৯, এমারাল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ ২৯৭ দশমিক , সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস ২৪৭ দশমিক , এএফসি এগ্রো বায়োটেক ২২৩ দশমিক ১৩, ইনটেক ১৬৭ দশমিক ৭৬, বাংলাদেশ বিল্ডিং সিস্টেমস (বিবিএস) ১৬৫, আনলিমা ইয়ার্ন ডায়িং ১৬০ দশমিক ৫৭, নাভানা সিএনজি ১৫১ দশমিক ৪৩, মোজাফফর হোসেন স্পিনিং মিলস ১৪৮ দশমিক ১৩, আনোয়ার গ্যালভানাইজিং ১৪৪ দশমিক ৪৪, রবি আজিয়াটা ১৪৩ দশমিক ৩৩, তমিজ উদ্দিন টেক্সটাইল মিলস ১৪০ দশমিক ৫৯, রহিম টেক্সটাইল মিলস ১৩৬ দশমিক ৭১, সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস ১৩৬ দশমিক ৩১, আলহাজ টেক্সটাইল মিলস ১২৫ দশমিক ৩৩, মুন্নু সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ ১২০ দশমিক ২১, এপেক্স ফুডস ১০৮ দশমিক ৫৪, অ্যাকটিভ ফাইন কেমিক্যালস ১০৮ দশমিক শূন্য ড্যাফোডিল কম্পিউটার্স লিমিটেডের ১০৭ দশমিক ১৪।

এছাড়া পিই রেশিও ৪০-এর ওপরে কিন্তু ১০০-এর নিচে এমন কোম্পানি রয়েছে ৩৭টি। এগুলো হচ্ছে আরামিট লিমিটেড ৯৪ দশমিক ৩৬, গোল্ডেনসন ৯৩ দশমিক ৭৫, সালভো কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি ৯৩ দশমিক ৭৫, আরামিট সিমেন্ট ৯৩ দশমিক ২৮, প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স ৯২ দশমিক শূন্য , ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) ৮৫ দশমিক ৫৬, জেএমআই সিরিঞ্জেস অ্যান্ড মেডিকেল ডিভাইসেস ৮৫ দশমিক ৫৪, ডেল্টা স্পিনার্স ৮৪ দশমিক ৫৫, ইউনিলিভার কনজিউমার কেয়ার ৮০ দশমিক ৫২, ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো) ৭৩ দশমিক ২৬, আরডি ফুড ৬৯ দশমিক ৫২, এসিআই লিমিটেড ৬৬ দশমিক ৭৬, ফু-ওয়াং ফুড ৬৬ দশমিক ৩৫, ফু-ওয়াং সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ ৬৫ দশমিক ৮৯, ওরিয়ন ইনফিউশন ৫৯ দশমিক শূন্য , মেঘনা সিমেন্ট মিলস ৫৪ দশমিক ১৬, এনভয় টেক্সটাইলস ৫৪ দশমিক শূন্য , গ্লোবাল হেভি কেমিক্যালস ৫৩ দশমিক ২৫, বাংলাদেশ (বিডি) ল্যাম্পস ৫১ দশমিক ৪৯, বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস ৫০ দশমিক ৯৬, রিং শাইন টেক্সটাইলস ৪৮ দশমিক ৯৭, প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স ৪৮ দশমিক ২১, বেঙ্গল উইন্ডসর থার্মোপ্লাস্টিকস ৪৭ দশমিক ৯৩, এপেক্স স্পিনিং অ্যান্ড নিটিং মিলস ৪৫ দশমিক ৯০, আইএফআইএল ইসলামিক মিউচুয়াল ফান্ড ওয়ান ৪৫ দশমিক ৬৮, তসরিফা ইন্ডাস্ট্রিজ ৪৫ দশমিক ৬৩, এপেক্স ফুটওয়্যার ৪৫ দশমিক ৩২, রূপালী ব্যাংক ৪৪ দশমিক শূন্য , ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্টস ৪৩ দশমিক ৯০, দ্য পেনিনসুলা চিটাগং ৪৩ দশমিক ৫৩, কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজ ৪৩ দশমিক শূন্য , রংপুর ফাউন্ড্রি ৪২ দশমিক ৯৩, সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট ৪২ দশমিক ৮২, দ্য ঢাকা ডাইং অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি ৪১ দশমিক ৯৭, ওইমেক্স ইলেকট্রোড ৪১ দশমিক ৬২, ওয়াটা কেমিক্যালস ৪১ দশমিক ৫৫, কোহিনূর কেমিক্যালস কোম্পানি বাংলাদেশ ৪১ দশমিক ৪৩, কেয়া কসমেটিকস ৪১ দশমিক ২৫ শমরিতা হসপিটাল লিমিটেড ৪১ দশমিক শূন্য ৬।

৪০-এর বেশি পিই রেশিও থাকা কোম্পানিগুলোর মধ্যে অনেকেরই শেয়ারদর সাম্প্রতিক সময়ে বেড়েছে। শেয়ারদর বৃদ্ধির কারণেই কোম্পানিগুলোর পিই রেশিও বেড়েছে। অবশ্য পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়মিতভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয় বলে জানিয়েছেন ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আমিন ভূঁইয়া। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, কমিশনের চিঠি আমি গতকাল পর্যন্ত পাইনি। যেহেতু গতকালই চিঠিটি ইস্যু করা হয়েছে, তাই আজ এটি হাতে পাব বলে আশা করছি। চিঠি পাওয়ার পর কমিশনের নির্দেশনা অনুসারে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন