টেক বিলিয়নেয়ারদের সঙ্গে চীন সরকারের মধুচন্দ্রিমা কি শেষ?

বণিক বার্তা ডেস্ক

গত কয়েক দশকের প্রচেষ্টায় প্রযুক্তি খাতে অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছে চীন দেশটির প্রযুক্তি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা বিশ্বের সর্বোচ্চ ধনীদের তালিকাভুক্ত হচ্ছেন নতুন পপুলার কালচার হয়ে ওঠা টিকটক থেকে শুরু করে -কমার্স প্লাটফর্ম আলিবাবা, সবখানেই চীনা ব্যবসায়ীদের জয়জয়কার তাদের পসার চীনের গণ্ডি ছাড়িয়ে গেছে বহু আগেই এমন পরিস্থিতিতে এসব ব্যবসায়ীর ওপর নিয়মের খড়্গ চালাচ্ছে কমিউনিস্ট সরকার বলা হচ্ছে, গুটিকয়েক মানুষের জন্য নয়, সবার জন্য সমৃদ্ধি আনতে কাজ করছে সরকার আর তাই এত নিয়মের বেড়াজালে ঘেরা হচ্ছে ব্যবসায়ীদের

চার দশক আগে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের পূর্বসূরি দেং শিওপেং দেশের অর্থনীতিতে উদার নীতির প্রয়োগ করেন যার ফলাফল হিসেবে চীনের উৎপাদন খাত দারুণভাবে উন্নত হয় প্রযুক্তির ব্যবহারের কারণে কিছু নির্দিষ্ট মানুষের ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায় কিন্তু দীর্ঘসময় পর এসে সে দৃশ্য বদলে গেছে এখন চীন সরকার সেই প্রযুক্তিকেই নানা নিয়মের বেড়াজালে বেঁধে রাখতে চায় বিশেষ করে বেসরকারি প্রযুক্তি খাতের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চোখে পড়ার মতো অথচ প্রতিষ্ঠানগুলোর সীমানা এরই মধ্যে চীনের বাইরে ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে

নিউইয়র্ক শেয়ারবাজারের তালিকাভুক্ত চীনের ২৫০টি প্রতিষ্ঠান তাদের খোঁজখবর রাখে নাসডাক গোল্ডেন ড্রাগন ইনডেক্স তারা বলছে, অন্তত ৫০ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের অবস্থা পড়তির দিকে নিয়ন্ত্রকদের চাপের বিপরীতে দাঁড়াতেও ভয় পাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা আশঙ্কা করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজার থেকে বাদ পড়তে পারে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম

সামনে কী হতে যাচ্ছে তা নিয়ে লন্ডন থেকে নিউইয়র্ক, সবখানের বিনিয়োগকারীরাই চিন্তিত শি জিনপিং কি করপোরেশন নাগরিকদের মধ্যে ভারসাম্য আসতে চাইছেন? নাকি চীনের বেসরকারি খাতকে আবারো রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণাধীন করতে চান? প্রশ্নগুলোই এখন উচ্চারিত হচ্ছে সবচেয়ে বেশি

গত সপ্তাহে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকে বলা হয়, একটা সময় কিছু মানুষকে দ্রুত বড়লোক হওয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছিল সেটা ছিল সময়ের প্রয়োজন তবে এখন সময় এসেছে যখন, সবার জন্য সমৃদ্ধিকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে আর এটাই ক্ষমতাসীন দলের মূল লক্ষ্য ফলে খুব বেশি অর্থ উপার্জন করে এমন গোষ্ঠী উদ্যোগকে নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনা হবে এসব অর্থ যেন আরো বেশি মানুষের উপকারে আসে, সেদিকে নজর রাখা হবে

বিশ্লেষকরা বলছেন, চীনের ব্যবসায়ীদের প্রচুর অর্ধ উপার্জনের কারণে বিশ্বে দেশে তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তি বাড়ছে তাদের ক্ষমতা মাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে, রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানগুলোর চেয়েও ব্যবসায়ীরা শক্তিশালী হয়ে উঠছেন, সম্ভবত এটিই চীনা কমিউনিস্ট পার্টির ভয়ের কারণ আর তাই নিয়ন্ত্রণের এত আয়োজন

প্যারিস স্কুল অব ইকোনমিকসের চীন বিষয়ক গবেষক ইয়াং লি বলেন, মাও জেদংয়ের শাসনামলে চীনের সব মানুষ দরিদ্র ছিল এরপর এলো ডেং জিয়াও পিংয়ের শাসন যখন এটা প্রচার হতে শুরু করল যে ধনী হওয়া গৌরবের কিন্তু এটাও ঠিক যে চীনের প্রধান লক্ষ্য সবসময়ই ছিল সবার জন্য সমৃদ্ধি নিয়ে আসা এখন যখন চীন মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছেছে, তখন শি জিনপিং সিদ্ধান্ত নিলেন যে এবার তিনি ডেংয়ের মন্ত্রের শেষাংশের বাস্তবায়ন করবেন আর সেটি হলো সবার জন্য সমৃদ্ধি অর্জন করা

তবে শি জিনপিংয়ের সিদ্ধান্তের পেছনে আরেকটি কারণও উল্লেখ করছেন ইয়াং লি তিনি বলেন, এর মাধ্যমে জনসমর্থন অর্জন করতে চায় ক্ষমতাসীন দল যেন ক্ষমতা আরো দীর্ঘায়িত হতে পারে

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নানারকম নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার বিষয়টি নিয়ে ঘরে-বাইরে প্রচুর আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে কেউ এটিকে ভালো চোখে দেখছেন আবার কেউ দেখছেন নেতিবাচক দৃষ্টিতে ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানের রাজনৈতিক অর্থনীতির ছাত্র ইউয়েন ইউয়েন আং বলেন, সমতা বাড়ানো অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের চিন্তা নিঃসন্দেহে মহৎ কিন্তু প্রশ্ন হলো, এসব অর্জনের জন্য যে পন্থা চীন সরকার বেছে নিয়েছে সেটি সঠিক কিনা

দ্য গার্ডিয়ান

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন