শেষ ম্যাচে অসিদের বড় লজ্জা দিলেন সাকিবরা

ক্রীড়া প্রতিবেদক

ক্রিকেটের পরাশক্তি অস্ট্রেলিয়াকে টি২০ সিরিজে ৪-১ ব্যবধানে হারানোর পর ট্রফি নিয়ে এক ফ্রেমে সাকিব-মাহমুদউল্লাহরা ছবি: মো. মানিক

আগেই সিরিজ জিতে নেয়া বাংলাদেশ গতকাল পঞ্চম শেষ টি২০ ম্যাচে সফরকারী অস্ট্রেলিয়াকে দিল আরো বড় লজ্জা। এদিন নিজেদের টি২০ ক্রিকেট ইতিহাসে সর্বনিম্ন রানে অলআউট হয়ে বাংলাদেশের কাছে তারা হারল ৬০ রানে। ১২৩ রানের টার্গেটে ব্যাটিংয়ে নেমে সাকিব আল হাসানের ঘূর্ণিতে বেসামাল অসিরা ১৩. ওভারে গুটিয়ে যায় মাত্র ৬২ রানে। এর মধ্যে ২৪ রানে শেষ উইকেট হারায় অতিথিরা।

টি২০ ক্রিকেটে এর আগে এত কম রানে কিংবা এত কম ওভারের মধ্যে অলআউট হয়ে যায়নি অসিরা। আগের সর্বনিম্ন দলীয় সংগ্রহ ছিল ৭৯ রান। ২০০৫ সালে সাউদাম্পটনে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৪. ওভারে ৭৯ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল অসিরা। এবার সবচেয়ে কম রান ওভারের দুটি লজ্জাই তারা পেল বাংলাদেশের কাছে।

বাংলাদেশ ক্রিকেটের পোস্টার বয় সাকিব একাই চার উইকেট তুলে নিয়ে অসিদের ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেন। . ওভারে রানে চার উইকেট শিকার করেন চ্যাম্পিয়ন অলরাউন্ডার। এর মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক টি২০ ক্রিকেটে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে ১০০ উইকেট পূর্ণ করলেন তিনি। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক টি২০তে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ১০০ উইকেট এক হাজার রানের মাইলফলকে পৌঁছলেন সাকিব।

আগের ম্যাচে দলের হারের পথে ওভারে ৫০ রান দিয়ে সমালোচিত হয়েছিলেন সাকিব। তখন তার পাশে দাঁড়ান মাহমুদউল্লাহ। অধিনায়ক বলছিলেন, সাকিব স্বরূপে ফিরবেন। ফিরলেন পরের ম্যাচেই। গতকাল সেই সাকিব দলের জয়ে রাখলেন সবচেয়ে বড় অবদান। হয়েছেন ম্যাচ সিরিজের সেরা খেলোয়াড়ও।

দেশকে গৌরবের জয় এনে দেয়ার পর মুখে চওড়া হাসি নিয়ে সাকিব বললেন, আমি এখনো খেলাটা উপভোগ করি, এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সতীর্থদের অনেক ধন্যবাদ, তাদের সহযোগিতা ছাড়া অর্জন সম্ভব ছিল না। আমি মনে করি, জিম্বাবুয়ে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে দুটি সিরিজেই আমরা অনবদ্য ক্রিকেট খেলেছি। অবশ্যই উইকেট বেশ কঠিন ছিল, কিন্তু আমরা স্নায়ু ধরে রাখতে পেরেছি। পুরোটাই আমাদের দলগত প্রচেষ্টার ফসল। গত ম্যাচের দিকে তাকালে দেখবেন, আমরা ১০৪ করলেও ম্যাচ একেবারে শেষ ওভার পর্যন্ত গড়িয়েছে। তাই আমরা বুঝেছি, ১২০-১৩০ করেও আমরা সবসময়ই ম্যাচে থাকব। আজ (গতকাল) আমরা ব্যাটিংয়ে ভালো সূচনা পাই, যা আমাদের ছন্দ এনে দিয়েছে।

তিনি আরো বলেন, আমি মনে করি, সিরিজে বোলাররা দুর্দান্ত পারফর্ম করেছে। আমরা সব বিভাগেই উন্নতির চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমাদের ফাস্ট বোলাররাও ভালো করছে। মুস্তাফিজ, শরিফুল, তাসকিনকে দেখেন; তারা আমাদের স্পিনারদের কাজ সহজ করে দিয়েছে। আমরা আমাদের দিক থেকে ভালো অবদান রাখছি।

অস্ট্রেলিয়াকে ঘরের মাঠে -- পরাজিত করায় সবচেয়ে বেশি তৃপ্ত বাংলাদেশ দলনায়ক মাহমুদউল্লাহ। জয়শেষে তিনি বলেছেন, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ জয়ে আমাদের ছেলেদের পারফরম্যান্সের প্রচণ্ড ক্ষুধা ভূমিকা রেখেছে। আমরা সিরিজে পরিকল্পনা ঠিকঠাক কাজে লাগাতে পেরেছি। আমাদের ব্যাটসম্যানদের জন্য কাজটি কঠিন ছিল, যদিও আমার ১২০-১৩০ রান করে গেছি। আজ (গতকাল) দলের সব বোলারই ভালো করেছে। নীরবেই দলের মধ্যে উন্নতি আসছে। জিম্বাবুয়ে সিরিজে দলের ফাস্ট বোলার স্পিনাররা কঠোর পরিশ্রম করেছে। চাপের মুহূর্তে তারা স্নায়ু ধরে রেখেছে, টি২০ ক্রিকেটে যা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

অধিনায়ক আরো বলেন, আমরা মনে করি, নিজেদের মাঠে সবসময়ই আমার একটি ভালো দল। এখানে যে দলই আসুক না কেন, আমরা তাদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে সমর্থ এবং সিরিজ জিততে ভালোবাসি আমরা। তাতে আমাদের র‍্যাংকিং যা- বলুক না কেন। আমার বিশ্বাস, টি২০ ক্রিকেটে ভালো একটি দল হয়ে ওঠার মতো সম্ভাবনা আমাদের মধ্যে আছে।

সিরিজটা ছিল ম্যাথু ওয়েডের জন্য বিরাট পরীক্ষার। তার নেতৃত্বে আসা অস্ট্রেলিয়া শোচনীয়ভাবে পরাজিত হলো। তাও সিরিজেই অসিদের প্রথমবারের মতো হারের স্বাদ দিল বাংলাদেশ, যেকোনো ফরম্যাটে সিরিজেও এই প্রথম তাদের হারাল টাইগাররা। এভাবে সিরিজ খুইয়ে ওয়েডের যেন ভাষা নেই। এর পরও তিনি বাংলাদেশের প্রশংসা করলেন। ওয়েড বলেন, আমাদের বোলাররা ভালোই করেছে, যদিও আমাদের ব্যাটসম্যানরা যথেষ্ট রান পায়নি। তবে বাংলাদেশকে কৃতিত্ব দিতে হবে। শাবাশ বাংলাদেশ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১২২/ (নাইম ২৩, মাহমুদউল্লাহ ১৯, সৌম্য ১৬; এলিস /১৬, ক্রিস্টিয়ান /১৭) অস্ট্রেলিয়া: ১৩. ওভারে ৬২/১০ (ওয়েড ২২, ম্যাকডারমট ১৭; সাকিব /, সাইফউদ্দিন /১২, নাসুম /) ফল: বাংলাদেশ ৬০ রানে জয়ী। সিরিজ: বাংলাদেশ -- জয়ী। ম্যান অব দ্য ম্যাচ ম্যান অব দ্য সিরিজ: সাকিব আল হাসান (বাংলাদেশ)

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন