আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট গত বৃহস্পতিবার সংসদে উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
প্রস্তাবিত বাজেট সার্বিক দিক বিবেচনায় পুঁজিবাজারবান্ধব বলে মনে করছে চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)। তবে আলোচিত বাজেটে পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সময়সীমা বাড়ানো হয়নি, যা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে স্টক এক্সচেঞ্জটি।
বৃহস্পতিবার বাজেট-পরবর্তী প্রতিক্রিয়া হিসেবে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এমনটিই জানিয়েছে দেশের দ্বিতীয় স্টক এক্সচেঞ্জ।
বিজ্ঞপ্তিতে সিএসই জানিয়েছে, ব্যক্তি শ্রেণীর করদাতাদের জন্য ১০ শতাংশ কর পরিশোধ করে পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সময়সীমা এ বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত রয়েছে।
ব্যক্তি শ্রেণীর বিনিয়োগকারীদের জন্য এটি নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ, যার সময়সীমা ঘোষিত বাজেটে বাড়ানো হয়নি।
আমরা বিদ্যমান আইনের এ সময়সীমা বাড়ানোর জন্য দাবি জানাচ্ছি।
এছাড়া সিএসই আরো সাতটি বিষয়ে দাবি জানিয়েছে।
সিএসইর দাবিতে বলা হয়েছে: বিগত অর্থবছরে বাজেটে পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট বিধানগুলো বাজারবান্ধব ছিল।
এ বছর আমাদের চিটাগাং স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে দাবি করা হয়েছিল যে বিদ্যমান বিধানগুলো যেন অপরিবর্তিত থাকে।
আমরা আনন্দিত যে প্রায় সব বিধান অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
তবে স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যদের লেনদেনের ওপর বিদ্যমান উৎসেকর দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ থেকে পূর্বাবস্থায় অর্থাৎ দশমিক শূন্য ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনার সুপারিশ করা হয়েছিল, যা বাজেটে ঘোষিত হয়নি।
ব্রোকারেজ হাউজগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য পরিচালন খরচ বহুগুণ বেড়েছে।
পাশাপাশি তীব্র প্রতিযোগিতামূলক বাজারে ব্রোকারেজ সেবার কমিশন অত্যন্ত কমে আসার কারণে এ কর্তনকৃত অর্থ অধিকাংশ ক্ষেত্রে কার্যকর করদায় হিসেবে অধিক হয়।
তাই উৎসেকরহার হ্রাসে আমাদের প্রস্তাব পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানাচ্ছি।
এছাড়া ব্রোকারদের বিও অ্যাকাউন্ট পরিচালনার ফি থেকে প্রাপ্ত আয় ১০০ টাকা থেকে বিবেচ্য করকে উল্লেখিত দশমিক শূন্য ১৫ শতাংশ উৎসেকর সংযুক্ত হয়েছে বলে বিবেচনা করার জন্য আবেদন করছি।
অন্যদিকে ঘোষিত বাজেটে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর বিদ্যমান করহার ২৫ থেকে ২২ দশমিক ৫ শতাংশে নির্ধারণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
আমাদের দাবি ছিল, এ করহার ২০ শতাংশে কমিয়ে আনা হোক।
এতে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট করহারের ব্যবধান বাড়বে।
ফলে মৌল ভিত্তিসম্পন্ন দেশী, বিদেশী ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত হবে।
তৃতীয়ত, কৌশলী বিনিয়োগকারী আকর্ষণ করাসহ স্টক এক্সচেঞ্জের কারিগরি ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য মূলধন পুনর্বিনিয়োগ প্রয়োজন হয়।
বিনিয়োগকারীদের জ্ঞান ও দক্ষতা এবং দীর্ঘমেয়াদে একটি স্থিতিশীল পুঁজিবাজার গঠনের লক্ষ্যে সিএসইর আর্থিক সক্ষমতা প্রয়োজন হলেও বর্তমানে এক্সচেঞ্জগুলোর আয় উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।
জনস্বার্থ রক্ষায় নিয়োজিত বিশেষায়িত জাতীয় প্রতিষ্ঠান ও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে এক্সচেঞ্জগুলোর প্রযোজ্য করপোরেট করহার ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করা যেতে পারে।
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন লাভজনক কোম্পানিগুলোর শেয়ার বিক্রির কথা বিভিন্ন সময়ে বলা হলেও ঘোষিত বাজেটে এর কোনো পরিকল্পনা পরিলক্ষিত হয়নি।
অর্থায়নের উৎস হিসেবে শেয়ার অফ লোড করে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।
দাবিতে আরো বলা হয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এসএমই বোর্ডের মাধ্যমে স্বল্প মূলধনি কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত করছে।
আমরা তালিকাভুক্ত এসএমই কোম্পানিগুলোর জন্য ১০ শতাংশ হারে ৫ বছরের জন্য কর নির্ধারণ করার প্রস্তাব করেছিলাম।
এতে অধিকসংখ্যক কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড থেকে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তরিত হবে।
এছাড়া বর্তমানে শুধু জিরো কুপন বন্ড থেকে প্রাপ্ত আয় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যতিরেকে করমুক্ত।
দেশের অর্থনীতির আকার ও ব্যাংক খাতের অস্থিরতার পরিপ্রেক্ষিতে একটি শক্তিশালী বন্ড মার্কেট তৈরি অতি জরুরি।
এ পদক্ষেপ পুঁজিবাজারের পাশাপাশি আর্থিক খাতেও শৃঙ্খলা আনতে পারে।
সে কারণে নতুনভাবে একটি বন্ড মার্কেট তৈরি করার লক্ষ্যে সকল প্রকার বন্ড থেকে প্রাপ্ত আয়কে করমুক্ত করা প্রয়োজন এবং জিরো কুপন বন্ড থেকে প্রাপ্ত আয়ের করমুক্ত সুবিধায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ সব করদাতাকে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।
সর্বশেষ বলা হয়েছে, লভ্যাংশ প্রদানের সময় কোম্পানি তার মুনাফার ওপর কর দেয়, পুনরায় লভ্যাংশ বিতরণের সময় কর কর্তনের জন্য দ্বৈত করের সৃষ্টি হয়।
লভ্যাংশ আয়ের ওপর এ দ্বৈত করনীতি পরিহার করা যেতে পারে।
সেই লক্ষ্যে করমুক্ত লভ্যাংশের সীমা ৫০ হাজার টাকা থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে।
প্রস্তাবিত বাজেটের বিষয়ে সিএসই জানিয়েছে, বিশ্ব মহামারী কভিড-১৯-এর এ ক্রান্তিকালে দাঁড়িয়ে ‘জীবন-জীবিকায় প্রাধান্য দিয়ে সুদৃঢ় আগামীর পথে বাংলাদেশ’
শিরোনামে যে বাজেট অর্থমন্ত্রী উপস্থাপন করেছেন।
বক্তৃায় অর্থমন্ত্রী বলেন, সরকার পুঁজিবাজার গতিশীল ও উজ্জীবিত করার লক্ষ্যে নানাবিধ সংস্কারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে।
স্টক এক্সচেঞ্জগুলোকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার উদ্দেশ্যে ও যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আরো কিছু পদক্ষেপ শিগগিরই বাস্তবায়ন করা হবে।
যেমন পুঁজিবাজারে ট্রেজারি বন্ডের লেনদেন চালু করা, আধুনিক পুঁজিবাজারের বিভিন্ন বিষয়, সুকুক, ডেরিভেটিভস, অপশনের লেনদেন চালু করা, ইটিএফ প্রচলন করা, ওপেন অ্যান্ড মিউচুয়াল ফান্ড তালিকাভুক্ত করা ইত্যাদি।
সার্বিক পুঁজিবাজারের উন্নয়নে অনেকগুলো বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়েছে এ বাজেটে।