শান্তিরক্ষীরা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি সমুজ্জ্বল করেছেন —প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ শান্তি নিরাপত্তা রক্ষা এবং শান্তির সংস্কৃতি বিনির্মাণে অবদান রেখে চলেছে। সংঘাতপ্রবণ দেশগুলোতে শান্তি প্রতিষ্ঠা শান্তি বজায় রাখতে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা জীবনের ঝুঁঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। আমাদের শান্তিরক্ষীরা যে মিশনেই গেছেন, সেখানে জাতিসংঘের পতাকাকে সমুন্নত উড্ডীন রাখার পাশাপাশি বাংলাদেশের ভাবমূর্তি সমুজ্জ্বল করেছেন।

গতকাল সেনাকুঞ্জে আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস-২০২১-এর অনুষ্ঠানে দেয়া ভাষণে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। সময় দক্ষিণ সুদান, কঙ্গো, সেন্ট্রাল আফ্রিকা রিপাবলিক লেবাননে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী কন্টিনজেন্টের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে মতবিনিময়ও করেন সরকারপ্রধান। অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী . কে আব্দুল মোমেন, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি মিয়া সেপ্পো বক্তব্য রাখেন। মিয়া সেপ্পো অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের একটি বার্তাও পড়ে শোনান।

প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া গণভবন প্রান্তে এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, নৌবাহিনী বিমান বাহিনী প্রধানআইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন সামরিক বেসামরিক কর্মকর্তা, সাবেক সশস্ত্র বাহিনী পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, আমন্ত্রিত দেশী-বিদেশী অতিথিরা সেনাকুঞ্জে উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার সব থেকে ভালো লাগে যেখানে যেখানে আমাদের শান্তিরক্ষীরা কাজ করেছেন সেই দেশের সরকার রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে যখনই কোনো আন্তর্জাতিক ফোরামে দেখা হয়েছে, আমাদের শান্তিরক্ষীদের তারা ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। গর্বে বুক আমার ভরে গেছে। যে সম্মানটা আমরা পেয়েছি, সেটা ধরে রেখেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। জাতির পিতা যে আদর্শ নিয়ে দেশ স্বাধীন করে গেছেন, সেই আদর্শ নিয়েই আমরা দেশ পরিচালনা করছি। ইনশা আল্লাহ বাংলাদেশ সারা বিশ্বে উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসেবেই গড়ে উঠবে।

বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ প্রস্তুত রয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অধীনে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সদা প্রস্তুত। জাতিসংঘকে এটা আমি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে চাই। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের সশস্ত্র বাহিনী পুলিশ বাহিনীর তরুণ সদস্যরা একুশ শতকের বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছেন। আগামীতেও যারা আসবেন তাদের আমরা সেভাবেই তৈরি করতে চাই।

সরকারপ্রধান বলেন, মুহূর্তে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় নিয়োজিত ১২২টি দেশের ৮০ হাজার ১৮৪ জন শান্তিরক্ষীর মধ্যে হাজার ৭৪২ জন বাংলাদেশের। সংখ্যা বিশ্বে নিয়োজিত মোট শান্তিরক্ষীর দশমিক ৪০ শতাংশ, যা আমাদের জন্য অত্যন্ত গৌরবের। এছাড়া বর্তমানে বাংলাদেশের ২৮৪ জন নারী শান্তিরক্ষী বিশ্ব শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নিয়োজিত আছেন। বিশেষ করে আমার নারী পাইলটদের নিয়ে আমি খুব গর্ববোধ করি। সব জায়গায়ই এখন নারীদের একটা ভালো সুযোগ রয়েছে তারা সাফল্য দেখাচ্ছেন। কাজেই আমি আমাদের মেয়েদেরও অভিনন্দন জানাই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের শান্তিরক্ষীরা ৪০টি দেশে ৫৫টি ইউএন মিশন সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে আটটি মিশনে আমাদের শান্তিরক্ষীরা নিয়োজিত আছেন। এছাড়া দক্ষিণ সুদানে ডেপুটি ফোর্স কমান্ডার হিসেবে মেজর জেনারেল পদবির কর্মকর্তা এবং কঙ্গো, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক দক্ষিণ সুদানে সেক্টর কমান্ডার হিসেবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদবির কর্মকর্তা নিযুক্ত রয়েছেন। তাদের দক্ষতার কারণেই তারা পদ পেয়েছেন।

সরকারপ্রধান আরো বলেন, জাতির পিতার জন্মশতবর্ষ আমাদের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে আমরা এক নম্বর শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে গৌরবের ৩৩ বছর উদযাপন করছি। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে ৩৩ বছর ধরে বাংলাদেশের প্রত্যেক শান্তিরক্ষী ত্যাগ-তিতিক্ষা গর্বের সঙ্গে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সফলতার সঙ্গে পালন করে বিশ্বশান্তি রক্ষায় অনেক গৌরবময় অবদান রেখে যাচ্ছেন।

কভিড-১৯ মানুষকে ভীষণ কষ্ট দিচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের যারা শান্তিরক্ষী রয়েছেন সবাইকে আমি বলব সময় খুব শান্ত ধীরস্থিরভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে। কারণ সব দেশেই একটা অসহিষ্ণুতা, অনিশ্চয়তা দেখা দিচ্ছে। আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে। আর আমরা যে শান্তির সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করি, সে কথা সবসময় মনে রাখতে হবে।

চলমান করোনা পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের অনেক উন্নত দেশ যেখানে হিমশিম খাচ্ছে, কিন্তু বাংলাদেশে সবাই যাতে নিরাপদ থাকতে পারে করোনাভাইরাসের কারণে যাতে বেশি প্রাণহানি না হয় বা প্রাদুর্ভাব বেশি না ছড়ায় তার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি আর্থসামাজিক কর্মকাণ্ড যেন স্থবির না হয়ে যায়, সেদিকে লক্ষ রেখেই বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে সফলতার সঙ্গে তা এগিয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উন্নীত হয়েছে।

অনুষ্ঠানে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, জনগণের মাথাপিছু আয় বেড়েছে, খাদ্যের সঙ্গে জনগণের পুষ্টি চাহিদা মেটানোর চেষ্টা চলছে। করোনার কারণে শিক্ষাক্ষেত্রে যে সমস্যা চলছে তা দূর করতেও পদক্ষেপ নেয়া হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতি করা, দারিদ্র্য দূর করা, বর্তমান ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য তাদের শিক্ষা-দীক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা থেকে শুরু করে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা ব্যাপকভাবে করা এবং তাদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলাটাই আমাদের কাজ।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন