বেআইনিভাবে ৩৯ আফগানকে হত্যা করেছে অস্ট্রেলীয় সেনারা: তদন্ত প্রতিবেদন

বণিক বার্তা অনলাইন

তালিবানসহ আফগান মিলিশিয়াদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশের সৈন্যদের যুদ্ধ চলার সময় অস্ট্রেলিয়ার এলিট ফোর্স কর্তৃক বেআইনিভাবে ৩৯ জন বেসামরিক মানুষকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। এই অভিযোগের সাপেক্ষে ‘নির্ভরযোগ্য প্রমাণ’ খুঁজে পেয়েছে অস্ট্রেলিয়ান কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।

নিজেদের সৈন্যদের করা অন্যায়ের ঘটনা নিয়ে তদন্ত করেছিল খোদ অস্ট্রেলিয়ান ডিফেন্স ফোর্স (এডিএফ)। চার বছরের দীর্ঘ এই অনুসন্ধান শেষে জানানো হল, হত্যাগুলো ছিল সম্পূর্ণ বেআইনি। 

এই অনুসন্ধানে মোট ৫৭টি ঘটনার তদন্ত করা হয় এবং তিনশরও বেশি মানুষের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। অনুসন্ধান পরিচালিত হয় মেজর জেনারেল বিচারপতি পল ব্রেরেটনের নেতৃত্বে। অভিযোগের সত্যতা মেলায় এ ঘটনাকে ‘যুদ্ধ সংস্কৃতি’র জন্য ‘লজ্জাজনক রেকর্ড’ হিসেবে অভিহিত করেন এডিএফ প্রধান জেনারেল অ্যাঙ্গাস ক্যাম্পবেল। তিনি আফগানিস্তানের জনগণের সঙ্গে এমন আচরণের জন্য ‘আন্তরিক ও অকপটে’ ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। 

আজ বৃহস্পতিবার ক্যানবেরায় এক সংবাদ সম্মেলনে অস্ট্রেলিয়ান প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান বলেন, এটা আফগান পরিবার ও সম্প্রদায়ের জীবনকে ধ্বংস করে দিয়েছিল এবং অপরিমেয় ব্যথা ও যন্ত্রণার জন্ম দিয়েছিল। 

অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষা বাহিনী সুপারিশ করেছে, ২০০৯ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে আফগানিস্তানে বেসামরিক মানুষদের হত্যা ও তাদের সঙ্গে অমানবিক আচরণসহ ৩৬টি যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের বিষয়ে অস্ট্রেলিয়ান স্পেশাল ফোর্সেসের ১৯ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত করা উচিত। অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেল পুলিশকে এ তদন্তভার দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। 

ক্যাম্পবেল বলেন, অভিযোগ অনুযায়ী বেআইনিভাবে হত্যার শিকার হওয়াদের মধ্যে রয়েছেন বন্দী, কৃষক ও অন্যান্য বেসামরিক মানুষ। এই লজ্জাজনক রেকর্ডের মধ্যে উদাহরণ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, রক্তপাত হিসেবে পরিচিত এই ভয়াবহ প্রক্রিয়ায় নতুন টহল সদস্যরা একজন সৈন্যের প্রথম হত্যা সম্পূর্ণ করতে একজন বন্দীকে গুলি করতে বাধ্য করেছিল। তদন্তের জন্য ১৪৩টি সুপারিশের সবগুলোই গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ক্যাম্পবেল।

২০০৫ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে মেজর জেনারেল পল ব্রেইটনের নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়ান বিশেষ বাহিনী আফগানিস্তানে সশস্ত্র সংঘাতের আইন লঙ্ঘন করার অভিযোগ উঠলে দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনী ২০১৬ সালের মার্চে তদন্ত কমিটি গঠন করে। 

আফগানিস্তানের যুদ্ধে অস্ট্রেলিয়ার ভূমিকা দুটি পৃথক ধাপে বিভক্ত ছিল। আফগান সুরক্ষা বাহিনী বেশিরভাগ লড়াইয়ের দায়িত্ব নেয়ার পর ২০০১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত অপারেশন স্লিপার এবং এরপর ২০১৫ সালে শুরু হওয়া অপারেশন হাইরোড। 

অপারেশন স্লিপার চলাকালীন ২৬ হাজারেরও বেশি অস্ট্রেলিয়ান সেনা আফগানিস্তানে নিযুক্ত ছিলেন। তাদের মধ্যে যুদ্ধে ৪১ জনের মৃত্যু হয়েছিল। প্রতিরক্ষা বাহিনীর ওয়েবসাইট অনুসারে বর্তমানে আফগানিস্তানে অস্ট্রেলিয়ান প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রায় ৮০ জন কর্মী রয়েছেন। তাদের বেশিরভাগই সমর্থন ও প্রশিক্ষণের সঙ্গে জড়িত। দেশটিতে সবমিলিয়ে প্রায় এক হাজার অস্ট্রেলিয়ান সৈন্য মোতায়েন রয়েছে। 

আফগান সরকারের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, বিষ্ফোরক এই প্রতিবেদন প্রকাশের কয়েক ঘণ্টা আগে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। আফগানিস্তানে নিযুক্ত অস্ট্রেলিয়ান সৈন্যদের এমন আচরণের জন্য তিনি প্রেসিডেন্টের কাছে গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন। মরিসন আফগান প্রেসিডেন্টের কাছে ঘটনাগুলোর তদন্ত ও ন্যয়বিচার নিশ্চিত করার আশ্বাস দিয়েছেন।


সূত্র : বিবিসি ও সিএনএন

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন