ভ্যাটের হিসাবপত্র ছাড়াই ব্যবসা চালাচ্ছে ‘মি. বেকার’

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভ্যাট আইন অনুসারে রেকর্ডপত্র সংরক্ষণ না করে এবং ভ্যাট আইন লংঘন করে রাজধানীতে ৩৪টি বিক্রয়কেন্দ্রে ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছে মি. বেকার কেক অ্যান্ড পেস্ট্রি শপ লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটিকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ উল্লেখ করে ব্যাংক হিসাব তলব করেছে ভ্যাট গোয়েন্দা। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক হিসাব অপরিচালনযোগ্য (ফ্রিজ) করা হয়েছে।

গত মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) ভ্যাট গোয়েন্দা দল গাজীপুর ও টঙ্গীতে প্রতিষ্ঠানটি পেস্ট্রি ও সুইটমিট শাখার আলাদা প্রধান কার্যালয় ও কারখানায় অভিযান চালিয়ে ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পেয়েছে। ভ্যাট গোয়েন্দা বলছে, প্রতিষ্ঠানটির রাজধানীতে পেস্ট্রি শপের ২৯টি ও সুইটমিটের ৫টি বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে। এর দুটি প্রধান কার্যালয়ে (যেখানে তাদের কারখানাও রয়েছে) অভিযান চালিয়ে গোয়েন্দা দল ব্যাপক ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পেয়েছে। অধিকতর তদন্তের জন্য ‘মি. বেকার’ এর ব্যাংক অ্যাকাউন্টের লেনদেনের হিসাব তলব করা হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর থেকে টঙ্গীর ঢাকা ব্যাংক, কামারপারা শাখা ও সাউথইস্ট ব্যাংকে এ সংক্রান্ত নোটিশ ইস্যু করা হয়েছে। 

ভ্যাট গোয়েন্দা জানায়, অভিযান দুটিতে নেতৃত্ব দেন ভ্যাট গোয়েন্দার উপ-পরিচালক নাজমুন নাহার কায়সার,  ফেরদৌসি মাহবুব ও জনাব তানভীর আহমেদ। এসময় দেখা যায়, মি. বেকারের পেস্ট্রি শপের ভ্যাট নিবন্ধন নং: ০০০৯৬৪৬৮২ -০১০২। অন্যটির ভ্যাট নিবন্ধন নং: ০০১১৪৬১৭৭-০১০৩ । প্রতিষ্ঠান দুটো ঢাকা উত্তর ভ্যাট কমিশনারেটে কেন্দ্রীয়ভাবে নিবন্ধিত।

জানা গেছে, সম্প্রতি অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিব আসিফ জামান রাজধানীর উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের ৪ নম্বর রোডে অবস্থিত ‘মি বেকার’ এর বিক্রয়কেন্দ্র থেকে পণ্য ক্রয় করেন। এসময় তিনি রিসিটে অনিয়ম পেলে গত ১৮ অক্টোবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে পোস্ট দেন। এখানে তিনি এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের কাছে প্রতিকার চেয়ে উল্লেখ করেন, ভোক্তারা ভ্যাট দিলেও তা সরকার পাচ্ছে না। ওই কেন্দ্রটিতে ভ্যাট কর্তন করে একটা কাঁচা চালান দিয়ে ক্রেতাকে বুঝিয়ে দেয়া হয়।

এই অভিযোগ ও আরো গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এনবিআরে চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম অভিযোগটির তদন্ত করার জন্য ভ্যাট গোয়েন্দাকে নির্দেশ দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভ্যাট গোয়েন্দা দলের আকস্মিক পরিদর্শনকালে প্রতিষ্ঠান দুটোতে ভ্যাট আইনের বাধ্যবাধকতা অনুসারে ক্রয় হিসাব পুস্তক (মূসক-৬.১) ও বিক্রয় হিসাব পুস্তক (মূসক-৬.২) পাওয়া যায়নি। ভ্যাট আইন অনুযায়ী উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এই দুটো হিসাব সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

পরিদর্শনকালে ভ্যাট সংক্রান্ত অন্যান্য দলিলাদি দেখাতে বলা হলে, উপস্থিত মালিকপক্ষ তা দেখাতে পারেননি এবং এগুলো সংরক্ষণ না করার বিষয়ে তারা কোন সদুত্তরও দিতে পারেননি। ভ্যাট গোয়েন্দাদের অভিযানের আশঙ্কায় প্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গনে মালিকপক্ষ নিজস্ব বাণিজ্যিক দলিলাদিও রাখেন না বলে জানিয়েছে ভ্যাট গোয়েন্দা।

ভ্যাট গোয়েন্দার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এতে ভ্যাট গোয়েন্দা দলের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে নিজস্ব মনগড়া হিসাবের ভিত্তিতে ‘মি. বেকার’ স্থানীয় ভ্যাট সার্কেলে রিটার্ন দাখিল করে আসছে। একইসাথে, তারা ভোক্তাদের নিকট থেকে সংগ্রহ করা ভ্যাট সরকারি কোষাগারে যথাযথভাবে জমা দেননি। 

অভিযানের এক পর্যায়ে গোয়েন্দা দল প্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গনে অবস্থিত অন্য একটি ভবনের বিভিন্ন তলায় ও ছাদে অবস্থিত কর্মচারীদের থাকার কক্ষ তল্লাশি করে তাদের পুরোনো কিছু অসংগঠিত তথ্যাদি পাওয়া যায়।গোয়েন্দা দল সেখান থেকে এসব কাগজপত্র জব্দ করে।

পাশাপাশি, ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরের আরেকটি দল উত্তরায় মি. বেকারের ওই বিক্রয়কেন্দ্রটি পরিদর্শন করেন। কর্মকর্তারা প্রথমে পরিচয় গোপন করে পণ্য ক্রয় করে দেখতে পান যে, এই বিক্রয়কেন্দ্রটি মূসক চালান (মূসক-৬.৩) ব্যতীত পণ্য বিক্রি করছে। এখানে তারা অভিযোগকারী অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিবের অভিযোগের সত্যতা পান। 

একইসাথে, গোয়েন্দা দল ২১ অক্টোবর বেইলি রোডে অবস্থিত ‘মি. বেকার’ এর দুটো বিক্রয়কেন্দ্র থেকে পণ্য ক্রয় করেও দেখতে পান যে, তারা মূসক চালান ছাড়াই পণ্য সরবরাহ করছে। এতে প্রমাণিত হয় ভ্যাট আইন অনুসারে রেকর্ডপত্র সংরক্ষণ না করে এবং ভ্যাট আইন লংঘন করে প্রতিষ্ঠানটি ৩৪টি বিক্রয়কেন্দ্রে ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছে।

প্রতিষ্ঠানের কারখানা ও বিক্রয়কেন্দ্রে ভ্যাট চালান ব্যতীত পণ্য সরবরাহ ও বিক্রয় করায় ‘মি. বেকার’-কে ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচনা করে আজ প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে।একইসাথে, প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব সাময়িকভাবে অপরিচালনযোগ্য করা হয়েছে। অভিযানে জব্দকৃত দলিলাদি ও ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত দলিলাদির ভিত্তিতে ভ্যাট ফাঁকির পরিমাণ নির্ণয় ও অন্যান্য আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছে ভ্যাট গোয়েন্দা

একইসাথে, ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে অভিযুক্ত ‘মি. বেকার’ এর যাবতীয় উৎপাদন, সরবরাহ ও বিক্রয় সরাসরি তত্ত্বাবধান করার জন্য সংশ্লিষ্ট ঢাকা উত্তর কমিশনারেটের নিকট সুপারিশ করা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন