যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে রোহিঙ্গা অর্থায়ন নিয়ে বৈঠক আজ

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে রাখাইন থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য প্রতি বছর জয়েন্ট রেসপন্স প্লান (জেআরপি) প্রস্তুত করে আসছে জাতিসংঘ। তবে কোনো বছরই গড় চাহিদার ৭০ শতাংশের বেশি অর্থ জোগাড় করা সম্ভব হয়নি। চলতি বছর চিত্র আরো খারাপ। ফলে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অর্থায়নের বিষয়টিতে এগিয়ে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র। আজ সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে রোহিঙ্গা অর্থায়ন নিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে আমন্ত্রণ পেয়েছে বাংলাদেশ।

জাতিসংঘের নেতৃত্বে জেআরপিতে পুরো বছরটিতে স্থানীয় জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের সার্বিক চাহিদার বিষয়টি বিবেচনা করে একটি বাজেট তৈরি করা হয়। তার ভিত্তিতে বিশ্বের দাতাদের কাছ থেকে অর্থায়ন চেয়ে আসছিল জাতিসংঘ। তবে চলতি বছর এখন পর্যন্ত মোট চাহিদার ৫০ শতাংশের কম অর্থ জোগাড় করতে পেরেছে সংস্থাটি। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) জাতিসংঘকে নিয়ে রোহিঙ্গা অর্থায়ন নিশ্চিতে আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যায় একটি ভার্চুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকের নাম দেয়া হয়েছে ডোনার কনফারেন্স ফর রোহিঙ্গা রেফিউজি

এদিকে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে, চলতি বছরে রোহিঙ্গা অর্থায়নে একটি নাটকীয় ঘাটতির সম্মুখীণ হয়েছে। এখন পর্যন্ত অর্ধেকেরও কম অর্থায়ন জোগাড় করা সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক চাহিদা পূরণের জন্য ২০২০ সালে জাতিসংঘ ১০০ কোটি ডলারের বেশি অনুদান চেয়েছিল। এর সঙ্গে কভিড-১৯ মহামারী ছড়িয়ে পড়ায় চ্যালেঞ্জে নতুন মাত্রা যোগ করে। ডোনার কনফারেন্স ফর রোহিঙ্গা রেফিউজি-এর মাধ্যমে শক্ত আন্তর্জাতিক সহযোগিতা আশা করছে ইউএনএইচসিআর।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে থাকলেও বৈঠকের বিষয়ে বাংলাদেশকে অনেক পরে জানানো হয়েছে। পুরো বৈঠকটি ঠিক করতে বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো পরামর্শ নেয়া হয়নি। বরং বাংলাদেশকে প্রক্রিয়ায় না রেখে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এতে আগামী ১০ বছর রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তায় কোন দেশ কীভাবে কত খরচ করবে তা নিয়ে আলোচনা করা হবে। ধরনের দীর্ঘমেয়াদি কোনো পরিকল্পনা নিয়ে মোটেও আগ্রহী নয় বাংলাদেশ। কারণ রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের মূল অবস্থান হলো দ্রুত প্রত্যাবাসন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে বলেন, বৈঠকের বিষয়ে শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র শুধু মুখে বলে দিয়েছে। বৈঠকে যোগ দিতে বাংলাদেশ জানতে চেয়েছে কী নিয়ে আলাপ করা হবে নিয়ে আমাদের পূর্ণাঙ্গ তথ্য দিতে হবে। সেটি জানার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অনুরোধ করা হয়েছে। আর রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে শুধু বাংলাদেশকে ডেকে লাভ নেই। মিয়ানমারকেও বৈঠকে ঢাকতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে বৈঠকে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে দেশটির স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চিকে বৈঠকে চাওয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা দেশের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, অঞ্চলের দেশগুলোকে রোহিঙ্গাদের দায়িত্ব নিতে হবে। তবে এটি শুধু কথার মধ্যেই রয়েছে। অঞ্চলের কোনো দেশ এখনো রোহিঙ্গাদের দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নেয়নি। রোহিঙ্গারা যখন সাগড় পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করে, তখন প্রতিবারই তাদের ঠেলে বাংলাদেশের দিকে পাঠিয়ে দেয়া হয়। অন্য দেশের উপকূলীয় সীমান্তে থাকলেও পুরো দায়িত্বটিই বাংলাদেশের কাঁধে চাপানো হয়। সেই সঙ্গে নিয়ে পশ্চিমা দাতা সংস্থাদের চাপ বিবৃতি তো থাকেই। তাদের কথা হচ্ছে অঞ্চলের মধ্যেই রোহিঙ্গারা থাকলে ভালো। তবে বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান হচ্ছে রোহিঙ্গা সংকট শুধু আঞ্চলিক নয়, বৈশ্বিক ইস্যু। এতে সবার এগিয়ে আসা উচিত।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন