ভিয়েতনামের পর ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে জাপান

বণিক বার্তা ডেস্ক

ভিয়েতনামের সঙ্গে অর্থনৈতিক রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের পর এবার ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের পথে এগোচ্ছে জাপান। দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশটিতে প্রতিরক্ষা প্রযুক্তিসামগ্রী রফতানিতে আলোচনা এগিয়ে নেয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন জাপানের সদ্য নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ইওশিহিদে সুগা। চীনের আঞ্চলিক আগ্রাসী নীতির বিরুদ্ধে মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক সুসংহত করার অংশ হিসেবে শিগগিরই উভয় পক্ষের প্রতিরক্ষা পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। খবর রয়টার্স।

জাপানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথমবারের মতো বিদেশ সফরে বেরিয়েছেন সুগা। চারদিনের জন্য ভিয়েতনাম ইন্দোনেশিয়া সফর করছেন তিনি। এর মাধ্যমে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ দুটি দেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারকরতে চাইছেন তিনি।

জাকার্তার বোগোর প্রাসাদে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইডোডোর সঙ্গে বৈঠক শেষে সুগা বলেন, পরিবর্তিত আঞ্চলিক পরিস্থিতি বিবেচনায় দুই দেশের মধ্যে নিরাপত্তা প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিশ্চিতে শিগগিরই আমাদের প্রতিরক্ষা পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে সম্মেলন করা হবে। নিজেদের মধ্যে প্রতিরক্ষাসামগ্রী প্রযুক্তি হস্তান্তর সহজ করার জন্য আলোচনা করবে তারা।

যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট উইডোডো বলেন, বিশ্বের বৃহৎ দুই শক্তির মধ্যে তীব্র বিরোধের মধ্যে জাকার্তা টোকিওর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক খুবই গুরুত্ব বহন করে।

এর আগে সামরিক যন্ত্রপাতি প্রযুক্তি হস্তান্তরে সোমবার নীতিগতভাবে একমত হয়েছেন সুগা এবং ভিয়েতনামের প্রধানমন্ত্রী এনগুইয়েন হুয়ান ফুক। অবশ্য নিরাপত্তা ইস্যু মাথায় রাখার পাশাপাশি বেইজিংয়ের সঙ্গে গভীর অর্থনৈতিক সম্পর্কের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে হচ্ছে সুগাকে। দক্ষিণ চীন সাগরের বিতর্কিত অনেক দ্বীপে বেইজিংয়ের উপস্থিতি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জন্য উদ্বেগের কারণ হিসেবে দাঁড়িয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সময় বেইজিংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক কিছুটা উষ্ণ হলেও বর্তমানে ক্ষমতাসীন দলের অনেকেই সুগাকে কঠিন পথ গ্রহণ করার জন্য চাপ দিচ্ছেন।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশের মতো ইন্দোনেশিয়াও তাদের বৃহৎ বাণিজ্যিক অংশীদার চীনের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপে উত্কণ্ঠিত। অর্থনৈতিক সামরিকভাবে কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ দক্ষিণ চীন সাগরে কোনো দাবি না থাকলেও জলপথের কিছু অংশকে নিজেদের বিবেচনা করে ইন্দোনেশিয়া। ওই জলসীমা থেকে নিয়মিতই চীনা কোস্টগার্ডকে বিতাড়িত করছে ইন্দোনেশিয়া। তবে আঞ্চলিক পরাশক্তির সঙ্গে কিছুটা টানাপড়েন থাকলেও সেখানে মার্কিন হস্তক্ষেপ প্রত্যাখ্যান করেছে জাকার্তা। চলতি বছরে যুক্তরাষ্ট্রের পি- পসেইডান মেরিটাইম নজরদারি বিমানের অবতরণ জ্বালানি সংগ্রহের প্রস্তাব গ্রহণ করেনি তারা। যুক্তরাষ্ট্র চীনের বিরোধের মধ্যে কোনো পক্ষে অবস্থান নিতে চাইছে না ইন্দোনেশিয়া।

এদিকে সুগার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সফর সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন কয়েক দিন আগে চার দেশের অনানুষ্ঠানিক গ্রুপ কোয়াডের সম্মেলনের আয়োজন করেছে টোকিও। চীনের সম্প্রসারণ নীতির বিরুদ্ধে ভারত, অস্ট্রেলিয়া, জাপান যুক্তরাষ্ট্রের জোট কোয়াড হিসেবে পরিচিত।

গত সোমবার কোয়াডের তরফ থেকে জানানো হয়, আগামী মাসে বঙ্গোপসাগরে নৌমহড়ায় যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ভারতের সঙ্গে অংশ নেবে অস্ট্রেলিয়া। ধরনের মহড়ার সমালোচনা করে চীন বলছে যে তা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করবে। চার দেশের যূথবদ্ধতার সমালোচনায় বেইজিং আরো অভিযোগ তুলছেচীনের অব্যাহত অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ঠেকাতেই তারা একত্র হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথমেই ভিয়েতনাম ইন্দোনেশিয়া সফরের মাধ্যমে সুগা ইঙ্গিত দিচ্ছেন যে তিনি জাপানের সাপ্লাই চেইনে বৈচিত্র্য আনতে এবং এক্ষেত্রে চীনের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা কমাতে চাইছেন। কারখানা কার্যক্রম নিজ দেশে বা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় স্থানান্তরের পরিকল্পনাও এখানে কাজ করছে।

ইন্দোনেশিয়ায় জাপানি কোম্পানির বিনিয়োগ বৃদ্ধির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন প্রেসিডেন্ট জোকোবি। জাপানের প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দেন ইন্দোনেশিয়াকে স্বল্প সুদে হাজার কোটি ইয়েন দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেবে টোকিও।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন