ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজের পর ভারতে কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা অ্যামনেস্টির

বণিক বার্তা অনলাইন

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ‘ফ্রিজ’ করেছে ভারত সরকার। এই পরিস্থিতিতে দেশটিতে সব ধরনের কার্যক্রম স্থগিত করেছে এ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। ভারতের সব কর্মীকেও ছাঁটাই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে। 

ভারতে কোনো সংস্থা বিদেশী অনুদান নিতে চাইলে বিদেশী অনুদান (নিয়ন্ত্রণ) আইনে নথিবদ্ধ হওয়া বাধ্যতামূলক। নরেন্দ্র মোদি সরকারের অভিযোগ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সেটি করেনি। এছাড়া অলাভজনক প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা ফরেন ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট (এফডিআই) বা প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগের চ্যানেলে বিদেশী অর্থ নিতে পারে না। অ্যামনেস্টি সেটাও করেছে বলে অভিযোগ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। এ কারণেই তাদের অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এমনটাই জানানো হয়েছে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে আজ মঙ্গলবার বিবৃতি দিয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, অ্যামনেস্টির ভারতের সব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে দিয়েছে সরকার। সেটা আমরা জানতে পেরেছি গত ১০ সেপ্টেম্বর। বাধ্য হয়ে সংস্থার সমস্ত কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। ভারতের সব কর্মীকেও বসিয়ে  দিয়ে সমস্ত প্রচার ও গবেষণার কাজ বন্ধ করে দিতে তারা বাধ্য হয়েছেন বলেও বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।

ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দাবি, অলাভজনক সংস্থা হয়েও এফডিআইয়ের মাধ্যমে বিদেশী অনুদান নেয়ার অভিযোগে ২০১৭ সালে অ্যামনেস্টির ভারতে থাকা বেশ কিছু অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে দিয়েছিল ইডি। তারা আদালতের দ্বারস্থ হলেও অ্যাকাউন্ট খোলেনি। তার ওপর সম্প্রতি মামলা দায়ের করেছে সিবিআই। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়াই ব্রিটেন থেকে আসা ১০ কোটি এবং ২৬ কোটি রুপির দুটি অনুদান গ্রহণের অভিযোগে এই মামলা এবং তার জেরে অ্যাকাউন্ট ফ্রিজের সিদ্ধান্ত।

তবে ভারত সরকারের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে অ্যামনেস্টি বলছে, ভারত সরকারের ক্রমাগত মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে অপদস্থ করার অপচেষ্টার এটা শেষ নিদর্শন। প্রমাণ হয়নি এমন অভিযোগ এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগের ভিত্তিতেই সরকার এই ব্যবস্থা নিয়েছে।

গত বছরের আগস্টে ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপ করে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা রহিত করার পর উপত্যকায় কেন্দ্রের কঠোর নিয়ন্ত্রণ জারি করা হয়। মোবাইল, ল্যান্ডলাইন, ইন্টারেন্ট, কেবল টিভিসহ যাবতীয় পরিষেবা বন্ধ করে দেয় কেন্দ্র সরকার। এতে জম্মু কাশ্মীরের নাগরিকদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে সরকারের সমালোচনা করে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। আবার এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে দিল্লিতে সহিংসতার সময়ও একই অবস্থান ছিল সংস্থার। 

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইন্ডিয়ার এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর অবিনাশ কুমার বলেন, দু’বছর ধরে ভারতে অ্যামনেস্টির কাজকর্মে বাধাদানের চেষ্টা চলছে। অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়। দ্ব্যর্থহীন ভাষায় সরকারের নানা অনৈতিক ও অমানবিক কাজকর্মের সমালোচনা করার জন্যই ইডিসহ সরকারের নানা সংস্থার মাধ্যমে হেনস্থা করা হচ্ছে। সাম্প্রতিককালে দিল্লি সংঘর্ষে তার আগে জম্মু-কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। অ্যামনেস্টি শুধু অবিচারের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছিল। তার জন্য অ্যাকাউন্ট ফ্রিজের মতো ব্যবস্থা নেয়া অনুচিত।

সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন