হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর ইন্তেকাল

নিজস্ব প্রতিবেদক চট্টগ্রাম ব্যুরো

হেফাজতে ইসলামের আমির চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার আল-জামিয়াতুল তাহলিমা দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসার সাবেক মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফী আর নেই (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন আল্লামা শফী। বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ প্রবীণ আলেম আল্লামা আহমদ শফীর মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোক প্রকাশ করেছেন।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, আজ ফজরের পর থেকে জোহর নামাজ পর্যন্ত হাটহাজারী মাদ্রাসায় মরহুমের লাশ শেষ দেখার জন্য রাখা হবে। বেলা ২টায় হাটহাজারী মাদ্রাসা মাঠে আহমদ শফীর জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। জানাজা শেষে মাদ্রাসা ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে বায়তুল আতিক জামে মসজিদ সম্মুখস্থ কবরস্থানে মরদেহ দাফন করা হবে। জানাজায় ইমামতি করবেন আল্লামা শফীর ছেলে আনাস মাদানী।

গত ১৬ সেপ্টেম্বর আহমদ শফীর হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে পদত্যাগ এবং তার ছেলে আনাস মাদানীকে মাদ্রাসা থেকে বহিষ্কারসহ পাঁচ দফা দাবি নিয়ে দারুল উলুম হাটহাজারীর ছাত্ররা আন্দোলন শুরু করে। দুপুর থেকে আন্দোলন শুরু হয়, রাত্রে আনাস মাদানীকে বহিষ্কার করা হয় এবং ১৭ সেপ্টেম্বর আহমদ শফী স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন। পদত্যাগের পর পরই বৃহস্পতিবার আল্লামা শফীর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। পরে শুক্রবার তাকে ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ জানান, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ থেকে শফী হুজুরকে শুক্রবার হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় এনে সন্ধ্যার আগে আগে আজগর আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে ভর্তির পর পরই তিনি ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল প্রায় ১০৪ বছর। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসকষ্টসহ বার্ধক্যজনিত দুর্বলতায় ভুগছিলেন। কয়েকদিন আগেও তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে ঢাকায় চিকিৎসার জন্য আনা হয়েছিল।

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পাখিয়ারটিলা গ্রামে ১৯১৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন শাহ আহমদ শফী। তার বাবার নাম বরকম আলী, মা মোছাম্মাৎ মেহেরুন্নেছা বেগম। আহমদ শফী দুই ছেলে তিন মেয়ের জনক। শফীর শিক্ষাজীবন শুরু হয় রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটা মাদ্রাসায়। এরপর পটিয়ার আল জামিয়াতুল আরাবিয়া মাদ্রাসায় (জিরি মাদ্রাসা) লেখাপড়া করেন। ১৯৪১ সালে তিনি হাটহাজারীর দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসায় ভর্তি হন। ১৯৫০ সালে তিনি ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসায় যান, যেখানে চার বছর লেখাপড়া করেন। ১৯৮৬ সালে হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক পদে যোগ দেন আহমদ শফী। এর পর থেকে টানা ৩৪ বছর ধরে তিনি ওই পদে ছিলেন। তিনি ২০০৮ সালে কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড-বেফাকের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি দারুল উলুম হাটহাজারী মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ওলামা সম্মেলনে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ গঠন করা হয়। তিনিই এর প্রতিষ্ঠাতা আমির মনোনীত হন।

তবে ২০১১ সালে নারী উন্নয়ন নীতিমালার বিরোধিতা করে চট্টগ্রামে কর্মসূচি ডাক দিয়ে আলোচনায় আসেন আহমদ শফী। পরে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে ২০১৩ সালে গণজাগরণ আন্দোলন শুরুর পর তার বিরোধিতায় হেফাজতে ইসলামকে নিয়ে মাঠে নেমে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আবারো আলোচনায় আসেন তিনি। আল্লামা শাহ আহমদ শফীর নেতৃত্বে ১১ এপ্রিল ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসের সনদকে এমএ-এর (আরবি-ইসলামিক স্টাডিজ) সমমান ঘোষণা করেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন