নারায়ণগঞ্জে বিস্ফোরণে আহত অর্ধশতাধিক

মসজিদটির ছয়টি এসির কোনটাই অক্ষত নেই

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, নারায়ণগঞ্জ

নারায়ণগঞ্জের বায়তুল সালাহ জামে মসজিদের ছয়টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের (এসি) প্রত্যেকটিতেই বিস্ফোরণের চিহ্ন পাওয়া গেছে। শুক্রবার (৪ সেপ্টেম্বর) এশার নামাজের সময় নারায়ণগঞ্জ শহরের তল্লা জেমস ক্লাব এলাকার এই মসজিদটিতে বিস্ফোরণ ঘটে অর্ধশতাধিক মুসল্লি দগ্ধ হয়েছেন। এদের মধ্যে অন্তত ৪০ জনের অবস্থা গুরুতর, যাদের অধিকাংশই দগ্ধ বলে জানা গেছে।

ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা প্রাথমিক অনুসন্ধানের পর ধারণা করছেন, মসজিদের ভেতরের এসি বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট হয়ে বিস্ফোরণ ও মসজিদের ভেতর দিয়ে যাওয়া গ্যাস লাইনের লিকেজ থেকে এ দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। নারায়ণগঞ্জ ফায়ার ব্রিগেডের উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফিন বলেন, প্রাথমিক তথ্যে আমরা ধারণা করছি মসজিদের নিচ দিয়ে যাওয়া গ্যাস লাইনের লিকেজের কারণে মসজিদের ভেতরে গ্যাস জমে যায়। এসময় এসিতে শর্ট সার্কিট হয়ে মসজিদের ভেতরে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। তবে ঘটনার আসল কারণ আরো অনুসন্ধানের পর নিশ্চিত করে বলা যাবে।

দুর্ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, মসজিদের ভেতরে স্যাঁতসেঁতে পানি, তাতে মিশে আছে রক্ত। মসজিদ জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে জানালার ভাঙা কাঁচ। মসজিদের শীততাপ নিয়ন্ত্রিত অংশের সাথে বাইরের অংশ যে ‘থাই গ্লাস’ দিয়ে আলাদা করা হয়েছিলো সেটির ফ্রেম দুমরে-মুচরে রয়েছে। মসজিদের দেয়ালের কোনো কোনো অংশের টাইলস ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে নিচে পড়ে রয়েছে। অনেক জায়গায় ছড়িয়ে আছে দগ্ধদের কাপড়। মসজিদের ছয়টি এসির একটিও অক্ষত নেই। প্রতিটিতেই বিস্ফোরণের চিহ্ন রয়েছে। মসজিদের ফ্যানগুলির বেশিরভাগের পাখা-ই বাঁকা হয়ে গেছে।

ঘটনার সময় মসজিদের অল্প দূরে ছিলেন জাহাঙ্গীর আলম নামে এক অধ্যাপক। তিনি জানান, ৮টায় এশার আজান হয়, সোয়া ৮টায় জামাত। এর মধ্যে দুবার বিদ্যুত যাওয়া-আসা করে। দ্বিতীয়বার বিদ্যুত গিয়ে আসার পরপরই প্রচণ্ড শব্দে বিস্ফোরণ হয়। ‘মাগো বাবাগো’ চিৎকার শোনা যায়। 

তিনি বলেন, মসজিদের বাইরে বৃষ্টির পানি জমে ছিল। কয়েকজনকে দেখি মসজিদ থেকে বের হয়ে সেই পানিতে গড়াগড়ি করছে, শরীরের আগুন নেভানোর জন্য। তাদের শরীরের বেশিরভাগ অংশে চামড়া নেই, শরীরে কাপড় পুড়ে গেছে। এলাকাবাসী দৌড়ে এসে তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ও নগরীর মন্ডলপাড়া এলাকায় অবস্থিত নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়।

মসজিদটিতে এশা নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের পিয়ন নুরুদ্দিনের দুই ছেলে সোহেল (২০) ও জুয়েল (২২)। তাদের দুজনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন নুরুদ্দিন। তিনি জানান, তাদের খুঁজতে তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যাচ্ছেন।

তিনি জানান, এ ঘটনায় স্থানীয় ফটো সাংবাদিক নাদিম (২৮) গুরুতর দগ্ধ হয়েছেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় নাদিমকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের ডাক্তার গোলাম মোস্তফা জানান, হাসপাতালে ৪০ জন দগ্ধ এসেছিলেন। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে গুরুতর আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন