২০২৫ সাল পর্যন্ত বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোর প্রায় ৩০ কোটি শিশুর মধ্যে পোলিও, হাম ও ডিপথেরিয়ার টিকা দিয়ে ও চলমান কভিড-১৯-এর প্রতিষেধক তৈরির জন্য ৮৮০ কোটি ডলার তহবিলের প্রতিশ্রুতি মিলেছে। গতকাল বিশ্ব ভ্যাকসিন সম্মেলনে এ প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়।
ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিশ্বের ২৫ জন রাষ্ট্রপ্রধান, বিভিন্ন দেশের ৫০ জন প্রতিনিধি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, শীর্ষ ব্যবসায়ী, ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা এতে যোগ দেন। অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।
ভ্যাকসিন কর্মসূচির জন্য প্রথমে ৭৪০ কোটি ডলার তহবিল সংগ্রহের পরিকল্পনা করা হলেও তা বেড়ে ৮৮০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। তার মানে, লক্ষ্যের চেয়ে ১০০ কোটি ডলারেরও বেশি তহবিল উঠতে যাচ্ছে। এই তহবিল দিয়ে করোনাভাইরাসের টিকা তৈরির চেষ্টা করে হবে এবং এই রোগটি মোকাবেলায় অবকাঠামো নির্মাণ ও স্বাস্থ্যসেবাকে সহায়তা দেয়া হবে, যার সুফল পাবে বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোর মানুষ।
এছাড়া পোলিও, টাইফয়েড ও হামের মতো প্রাণঘাতী রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষেত্রে যাতে শিশুদের মধ্যে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা তৈরি হয় সে লক্ষ্যে এ অর্থের একটি অংশ ব্যয় করা হবে। যেখানে করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে বর্তমানে শিশুদের ভ্যাকসিন কর্মসূচি ব্যাহত হচ্ছে।
তহবিলের অর্থ যাবে ‘গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিন অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন’ (গ্যাভি) নামের সংস্থায়, যার সূচনা করেন আমেরিকান ধনকুবের বিল গেটস ও তার স্ত্রী মেলিন্ডা গেটস। বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের অর্থায়নেই চলে এটি।
গ্যাভির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগামী পাঁচ বছরের জন্য এই তহবিল সংগ্রহ করা হচ্ছে, যা দিয়ে অন্তত ৩০ কোটি শিশুকে টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে এবং এভাবে ৭০-৮০ কোটি প্রাণ বাঁচবে। গ্যাভির দাবি, ২০০০ সাল থেকে তাদের প্রচেষ্টায় অন্তত ১ কোটি ৩০ লাখ মৃত্যু রুখে দেয়া গেছে।
বড় অংকের অনুদান পেয়ে উচ্ছ্বসিত টুইট বার্তায় গ্যাভি বলেছে, আমরা ৮৮০ কোটি ডলারের অবিশ্বাস্য অংকের নিশ্চয়তা পেয়েছি, যা দিয়ে আগামী পাঁচ বছর গ্যাভি গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজ করবে।
এই সম্মেলন শুরুর আগেই ১৬৫ কোটি ডলার অনুদানের অঙ্গীকার করে যুক্তরাজ্য। এছাড়া অন্যান্য দেশ ও বেসরকারি খাতের ব্যক্তিরা বাকি অর্থ দিচ্ছেন।
মূলত শিশুদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে বিভিন্ন ভ্যাকসিন খাওয়ানোর কার্যক্রমের লক্ষ্যেই তহবিল সংগ্রহ করা হয়েছে, কিন্তু এর পাশাপাশি চলমান কভিড-১৯ মোকাবেলায় ভ্যাকসিন তৈরি ও সরবরাহেও কিছুটা মনোযোগ দেবে গ্যাভি।
সম্মেলনের আগের দিন জাতিসংঘ, ইন্টারন্যাশনাল রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট আন্দোলন কভিড-১৯ নিয়ে এমন একটি রোডম্যাপ তৈরির দাবি জানায় যাতে এই রোগটির পরীক্ষা, নিরীক্ষা ও ভ্যাকসিন বিশ্বব্যাপী সবার জন্য নিশ্চিত করা যায়। বিশ্বের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ওপর রোগটির উচ্চ প্রভাবের কথা উল্লেখ করে এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, বৈশ্বিক সহমর্মিতার চেতনা অটুট থাকবে, এখানে কেউই পিছিয়ে থাকবে না।
কিছু সহযোগীকে নিয়ে ২০০০ সালে যাত্রা করা বিল ও মেলিন্ডা গেটসের গ্যাভি বিশ্বের প্রায় অর্ধেক শিশুকে ভ্যাকসিন পেতে সহায়তা করে।