উদীয়মান অর্থনীতিকে সাহায্য করার উপায়

আলফনসো প্রাট-গে

খুব সহজ। বন্ধ করে আবার চালু করুন!’— কথাগুলো নিশ্চয়ই আপনার আইটি বিভাগ থেকে বহুবার শুনেছেন। এখন দাওয়াইটি বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সুপারিশ করা হচ্ছে। মহামারী বিশেষজ্ঞরা সবখানেই রাজনৈতিক নেতাদের রাজি করাচ্ছেন নিজ নিজ দেশের অর্থনীতিতে অন বোতামটি চেপে দেয়ার জন্য। একটা মৌলিক সমস্যা হলো কম্পিউটার রিস্টার্ট হতে সামান্য সময় লাগে, কিন্তু অর্থনীতির জন্য সেটা বেশ সময়সাপেক্ষ। 

সমস্যাটা বিশেষভাবে উন্নয়নশীল দুনিয়াতে প্রকট এবং বিষয়টি উন্নত বিশ্ব এড়িয়ে যেতে পারবে না। কারণ এদিকে নজর না দিলে মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউ তৈরি হবে এবং আবার উন্নত বিশ্বে ফিরে এসে আঘাত হানবে। তার পরও নীতিনির্ধারকরা দ্রুত সিদ্ধান্ত নিলে একটা ব্যয়-সাশ্রয়ী সমাধান পাওয়া যেতে পারে। উন্নত বিশ্বে লকডাউন করা হয়েছে মহামারীর রেখাকে সমতল করতে। সহজ কথায় সংক্রমণের সংখ্যা হ্রাস করতে। বড় ধরনের অর্থনৈতিক মন্দার ঢেউকে সমতল করতে সরকারগুলো অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক প্রণোদনার ঘোষণা দিচ্ছে। সমন্বিত না হলেও এসব প্যাকেজের আকার বিরাট। দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য নীতিনির্ধারকদের সাধুবাদ জানাই। 

তবে মন্দার ধাক্কা মোকাবেলা করা উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর জন্য অপেক্ষাকৃত কঠিন কাজ। যেমন এসব দেশের শ্রমশক্তির একটা বিরাট অংশ ইনফরমাল এবং মহামারীর কোয়ারেন্টিনের কারণে তাদের উপার্জন একেবারে নেই হয়ে গেছে। ভারত পাকিস্তান কি বিশ্বের জনসংখ্যার এক-পঞ্চমাংশকে লকডাউন করতে সক্ষম? বস্তি বা নিম্নআয়ের মানুষের আবাস অঞ্চল লকডাউন করলে ভাইরাস বরং বেশি ছড়িয়ে পড়তে পারে, কারণ এসব স্থানে প্রায়ই এক রুমে পুরো পরিবার গাদাগাদি করে থাকে। তারপর মহামারী শেষ হওয়া পর্যন্ত কোয়ারেন্টিনে থাকা মানুষ এবং কোম্পানিগুলোকে সাহায্য করার মতো আর্থিক সামর্থ্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর সরকারের নেই। অন্যদিকে এসব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থব্যবস্থা উন্নত দেশের মতো বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি, যা তাদের উদ্ভাবনী নীতি খোঁজার সামর্থ্যকে হ্রাস করে দেয়। 

এসবের সঙ্গে আরো একটা সমস্যা আছে, যেটা পরিস্থিতিকে আরো জটিল করবেধীরে ধীরে বাড়তে থাকা ব্যালান্স অব পেমেন্টের সংকট, যা অন্য দুটো সংকটের বক্ররেখা সমতল করার জন্য এমার্জিং মার্কেট গভর্নমেন্টগুলোর নেয়া পদক্ষেপগুলোকে ঝুঁকিতে ফেলবে। ১৯৯০ দশকের শুরুর দিকে অ্যাসেট ক্লাস সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে উদীয়মান বাজারের ওপর যতগুলো আঘাত এসেছে সেসবের যেকোনোটির চেয়ে কভিড-১৯ বড় সংকট তৈরি করেছে। 

পোর্টফোলিও নির্গমন এখন ৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের চেয়ে বেশি, যা ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক সংকটের সময়ের চেয়ে চার গুণ বেশি। দ্রব্যের দামও পড়ে গেছে, ১৯৭০-এর দশকের পর এমন পতন আর হয়নি। এতে অনেক দেশ ব্যালান্স অব পেমেন্টের সংকটের বিরাট খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে আছে। শুধু লেবানন, একুয়েডর কিংবা জাম্বিয়াই যে কেবল বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করতে চাপে পড়েছে তা নয়। বর্তমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে অনেক দেশই সমস্যায় পড়ে যাবে। 

কী করা যেতে পারে? ইউএস ফেডারেল রিজার্ভ ২০০৮ সালের তুলনায় এখন দ্বিগুণ। আইএমএফ বিশ্বব্যাংক গরিব দেশগুলোকে ঋণ থেকে অব্যাহতি দেয়ার জন্য কাজ করছে। তার পরও অনেক দেশ সুবিধার বাইরে থাকবে। যে অর্থের তহবিলের কথা বলা হচ্ছে, প্রয়োজন তার চেয়ে অনেক বেশি। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো তৃতীয় কোনো দেশের জিম্মায় একটি অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে এবং আইএমএফ সেখানে তহবিলের অর্থ ছাড় করতে পারে। সহায়তার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে ২০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও কম, এটা আইএমএফের বর্তমানে ঋণ দেয়ার ক্ষমতার এক-পঞ্চমাংশ। গুরুত্বপূর্ণ হলো এর ফল পাওয়া যাবে দ্রুত। 

একটা প্রশ্ন অবশ্য উঠবেএতে কি সুশাসনের অভাব থাকা অনেক দেশেও অর্থ দেয়া হবে না? তবে মনে রাখতে হবে সংকট বেপরোয়া কোনো নীতিনির্ধারক কিংবা লোভী বিনিয়োগকারী তৈরি করেননি। অন্য প্রশ্নটি হলো : এটা কি খুব ব্যয়বহুল হবে? ইতিহাস আমাদের শিক্ষা দেয় যে যখন পদ্ধতিগত ঝুঁকি নেয়ার সময় আসে, তখন অনুসরণ করার চেয়ে বেশি ব্যয়বহুল আর কিছু হয় না। বাস্তবতা নিয়েও কিছু প্রশ্ন আছে, যেমন আইএমএফ সত্যিই ধরনের উদ্যোগ নিতে পারে কিনা? বাস্তবতায় না থাকলে এখন উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। কোটা রেস্ট্রিকশনের ব্যাপারটিও সামনে আসবে। 

এটাও ঠিক, এসব উদ্যোগে উদীয়মান বাজারগুলোতে আসন্ন সব অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে না। আইএমএফ বিভিন্নভাবে এসব সমস্যা মোকাবেলায় কাজ করতে পারে। এখনই কাজ শুরু করাটা জরুরি। করোনাভাইরাসের মতো মহামারী সবখানে সমানভাবে প্রতিরোধ না করলে এর থেকে পুরোপুরি মুক্তি পাওয়া যাবে না। এমন বড় আন্তর্জাতিক সংকটকালে আইএমএফের মতো আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ইনস্টিটিউটগুলো এগিয়ে না এলে, সংকটে থাকা দেশগুলোকে সহায়তা করতে না পারলে তারা আর কী করবে?

 

আলফনসো প্রাট-গে : আর্জেন্টিনার সাবেক অর্থমন্ত্রী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর

 

ফিন্যান্সিয়াল টাইমস থেকে অনূদিত

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন