মহামারীতে সংগ্রাহকরা আশ্রয় খুঁজেছেন নিজেদের সংগ্রহশালায়

দীনা গাচম্যান

কয়েক সপ্তাহ আগে আমি মাস্ক পরে টেক্সাসের অস্টিনের বাইরে একটি এস্টেট বিক্রয়কেন্দ্র পরিদর্শন করেছি। বসার ঘরে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে আমি বাড়ির মালিকের শূকরের সংগ্রহশালা দেখলাম। সিরামিকের শূকর, শূকরের দ্বাররক্ষক, অ্যাশট্রেসহ নানা আকার ও ধরনের শূকর সেখানে ছিল। টেবিল ও তাকগুলোতে শূকর উপচে পড়ছিল।

একজন বহিরাগতের কাছে এ মহিলার সংগ্রহ অনেক বেশি মনে হতে পারে। কিন্তু আমি কল্পনা করতে পারি যে প্রতিটি শূকর এবং কীভাবে সেগুলো তার কাছে, সেই গল্প সম্ভবত তাকে বছরের পর বছর ধরে ব্যাপক আনন্দ দিয়ে আসছে। নিজের ব্যক্তিগত সংগ্রহকে বাড়িয়ে তোলা কারো দারুণ একটি অভিজ্ঞতা হতে পারে, যারা কোনো কিছু সংগ্রহ করেন না তারা হয়তো এটি বুঝতে পারবেন না।

কভিড-১৯-এর মহামারী চলাকালে ব্যাপক অনিশ্চয়তার মধ্যেও কোনো কিছু সংগ্রহ করার শখ দারুণ আনন্দ নিয়ে আসতে পারে। অনেক আমেরিকান বিগত মাসগুলোতে জিগশ পাজলগুলো মজুদ করেছে। আবার অনেক দীর্ঘকালীন সংগ্রাহকদের এ বছর সুযোগ দিয়েছে নিজেদের প্যাশনের দিকে আরো ভালোভাবে ঝুঁকে পড়ার। যেমন কমিক বই সংগ্রহ করা কিংবা তাকগুলোতে নানা মডেলের খেলনা গাড়ি মজুদ করা। অথবা তাদের এখন পর্যন্ত কী আছে ও কী নেই তার স্টক করা এবং তাদের কিছু সংগ্রহকে শুদ্ধীকরণ করা। একাধিক সংগ্রাহকের মতে, মহামারী চলাকালে অনলাইনে পপ সংস্কৃতির ও অ্যান্টিক বস্তুর পরিমাণ আকস্মিকভাবে বেড়ে গিয়েছিল, যা সংগ্রাহকদের নিজেদের সংগ্রহে যেসব ফাঁক তা দূর করার সুযোগ করে দিয়েছে। 

অরেঞ্জ কাউন্টির আইনজীবী জুনিসি পি. সেমিটসু বলেন, আমি মহামারীতে আমার পেজ ডিসপেনসার দুই হাজার ছাড়িয়েছে। ১৯৮৭ সাল থেকে তিনি পেজ ডিসপেনসার সংগ্রহ করতে শুরু করেন। তিনি বলেন, আমি একটি স্পিডি গঞ্জালেজ কিনেছিলাম এবং তারপর আর পেছনে ফিরে তাকাইনি।

মহামারীর কারণে ঘরে বসে কাজ করার কারণে তিনি যথেষ্ট সময় পেয়েছেন তার দুই হাজার পেজগুলো নিয়ে সময় কাটানোর এবং সে সঙ্গে কোথায় ঘাটতি আছে তা খুঁজে বের করার। তিনি বলেন, বিষণ্ন হওয়া ছাড়া আমার কিছু করার ছিল না। অপেক্ষা করছিলাম, কীভাবে ক্রিস্টাল আর২-ডি২ ছাড়াই ক্রিস্টাল সি-৩পিও সংগ্রহ করতে পারি?

আগস্টে ‘ব্ল্যাক প্যান্থার’ খ্যাত অভিনেতা চ্যাডউইক বোজেমেন মারা যাওয়ার পর সেমিটসু তার মার্বেল ক্যারেক্টারের পেজ ডিসপেনসারগুলো বের করার আগ্রহ বোধ করেন। ফলে তিনি তিনি ও তার সন্তানরা ব্ল্যাক প্যান্থারের শেষকৃত্য আয়োজনের সুযোগ পান। তিনি বলেন, আমাদের সবাইকে দীর্ঘ মহামারীকালীন দিনগুলো কোনো না কোনোভাবে পূরণ করতে হতো। পাশাপাশি পেজ ডিসপেনসারগুলো তার কাছে বৈচিত্র্যের প্রতিনিধিও।

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও লেখিকা শিরলি মুলার আন্তর্জাতিকভাবে সংগ্রাহক হিসেবে পরিচিত। চীনামাটির বাসনকোসনের এ সংগ্রাহকের কাছে ন্যূনতম ২০০টি চাইনিজ টি-পট রয়েছে এবং তার সামগ্রিক সংগ্রহের পরিমাণ ছয় শতাধিক। প্রতিটি কোনো না কোনো গল্প বলে এবং ইতিহাসকে উপস্থাপন করে। তিনি বলেন, আমার চিন্তা বিজ্ঞানভিত্তিক হওয়া উচিত। কিন্তু কোনো কিছু সংগ্রহ করা বিজ্ঞান সম্পর্কিত না, এটা মূলত আবেগ সম্পর্কিত। 

মুলার দশক ধরে নিউরোসাইকোলজি এবং সংগ্রহ বিজ্ঞান নিয়ে কাজ করছেন। তিনি বলেন, মহামারীর মতো সময়ে সংগ্রহের নেশা সান্ত্বনা ও কাঠামো সরবরাহ করে এবং এটা একটা উপায় যার মাধ্যমে আমরা এমন কিছু উৎপাদন করতে পারি যা আমাদের আনন্দ দেয়। তিনি বলেন, সংগ্রহ করা নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কিত। আমরা কভিড নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না, কিন্তু আমাদের সংগ্রহকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি।

স্মিথসোনিয়ান

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন