ভ্যাকসিনে কেন বয়স্কদের অগ্রাধিকার দিতে হবে?

বণিক বার্তা ডেস্ক

আমরা যখন ভ্যাকসিনের অপেক্ষায় আছি, এটা পরিষ্কার যে সম্ভাব্য কভিড ভ্যাকসিনের সরবরাহ প্রাথমিকভাবে সীমিত থাকবে। প্রথমদিকে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে ভ্যাকসিন বিতরণে অগ্রাধিকার দেয়ার প্রয়োজন পড়বে। সেই সিদ্ধান্ত তারা কীভাবে নেবে?

সাধারণ মত হচ্ছে, যেসব মানুষ সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে তাদের আগে ভ্যাকসিন দিতে হবে। যেমন স্বাস্থ্যসেবা খাত এবং কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের সবার আগে ভ্যাকসিন দেয়ার প্রয়োজন হবে। কিন্তু এরপর কারা পাবে সে বিষয়টি পরিষ্কার না। কাজের ধরন ও ডেমোগ্রাফিক কিংবা স্বাস্থ্য বৈশিষ্ট্য বিবেচনা করে অধিক ঝুঁকিতে থাকা লোকজনকে পরের ধাপে অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে গবেষকরা মত দিয়েছেন।

শুক্রবার অনুষ্ঠিত হওয়া অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল কেবিনেট মিটিংয়ে ফেডারেল সরকার ইঙ্গিত দিয়েছে যে বয়স্ক ও দুর্বল জনগোষ্ঠীর লোকেদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে। প্রশ্ন হচ্ছে, কেন বয়স্ক মানুষদের আগে ভ্যাকসিন দেয়া একটি ভালো চিন্তা।

ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকে সুবিধা দেয়ার দিক থেকে ভ্যাকসিন কয়েকটি ভিন্ন উপায়ে কাজ করে। ব্যক্তির জন্য একটি স্পষ্ট সুবিধা হচ্ছে ভ্যাকসিন গ্রহণকারী ব্যক্তি সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা পাবে। পাশাপাশি ভ্যাকসিন গুরুতর অসুস্থতা এবং অন্যদের সংক্রমিত করার হারও হ্রাস করতে পারে।

এগুলো সবই নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর জন্য সুবিধাজনক হতে পারে। ভ্যাকসিন যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে দেয়া যায় এবং সংক্রমণ হ্রাস করা যায়, তবে আমাদের সামগ্রিক (হার্ড) ইমিউনিটি সংক্রমণ রোধ করার কার্যকর পন্থা হিসেবে ব্যবহূত হতে পারে। এটি ভাইরাসের পথকে আটকে দুর্বল জনগোষ্ঠীকে সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা দিতে পারে।

কভিডের কারণে গুরুতর অসুস্থতা একটি জটিল স্বাস্থ্য সমস্যা, যা স্বাস্থ্যসেবা খাত ও সম্পদের ওপর উল্লেখযোগ্য চাপ সৃষ্টি করে। কিন্তু ভ্যাকসিন সরবরাহ যদি সীমিত হয়, তবে অধিক ঝুঁকিতে থাকাদের ভ্যাকসিন দেয়ার মাধ্যমে আমরা তাদের গুরুতর অসুস্থতা হ্রাস করতে পারি, যেমন বয়স্ক মানুষদের।

পরোক্ষভাবে গুরুতর অসুস্থতা হ্রাস করা যায় যাদের অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা বেশি তাদের ভ্যাকসিন দেয়ার মাধ্যমে, যেমন তরুণ জনগোষ্ঠী। কিংবা উভয় কৌশলই একসঙ্গে ব্যবহার করা যায়।

এখানে আরেকটি প্রশ্ন হচ্ছে, কীভাবে সীমিত সরবরাহের ভ্যাকসিন দ্বারা অধিক প্রভাব রাখা যায়? বয়স বাড়ার সঙ্গে আমাদের ইমিউন সেলও কার্যকারিতা হারাতে পারে। যার ফলাফল হচ্ছে ভ্যাকসিন প্রায়ই একইভাবে বয়স্ক ও তরুণদের রক্ষা করতে পারে না। এ কারণে, অনেক মানুষ হয়তো বয়স্কদের জন্য ভ্যাকসিনকে অগ্রাধিকার বিষয়টিকে অকার্যকর ধারণা বলে বিবেচনা করতে পারে। বলতে পারে, কেন সেই সব মানুষকে ভ্যাকসিন দেয়া, যাদের মাঝে এটা ভালোভাবে কাজ করবে না। কিন্তু আমাদের বয়স্কদের অগ্রাধিকার দিতে হবে কয়েকটি কারণে।

প্রথমত, বয়স্ক লোকেরা কভিডের কারণে সবচেয়ে বাজে অবস্থায় আছে। অস্ট্রেলিয়ায়, ৬৫ বছর বয়সী বয়স্কদের অর্ধেককেই আইসিইউতে নেয়ার প্রয়োজন পড়েছে এবং তাদের ৯০ শতাংশের বেশি মারা গেছে।

দ্বিতীয়ত, ভ্যাকসিন বয়স্কদের হয়তো একইভাবে সুরক্ষা দিতে পারে না, কিন্তু এটা নির্দিষ্ট মাত্রা পর্যন্ত সুরক্ষা দিতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ফ্লু ভ্যাকসিন সাধারণত ৬০-৭০ শতাংশ পর্যন্ত সুরক্ষা দিতে পারে। কিন্তু ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রে সেটি ৩০-৪০ শতাংশে নেমে আসে। কিন্তু এ হারও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বয়স্ক লোককে সুরক্ষা দিতে পারে। 

তৃতীয়ত, সম্ভাবনাময় ভ্যাকসিন সংক্রমণ রোধ করতে না পারলেও এটা তার পরও গুরুতর অসুস্থতা হ্রাস করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ একটি জরিপে দেখা গেছে, ফ্লু ভ্যাকসিন বয়স্কদের গুরুতর অসুস্থতা ২৩ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস করতে পারে। ফলে বয়স্কদের সংক্রমণ ও গুরুতর অসুস্থতার কিছুটা উন্নতিও মৃত্যু ও রোগের সামগ্রিক বোঝাকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস করতে পারে।

দ্য কনভারসেশন

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন