বেশ
কিছুকাল আগে থেকেই
গবেষকরা প্রমাণ পেয়েছেন
প্রক্রিয়াজাত
(মাংস দিয়ে তৈরি
বিভিন্ন খাবার) লাল
মাংস খাওয়া মানুষের
কার্ডিওভাসকুলার
রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি
করে মৃত্যু ডেকে
আনে। তবে
অপ্রক্রিয়াজাত
(সরাসরি মাংস) মাংস,
মাছ ও মুরগি
কি কম
ক্ষতিকর? বেশ কয়েকটি
গবেষণায় দেখা গেছে
বেকন, হট ডগ,
সসেজ ও অন্যান্য
প্রক্রিয়াজাত
মাংস কার্ডিওভাসকুলার রোগের
ঝুঁকি বৃদ্ধি এবং
আয়ু হ্রাসের সঙ্গে
সম্পর্কিত। এ
খাবারগুলোয়
উচ্চ মাত্রায় স্যাচুরেডেট
ফ্যাট ও লবণ
আছে, যা কার্ডিওভাসকুলার
রোগ এবং মৃত্যুর
ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। নতুন
এক গবেষণায়
বলা হয়েছে স্বল্প
পরিমাণেও এ-জাতীয়
খাবার স্বাস্থ্যঝুঁকির জন্য
যথেষ্ট।
এখন
প্রশ্ন হলো, অপ্রক্রিয়াজাত
লাল মাংস, মুরগি
ও মাছ
কি মানবশরীরের
জন্য একই রকমের
ক্ষতিকর? এ খাবারগুলো
কি সমানভাবে
কার্ডিওভাসকুলার
রোগ এবং আয়ু
হ্রাস করে।
এক্ষেত্রে গবেষণাগুলো মিশ্র
ফল তুলে
ধরে। কয়েকটি
গবেষণার ফল আংশিকভাবে
আলাদা হয়েছে।
পদ্ধতিগুলো
আলাদা ও নানা
সীমাবদ্ধতার
কারণে গবেষণার ফলগুলো
এমন হয়েছে বলে
ধারণা গবেষকদের।
সীমাবদ্ধতাগুলো
দূর করে শূন্যতা
পূরণের জন্য নিউইয়র্কের
কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি
গবেষক ভিক্টর ডব্লিউ
ঝংয়ের নেতৃত্বে একদল
বিজ্ঞানী ছয়টি বিদ্যমান
গবেষণার নতুন করে
মেটা-বিশ্লেষণ শুরু
করেন। নতুন
এ বিশ্লেষণ
জামা ইন্টারনাল মেডিসিন
জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
ঝং ও তার দল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২৯ হাজার ৬৮২ জন প্রাপ্তবয়স্কের ডাটা বিশ্লেষণ করেছেন, যাদের কার্ডিওভাসকুলার রোগ নেই। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৪৪ শতাংশ পুরুষ এবং বাকিরা নারী ছিলেন। গবেষকরা ১৯৮৫-২০০২ সালের মধ্যে অংশগ্রহণকারীদের খাবার তালিকা নথিভুক্ত করেন এবং ২০১৬ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ৩০ বছর ধরে তাদের ক্লিনিক্যাল পর্যবেক্ষণ করেন। ১৯ বছরের মধ্যবর্তী ফলোআপ সময়কালীন ৬ হাজার ৯৬৩ কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঘটনা ঘটে এবং এতে ৮ হাজার ৮৭৫ জনের মৃত্যু হয়।
কার্ডিওভাসকুলার
রোগগুলোর মধ্যে অংশগ্রহণকারীদের
৩৮ দশমিক
৬ শতাংশ
করোনারি হার্ট ডিজিজ,
২৫ শতাংশ
স্ট্রোক এবং ৩৪
শতাংশ হার্ট বিকল
হওয়ার ঘটনা রয়েছে।
অধ্যয়নটির
একজন লেখক ব্যাখ্যা
করেন, অধ্যয়নটিতে ১
পরিবেশনা বলতে ৪
আউন্স অপ্রক্রিয়াজাত লাল
মাংস বা ৩
আউন্স মাছ খাওয়াকে
বোঝানো হয়েছে।
এছাড়া প্রক্রিয়াজাত মাংসের
ক্ষেত্রে ১ পরিবেশনা
বলতে দুই টুকরো
বেকন, ছোট দুটি
সসেজ অথবা একটি
হট ডগকে
বোঝানো হয়েছে।
প্রতি সপ্তাহে অংশগ্রহণকারীদের
মাংস, হাঁস-মুরগি
ও মাছের
পরিবেশনার ক্ষেত্রে প্রক্রিয়াজাত
মাংসের জন্য ছিল
১ দশমিক
৫, অপ্রক্রিয়াজাত
লাল মাংস ৩,
হাঁস-মুরগি ২
এবং মাছ ছিল
১ দশমিক
৬।
এ
চারটি খাবার উচ্চমাত্রায়
গ্রহণকারীদের
সঙ্গে নিম্ন মাত্রায়
গ্রহণকারীদের
তুলনা করা হয়। গবেষকরা
প্রধান যে ফল
সন্ধান করেছেন, তা
হলো ৩০ বছরের
বেশি সময় ধরে
এ খাবার
গ্রহণকারী ব্যক্তিদের মধ্যে
কার্ডিওভাসকুলার
রোগের ঝুঁকি এবং
একই সময়ে সাধারণ
মানুষদের কার্ডিওভাসকুলার রোগের
ঝুঁকির পার্থক্য।
ঝং ও
তার দল অধ্যয়নের
সামারিতে লিখেছেন, প্রক্রিয়াজাত
মাংস, অপ্রক্রিয়াজাত লাল
মাংস বা হাঁস-মুরগির মাংস
খাওয়ার সঙ্গে হূদরোগের
উল্লেখযোগ্য
সম্পর্ক ছিল, তবে
মাছ খাওয়ার সঙ্গে
হূদরোগের সম্পর্ক পাওয়া
যায়নি।
আরো সুনির্দিষ্টভাবে বললে, কার্ডিওভাসকুলার রোগ ও মৃত্যুর বর্ধিত আপেক্ষিক ঝুঁকি প্রায় ৩ থেকে ৬ শতাংশ পর্যন্ত ছিল। অধ্যয়নটিতে প্রতি সপ্তাহে প্রক্রিয়াজাত মাংস ২ অতিরিক্ত পরিবেশনার জন্য মৃত্যুর ঝুঁকি প্রক্রিয়াজাত মাংস গ্রহণ করেনি, তাদের তুলনায় ৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। একই ফল দেখা গেছে অপ্রক্রিয়াজাত মাংসের ক্ষেত্রেও। প্রক্রিয়াজাত মাংস প্রতি সপ্তাহে অতিরিক্ত প্রতি ২ পরিবেশনার জন্য কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। অপ্রক্রিয়াজাত লাল মাংস গ্রহণে সে ঝুঁকি ছিল ৩ শতাংশ। এছাড়া হাঁস-মুরগি সপ্তাহে অতিরিক্ত প্রতি ২ পরিবেশনার জন্য কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি ৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও মাছ কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকির সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল না।
গবেষকরা
বলেছেন, অধ্যয়নে যে
মানুষগুলো মাংস গ্রহণ
করেছে, তাদের কার্ডিওভাসকুলার
রোগের ঝুঁকি এবং
আয়ু হ্রাস হয়ে
মৃত্যুর ঝুঁকি বৃদ্ধি
পেয়েছে। গবেষকরা
তাদের অধ্যয়নের ফল
পেয়ে ‘সংকটপূর্ণ
জনস্বাস্থ্য’ হিসেবে
বর্ণনা করেছেন।
তারা বলেছেন, অনুসন্ধানগুলো
আরো শক্তিশালী করতে
আরো গবেষণা করা
প্রয়োজন। বর্তমান
গবেষণাটির কিছু সীমাবদ্ধতা
রয়েছে; যেমন খাবারের
তালিকা মানুষরাই সরবরাহ
করেছে। এর
ফলে কোনো মানুষ
ভুল করে খাবার
গ্রহণের হিসাব দিলে
ফল পরিবর্তিত
হতে পারে।
দ্বিতীয়ত, বিজ্ঞানীরা খাদ্য
প্রস্তুতের
পদ্ধতি সম্পর্কে কোনো
তথ্য সংগ্রহ করেননি। মাংস
ভেজে খাওয়া হয়েছিল
বা অভাজা
খাওয়া হয়েছিল, এটা
বিবেচনায় নেয়া হয়নি,
যা স্বাস্থ্যের
ফলগুলোতে প্রভাব ফেলতে
পারে। তৃতীয়ত,
অধ্যয়নের শুরুতে কেবল
একটি খাদ্যতালিকা পরিমাপ
হিসেবে ব্যবহার করা
হয়েছে, কিন্তু অংশগ্রহণকারীদের
খাদ্যাভ্যাসের
তালিকা সময়ের সঙ্গে
সঙ্গে পরিবর্তিত হতে
পারে।
সবশেষে
আরেকটি বড় বিষয়
হলো, অধ্যয়নটি কেবল
যুক্তরাষ্ট্রের
প্রাপ্তবয়স্ক
অংশগ্রহণকারীদের
মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। তবু
ঝংয়ের দল শেষ
করেছে, ‘অধ্যয়নের
এ ফলগুলো
জনস্বাস্থ্যের
সচেতনার জন্য খুবই
গুরুত্বপূর্ণ। যদিও
মানুষের খাদ্যাভ্যাসগুলো পরিবর্তনযোগ্য
হয় এবং
বেশির ভাগ মানুষ
এ চার
ধরনের খাবার দৈনিক
বা সাপ্তাহিক
ভিত্তিতে গ্রহণ করে।
সূত্র: মেডিকেল নিউজ টুডে