রশ্মি সাহিজওয়ালা কখনই ভাবেননি ৫৯ বছর বয়সে এসে তিনি কর্মজীবন শুরু করবেন। তবে ভারতের ক্রমবর্ধমান ‘গিগ ইকোনমি’ তার মতো বহু বেকার নারীর জন্য আয়ের পথ খুলে দিয়েছে। তিনি এখন আরো অনেকের মতো নিজের রান্নাঘরকে রূপান্তরিত করেছেন ‘ক্লাউড কিচেন’-এ। যেখান থেকে খাবার তৈরি করে তিনি সরবরাহ করছেন সেসব মানুষকে, যারা অতি ব্যস্ততার কারণে রান্নার সুযোগ পান না। এর মধ্য দিয়ে মাসে তার মুনাফা আসছে অন্তত ২০০ ডলার।
বর্তমানে বেশ সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি ভারত। তবে এর মধ্যেও অর্থনীতিটিতে সৃষ্টি হয়েছে গিগ ইকোনমির মতো বেশকিছু নতুন সম্ভাবনাময় খাত। সস্তা মোবাইল ডাটা ও সহজলভ্য প্রচুর শ্রম দেশটিতে গিগ ইকোনমি বিকশিত করছে। একই সঙ্গে ভারতজুড়ে সৃষ্টি করছে নতুন বাজার।
গিগ ইকোনমি হলো এমন এক মুক্ত বাজার পদ্ধতি, যেখানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান স্বল্পমেয়াদের ভিত্তিতে স্বাধীন কর্মীদের সঙ্গে চুক্তি করে। মূলত এটি একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য চাকরির ব্যবস্থা। অন্যদিকে ক্লাউড কুকিং হলো পেশাদারিত্বের সঙ্গে পরিচালিত প্রান্ত থেকে প্রান্তে খাবার সরবরাহ সেবা। এর মধ্য দিয়ে বিভিন্ন করপোরেট কিংবা অন্য প্রতিষ্ঠানে কর্মরত যারা রান্নার সময় পান না, তাদের তিনবেলা গরম ও টাটকা খাবার সরবরাহ করা হয়।
শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের জন্য ভারতের নারীদের লড়াই বহুদিনের। এক্ষেত্রে তাদের প্রধান বাধা আসে রক্ষণশীল পরিবারগুলোর কাছ থেকে। ঘর থেকে বের হতে না পারায় তারা নিজের পছন্দের কাজ বেছে নিতে পারেন না। কিন্তু কারিফুল, হোমফুডি ও নানিঘরের মতো অ্যাপভিত্তিক খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান তাদের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করেছে। সুইগি ও জোমাটোর মতো এসব অ্যাপের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে তারা নিজের রান্নাঘরে তৈরি খাবার বিক্রি করতে পারছেন ঘরে বসেই। আর তাদের এ রান্নাঘরকেই বলা হচ্ছে ক্লাউড কিচেন।
শুরুর দিকে যে কয়জন নারী কারিফুলে যোগ দিয়েছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম রশ্মি সাহিজওয়ালা। প্রায় ৪০ বছর ধরে রান্নার অভিজ্ঞতা থাকলেও প্রথমে তিনি বেশ শঙ্কায় ছিলেন। কিন্তু সন্তানদের দেয়া সাহসের ওপর ভর করে তিনি এগিয়ে যান। আর এ ব্যবসায় এখন তিনি বেশ ভালো করছেন। তাছাড়া ব্যবসা পরিচালনা শেখার জন্য তিনি কোর্সও করেছেন। শিখেছেন কীভাবে পাইকারি বাজার থেকে পণ্য কিনে তুলনামূলক কম খরচে গ্রাহকদের ভালো মানের খাবার সরবরাহ করা যায়।
৩০১টি ক্লাউড কিচেন পরিচালনাকারী রেবেল ফুডের সহপ্রতিষ্ঠাতা কল্লোল ব্যানার্জি বলেন, আমরা ২ হাজার ২০০টি ‘ইন্টারনেট রেস্তোরাঁ’য় খাবার সরবরাহ করছি। মূলত শেফরাই রান্নার উপকরণ কিনে থাকেন এবং ইউটিলিটি বিল পরিশোধ করেন। আর অ্যাপগুলোর আয় হয় কমিশন থেকে।
ডাটা প্লাটফর্ম আইএনসি ফরটি টুর মতে, ২০২৩ সালের মধ্যে ভারতে ক্লাউড কিচেন খাত ১০৫ কোটি ডলারে পৌঁছবে বলে আশা করা হচ্ছে। কারণ দিন দিন লাভজনক এ ব্যবসায় যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান। যেমন সুইগি দেশজুড়ে এক হাজার ক্লাইড কিচেন খুলতে এরই মধ্যে আড়াইশ কোটি রুপি বিনিয়োগ করেছে।
এএফপি অবলম্বনে
আরো পড়ুন: