ভয়াবহ দাবানলে ভস্মীভূত হয়ে পড়া
অস্ট্রেলিয়ার ক্যাঙ্গারু আইল্যান্ডের আগুন স্তিমিত হওয়ার পর নিজের নিজের লোকসানের
দিকে মনোযোগ দিতে শুরু করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া প্রায়
৪০০ ভেড়াকে মাটি চাপা দিতে দিতে স্থানীয় খামারি রিক মরিস জানান, পুরো
পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে তিনি অল্প কয়েকজন ভাগ্যবানের একজন। যদিও তার সিংহভাগ
সম্পত্তি আগুনে ধ্বংস হয়ে গেছে। দাবানলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ক্যাঙ্গারু
আইল্যান্ড।
গত সেপ্টেম্বর থেকে দাবানলের বিরুদ্ধে
টানা লড়াই করে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া। তীব্র দাবানলে দেশটির ১ কোটি হেক্টর (২
কোটি ৫০ লাখ একর) জমি পুড়ে গেছে, যা পুরো দক্ষিণ কোরিয়া বা পর্তুগালের চেয়েও বড়। দাবানলে এখন পর্যন্ত ২৮
জনের প্রাণহানির কথা জানা গেছে,
যার মধ্যে ক্যাঙ্গারু আইল্যান্ডের দুজন রয়েছেন।
পুড়ে যাওয়া বিস্তীর্ণ তৃণভূমি ছিল গরু
ও ভেড়ার চারণভূমি। সরকারি হিসাবে,
দাবানলে পুরো অস্ট্রেলিয়ায় এক লাখের বেশি গবাদি
পশু মারা গেছে। এর মধ্যে কেবল ক্যাঙ্গারু আইল্যান্ডেই মারা গেছে অন্তত ৪৩ হাজার।
দ্বীপটিতে মাত্র ১০ দিনে তিনটি দাবানলের সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে মরিসের মতো
খামারিদের।
৯৩০ হেক্টর (২
হাজার ৩০০ একর) খামারের মালিক মরিস বলেন,
প্রকৃতির পূর্ণ রোষ আমরা দেখতে পেয়েছি। দ্বীপের
দক্ষিণ থেকে উত্তর দিক পর্যন্ত আগুন ধেয়ে যেতে দেখেছি। খুব বেশি যে প্রাণহানি হয়নি, এটাই
অবাক হওয়ার মতো বিষয়।
দুর্যোগের তীব্রতর মাত্রার
পরিপ্রেক্ষিতে অস্ট্রেলিয়ার সামরিক বাহিনী দাবানলে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে
সহায়তার জন্য তিন হাজার সেনা মোতায়েন করেছে।
সেনা সদস্যরা মূল ভূখণ্ড থেকে
হেলিকপ্টারে করে ক্যাঙ্গারু দ্বীপের পশ্চিমে আগুনে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া কৃষকদের খড়ের
গাদা সরবরাহ করেছে। দাবানল মোকাবেলায় নিয়োজিত যৌথ বাহিনীর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার
ড্যামিয়েন ক্যান্টওয়েলের মতে,
সেরে ওঠার জন্য ক্যাঙ্গারু আইল্যান্ডের দীর্ঘ
সময় লাগবে। মরিস বলেন, ধ্বংসের মাত্রা আমাকে এখন পর্যন্ত হতবাক করে। দ্বীপটির বহু চাষী সংকটে
রয়েছেন, জনপদগুলোর সদস্যদের সংগ্রাম করতে হচ্ছে, পরিবারগুলো তাদের সবকিছু হারিয়েছে। এ
মুহূর্তে তারা এখান থেকে এগিয়ে যাওয়ার পথ খোঁজার সংগ্রাম করছে। এই লড়াই শেষ হওয়ার
কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই।
ক্যাঙ্গারু আইল্যান্ডের কৃষি শিল্পের
আকার ১০ কোটি ডলার (১৫ কোটি অস্ট্রেলিয়ান ডলার)
এবং খামারিরা দ্বীপটির সবচেয়ে বড় নিয়োগদাতা।
স্থানীয় কৃষিবিদ ড্যানিয়েল প্লেজ বলেন,
দাবানলের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব রয়েছে। খামারিদের
এখন গবাদি পশুর জন্য অতিরিক্ত খাবার কিনতে হবে, দগ্ধ প্যাডক (ঘোড়ার
চারণভূমি) পুনরুদ্ধারে বীজ বপন করতে হবে। এছাড়া ভয়াবহ চাপের কারণে গবাদি পশুর
প্রজনন কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
প্লেজ বলেন, দাবানলের
প্রভাব ধীরে ধীরে দেখা দেবে,
যা আমাদের পক্ষে পরিমাপ করা সম্ভব নয়। সত্যি করে
বলতে আমরা আমাদের স্থানীয় অর্থনীতি নিয়ে বেশ উদ্বেগে রয়েছি। কারো কারো ক্ষেত্রে
এসব প্রভাব পাঁচ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে, যা আসলে একটা দীর্ঘ সময়।
দাবানলের আগে থেকেই অস্ট্রেলিয়ার
কৃষকরা দীর্ঘস্থায়ী খরার কবলে ছিল,
যা বিস্তৃত ও শুষ্ক দেশটির দক্ষিণ-পূর্বের পল্লী
অঞ্চলগুলোর পানি সরবরাহ সংকুচিত করেছে।
পুরো দেশেই ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে
থাকার কথা জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল ফার্মারস ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট
ফিয়োনা সিম্পসন। তিনি বলেন,
খরা হোক বা সাম্প্রতিক দাবানল শুষ্ক আবহাওয়া বহু
কৃষি জনপদকে খাদের কিনারে ঠেলে দিচ্ছে।
কৃষকদের পুনরুদ্ধারে সহায়তার জন্য
তাত্ক্ষণিকভাবে ৫১ হাজার ৬৫০ ডলার অনুদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার সরকার, যা
১৩৮ কোটি ডলারের দাবানল ত্রাণ তহবিল থেকে সরবরাহ করা হবে।
সূত্র: এএফপি