দাবানলে সব হারানো কিশোর গাব্রিয়েলের লড়াই

বণিক বার্তা অনলাইন

দাবানলে মাত্র ১৬ বছর বয়সে সবকিছু হারিয়ে এক ঘোরের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে গাব্রিয়েল কাম। অস্ট্রেলিয়ায় গত সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া দাবানলে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ২৪ জন। ভস্মীভূত হয়েছে দেড় হাজারেরও বেশি ঘরবাড়ি। ‘ওই আগুনের তীব্রতার বর্ণনা দেয়ার কোনো ভাষা নেই’- কিশোর গাব্রিয়েল সেই বিভীষিকার বর্ণনা দিতে গিয়ে এটুকু বলেই বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। এক দিকে সব হারানোর শোক, অন্যদিকে সামনে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ- সবমিলে একাই লড়াই করে যাচ্ছে সে।

গাব্রিয়েলের গ্রাম বালমোরাল। সিডনি থেকে মাত্র দুই ঘণ্টার পথ। বাবা-মার সঙ্গে নিজের বাড়িতে সুখেই ছিল সে। দাবানল যেন চোখের পলকে সব কেড়ে নিয়ে তাকে নিঃস্ব করে দিল। দুই দফায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় গাব্রিয়েলের  পরিবার। দাবানল প্রথম আঘাত হানে ১৯ ডিসেম্বর। এর দু’দিন পরে আগুনের লেলিহান শিখা কেড়ে নেয় তাদের সবকিছু। ঘরের ভেতরে কোনটা যে কি কিছুই বোঝার উপায় নেই। দুটি পোষা বিড়াল আর পোশাক ছাড়া কিছুই রক্ষা করতে পারেনি তারা। গাব্রিয়েল ও তার পরিবার বর্তমানে এক পারিবারিক বন্ধুর বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। 

পুড়ছে গাব্রিয়েলদের বাড়ি

দমকলকর্মীদের পরামর্শ অনুযায়ী তারা বাড়ির আশেপাশের ছোট গাছ বা ঝোপঝাড় পরিষ্কার করেছিল। বাড়ির দেয়াল ডাবল লেমিনেটেড গ্লাস দিয়ে নির্মিত ছিল। বড় হাতুরি দিয়ে আঘাত করেও এ দেয়াল ভাঙা কঠিন। তারপরেও শেষ রক্ষা হয়নি না। গাব্রিয়েল বলে, আগুন যখন বাড়ি পর্যন্ত চলে এলো তখন কিছুই করার ছিল না। 

এই বাড়িতে ২০ বছর ধরে বাস করছিল গাব্রিয়েলের পরিবার

এই আগুন থামাবার একমাত্র উপায় হল অবিরাম  বৃষ্টিপাত। দুর্ভাগ্যক্রমে, অস্ট্রেলিয়ায় শিগগিরই এমন বৃষ্টির দেখা মিলছে না। তবে স্বস্তি এনে দিয়েছে মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ওঠা ত্রাণের দুই কোটি ডলার। নিউ সাউথ ওয়েলশে ফায়ার সার্ভিসসহ আন্তর্জাতিক অনুদান থেকে এই অর্থ এসেছে।

গাব্রিয়েল ও তার পরিবার তার এলাকার জন্য তহবিল সংগ্রহ শুরু করেছে। সারা বিশ্ব থেকে তাকে অকুণ্ঠ সমর্থন ও সমবেদনা জানানো হয়েছে। মানুষের এভাবে সাড়া দেয়ায় গাব্রিয়েল অভিভূত। গাব্রিয়েল বলে, অস্ট্রেলিয়ায় কী হচ্ছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তা বুঝতে হবে। আমরা সবাই মানুষ। যতটা সম্ভব সবাইকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। এই বিধ্বংসী দাবানল শিগগিরই থামছে না।

গাব্রিয়েলের গ্রামের প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ তাদের ঘরবাড়ি হারিয়েছে। তবে তার আশা, সবাই একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এই পরিস্থিতি তারা মোকাবেলা করতে পারবে। নতুন করে গড়ে তুলবে তাদের গ্রাম। সূত্র: বিবিসি

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন