নতুন প্রতিবেদনে ব্যাংক অব আমেরিকা
মেরিল লিঞ্চ গ্লোবাল রিসার্চ জানিয়েছে,
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ২০১৮ সালের ৩ দশমিক
৮ শতাংশ থেকে কমে ২০১৯ ও ২০২০ সালে হতে পারে ৩ শতাংশের কিছু বেশি। তবে মার্কিন
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কারণে আগামী বছর যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার বাণিজ্য
উত্তেজনা কিছুটা স্তিমিত হয়ে পড়তে পারে। খবর বিজনেস ওয়্যার ও সিনহুয়া।
‘ব্যাংক অব আমেরিকা মেরিল লিঞ্চ ২০২০ মার্কেট আউটলুক’ প্রতিবেদনে
বলা হচ্ছে, বাণিজ্য উত্তেজনা ও মন্দার ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম থাকলে বিশ্ব
অর্থনীতি ভালো করবে। অন্যদিকে বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি চলতি বছরের ৩ দশমিক ১ শতাংশ
থেকে কমে ২০২১ সালে ২ দশমিক ৭ শতাংশে দাঁড়াতে পারে।
মেরিল লিঞ্চ গ্লোবাল রিসার্চের
বৈশ্বিক অর্থনীতি বিভাগের প্রধান ইথান হ্যারিস বলেন, বাণিজ্যযুদ্ধে বিরতি, ফেডের
সতর্ক অবস্থান ও চীনের আগ্রাসী নীতি শিথিলকরণ সম্মিলিতভাবে ২০২০ সালে মন্দার ঝুঁকি
কমাবে।
মেরিল লিঞ্চ গ্লোবাল রিসার্চের প্রধান
ক্যান্ডেস ব্রাউনিং বলেন, শেয়ারবাজারে বিদ্যমান অস্থিরতার মধ্যেই একটি নতুন বছর ও দশক শুরু হতে
যাচ্ছে। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে শেয়ারবাজারে বেশ ইতিবাচক ভাব দেখা গেছে, তবুও
বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ উচ্চপর্যায়েই থাকবে।
তিনি আরো বলেন, বিশ্বের
সামাজিক, পরিবেশগত, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নতুন যেসব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে, তা
সামাল দেয়ার জন্য নতুন অর্থনৈতিক মডেল গ্রহণ করা শুরু হয়েছে।
হ্যারিস বলেন, যেহেতু
বৈশ্বিক অর্থনীতির সংকট ও মার্কিন-চীন বাণিজ্য বিবাদ চূড়ান্ত পর্যায়ের দিকে পৌঁছাচ্ছে, তাই
আশা করছি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাণিজ্যযুদ্ধে বিরতি আসতে পারে এবং
শীর্ষ দুই অর্থনীতির মধ্যে একটি
‘ছোট’ চুক্তিও হতে পারে। কেননা ধারণার তুলনায় বেশ আগেভাগে বাণিজ্য উত্তেজনা
প্রশমিত হতে দেখা যাচ্ছে।
তিনি বলেন, এ
মুহূর্তে আমরা এমন একটি জায়গায় উপনীত হয়েছি,
যেখানে একটি চুক্তি করার জন্য ট্রাম্প প্রশাসনের
কাছে শক্তিশালী কারণ রয়েছে। এক.
সামনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, দুই. মার্কিন
অর্থনীতি শ্লথ হয়ে পড়েছে।
হ্যারিস বলেন, সর্বশেষ
শুল্ক আরোপ করা হয়েছে ভোক্তাপণ্যের ওপর,
যা রাজনৈতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। তাই আমরা মনে করছি, একটি
চুক্তি হওয়ার উচ্চ সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রতিবেদনটিতে বলা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র
ও চীনের মধ্যে একটি অন্তর্বর্তী ও ছোট চুক্তি হলে, তা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে
বাণিজ্য বিবাদ কিছুটা কমাবে এবং মার্কিন নিম্ন সুদহার ও দুর্বল ডলারের কারণে বছরের
মাঝামাঝি বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধিতে ইতিবাচক হওয়া লাগতে পারে।
তবে হ্যারিস উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, মার্কিন
প্রেসিডেন্ট নির্বাচন শেষ হওয়ার পর বাণিজ্য উত্তেজনা ফিরে আসতে পারে। তিনি বলেন, আমরা
মনে করি নির্বাচনের বছরে বাণিজ্যযুদ্ধে বিরতি আসতে পারে, তবে
নির্বাচন শেষ হলে বাণিজ্য বিবাদ আবার বাড়তে পারে।
হ্যারিস বলেন, এটি
গুরুত্বপূর্ণ, কারণ কোনো চূড়ান্ত চুক্তি যদি না হয়, তবে বাণিজ্যযুদ্ধের বিরতি বিশ্ব
অর্থনীতিতে সুবিধা দেবে সীমিত। এজন্য আমরা ধারণা করছি যে প্রবৃদ্ধি খুব একটা বাড়বে
না।
সতর্ক করে দিয়ে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, এখন
থেকে পরবর্তী দুই বছর আমরা কোথায় থাকব তা নিয়ে বহু কোম্পানি চিন্তায় রয়েছে।
বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে ব্যবসায়িক বিনিয়োগ বলতে গেলে প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।
এই প্রতিবেদন অনুসারে, বিশ্বের
প্রতিটি বড় অর্থনীতি চলতি বছর প্রত্যাশার তুলনায় খারাপ পারফরম্যান্স করেছে এবং
বাণিজ্য বিবাদের কারণে বৈশ্বিক ম্যানুফ্যাকচারিং খাত বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
প্রতিবেদনটিতে আরো জানানো হয়েছে যে
প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির দুর্বলতা সামাল দিতে বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো
সুদহার কর্তন করেছে। প্রতিবেদনে আমলে নেয়া ৩৯ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যে ২৪টিই
সুদহার কমিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে,
সুদহার নিয়ে ফেডের পদক্ষেপ অন্য ব্যাংকগুলোকে উৎসাহিত
করেছে, সাহস দিয়েছে।