গোলটেবিল বৈঠকে গভর্নর

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদহার বৃদ্ধির সাময়িক কষ্ট মেনে নিতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ছবি: সংগৃহীত

মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে সুদহার আরো বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এজন্য আগামী এক বছর ব্যবসায়ীদের কিছুটা কষ্ট হলেও তা মেনে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি গভর্নর বলেছেন, ‘সুদহার শতাংশ রেখে দিলে আর টাকা ছাপিয়ে সরকারকে সহায়তা করলে ছয় মাসের মধ্যে শ্রীলংকা পরিস্থিতি হতে পারে তাই টাকা না ছাপিয়ে ডলার বিক্রি না করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

প্রথম আলো আয়োজিতব্যাংক খাতকে কোথায় দেখতে চাইশীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে গভর্নর মন্তব্য করেন রাজধানীর কারওয়ান বাজারে পত্রিকাটির কার্যালয়ে গতকাল গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়

এতে অংশ নেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ, ইস্টার্ণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আলী রেজা ইফতেখার, গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক মনজুর হোসেন, দি সিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান আজিজ আল কায়সার, ব্যাংক এশিয়ার চেয়ারম্যান রোমো রউফ চৌধুরী, ইসলামী ব্যাংকের সাবেক এমডি ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মান্নান, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) অধ্যাপক শাহ মো. আহসান হাবীব, লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের এমডি হুমায়রা আজম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুশাদ ফরিদী। আলোচনার শুরুতে সূচনা বক্তব্য দেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান এবং সঞ্চালনা করেন হেড অব অনলাইন শওকত হোসেন।

বাড়তি দ্রব্যমূল্যের কারণেই জনতা রাস্তায় নেমে এসেছিল মন্তব্য করে আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘কয়েকটি পরিবার ব্যাংক খাত থেকে লাখ কোটি টাকা নিয়ে গেলেও আমরা শ্রীলংকা মতো পরিস্থিতিতে পড়িনি, এটা বড় বিষয় তবে টাকা ছাপিয়ে সবাইকে সন্তুষ্ট রাখা সহজ ব্যাপার কিন্তু তখন মূল্যস্ফীতি ১৫ শতাংশের পরে উঠে যাবে সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল না হলে বিনিয়োগও হবে না তাই আগামী ছয়-নয় মাস কিছুটা কষ্ট হলেও ব্যবসায়ীদের ধৈর্য ধরতে হবে সুদহার - শতাংশে থাকার সময়ও দেশে বিনিয়োগ বা রফতানি বাড়েনি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এলে সুদহারও শতাংশে চলে আসবে।’

সুদহার বৃদ্ধির বিরোধিতা করে অবশ্য ব্যবসায়ী নেতা এ কে আজাদ বলেন, ‘মূল্যস্ফীতির কথা বলে সুদহার বাড়ানো হলেও এখানে শিল্প বিনিয়োগ কর্মসংস্থানের চিন্তা করা হয়নি গত অর্থবছরে রফতানি আয় কমেছিল প্রায় বিলিয়ন ডলার চলতি অর্থবছরে তা বিলিয়ন ডলার কমে যেতে পারে

ব্যবসায়ীদের অবস্থা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘গ্যাসের দাম বেড়েছে ২৮৮ শতাংশ, বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ৩৩ শতাংশ, পরিবহন খরচ বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ সব মিলিয়ে সামগ্রিক ব্যবসার খরচ বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ কিন্তু এর বিপরীতে রফতানি পণ্যের দাম কমে গেছে শতাংশের বেশি এর মধ্যে আবার ব্যাংক ঋণের সুদহার বাড়ছে প্রতিনিয়ত এমন অবস্থায় দেশের বিনিয়োগে রফতানি আরো কমতে পারে অন্যদিকে পাকিস্তানের রফতানি প্রবৃদ্ধি প্রায় ১০ শতাংশ বেড়েছে তাদের দেশের মূল্যস্ফীতিও শতাংশের মধ্যে নিয়ন্ত্রিত আছে কিন্তু ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রার অমূল্যায়ন করায় তারা রফতানির অ্যাডভান্টেজ পাচ্ছে তাই আমাদেরও ব্যবসা টিকিয়ে রাখার মতো মুদ্রানীতি গ্রহণ করতে হবে’  

বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক . ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘সুদহারের সঙ্গে বিগত সময়ে আমরা দেশী-বিদেশী বিনিয়োগের তেমন সংযোগ দেখতে পাইনি বরং বিনিয়োগের কথা বলে ব্যাংক খাতে রাজনৈতিক দুবৃত্তায়ন হয়েছে এখন ফায়ার ফাইটিংয়ে কাজ চলছে ভবিষ্যতে সংস্কারকাজেও হাত দেয়া হবে

সিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান আজিজ আল কায়সার বলেন, ‘ব্যাংকের শাখা ম্যানেজার ঋণ দেয় আর সেই ঋণ খেলাপি হয়ে গেলে এমডি দায় নেয় না ফলে খেলাপি ঋণ বেড়ে যায় তাই আমরা কেন্দ্রীয়ভাবে সমন্বিত ঋণ প্রদান ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি আর শাখা পর্যায়ে সর্বোচ্চ ২৫ কোটি টাকা ঋণের অনুমোদন দিয়েছিলাম

ট্যাক্স রিটার্ন পদ্ধতির কারণে ব্যাংকের কার্ডধারীর সংখ্যা বাড়ছে না জানিয়ে কার্ডের ঋণসীমা ২০ লাখে উন্নীত করার দাবি জানান তিনি

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন