কুমিল্লার বুড়িচংয়ে পানিসম্পদ উপদেষ্টা

নদী দখলকারীদের উচ্ছেদে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি : সংগৃহীত

পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ‘নদী দখলকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দখলকারীদের তালিকা আছে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। দেশের সব নদী দখলমুক্ত করতে দুই মাসের মধ্যে কর্মপরিকল্পনা জমা দেয়ার সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে বিভাগীয় কমিশনারদের। জনগণের সহযোগিতায় নদী, খাল ও জলাশয়গুলো দখলমুক্ত করা সম্ভব হবে।’

গতকাল কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলায় সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত গোমতী নদীর ভাঙন এলাকা পরিদর্শনের পর সাংবাদিকদের ব্রিফকালে এসব কথা জানান তিনি।

পানিসম্পদ উপদেষ্টা জানান, ভারতের কাছ থেকে বন্যা ও বৃষ্টিপাতের তথ্য চাওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘পানি ভাগাভাগির বিষয়ে আলোচনা হতে পারে, কিন্তু কখন গেট খোলা হবে তা জানাতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’ এছাড়া তিনি জানান, ভারত ছাড়াও নদীভিত্তিক অন্যান্য দেশকে নিয়ে বহুপক্ষীয় আলোচনারও উদ্যোগ নেয়া হবে।

উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ‘ইলিশ ভারতে উপহার হিসেবে যাচ্ছে না। ইলিশ রফতানি করা হবে। রফতানির টাকা বাংলাদেশ সরকার পাবে। সেটা খুব ছোট করে দেখার মতো টাকা না।’

গতকাল নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মুছাপুর রেগুলেটর এলাকা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।  

রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে ইলিশ এখনো যায়নি। শুধু একটা সিদ্ধান্ত হয়েছে। তার আগেই তো দাম বেড়ে গেছে। কাজেই রফতানি হলে দাম বাড়বে এ কথাটা ঠিক না, যেটা সরকারের বিবেচনায় আছে। যারা ইলিশ চাচ্ছে, তারাও কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ওপার থেকে অনেক সমর্থন দিয়েছে। সেটা আমরা দেখেছি। প্রতিবেশীর সঙ্গে অনেক বিষয়ে আমাদের আলাপ-আলোচনা করতে হবে। সেই আলোচনার দ্বারটা ছোট ছোট বিষয়ে বন্ধ হয়ে যাক, সেটা চাই না।’

নদী থেকে বালি উত্তোলনজাতীয় দস্যুতায় পরিণত হয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন পরিবেশ উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘যেখানেই নদীতে বালি আছে সেখানেই জেলা প্রশাসকরা মানুষের শত আপত্তি সত্ত্বেও রাজস্ব আয়ের কথা চিন্তা করে বালুমহাল ঘোষণা করে দেয়। বালুমহাল ঘোষণার যেমন সুযোগ আছে তেমনি বিলুপ্তিরও সুযোগ আছে। বালি উত্তোলনের মাধ্যমে নদীর ড্রেজিং কি বালি ব্যবসায়ীদের কাছে তুলে দেব, নাকি সরকারিভাবে ড্রেজিং করা হবে তা আমাদের ভাবার সময় এসেছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘মুছাপুর নদীর পাড়ে আসার কারণ হচ্ছে, সমস্যাটা সরকারের চশমা দিয়ে না দেখে মানুষের চোখ দিয়ে দেখার জন্য। মানুষ আর সরকার ভিন্ন সত্তা হলে পরিবর্তন হবে না। মানুষ আর সরকার এক জায়গায় এসে সমস্যার সমাধানে যেতে হবে। আমরা নদীতীরবর্তী এলাকায় এসে স্থানীয় মানুষের কথা শুনলাম।

 সরকারি হিসাবমতে, প্রতি বছর নদীভাঙনে ৩০ হাজার মানুষ সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায়, যেটি বেসরকারি হিসাবে এক লাখের বেশি।’

লোনা পানির আগ্রাসন ঠেকাতে মুছাপুর রেগুলেটর লাগবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘রেগুলেটর দিনে দিনে তৈরি করা সম্ভব না। এটার একটা প্রক্রিয়া আছে। আমরা যদি দ্রুতগতিতেও রেগুলেটর নির্মাণ করতে চাই তাও দুই-তিন বছর সময় লাগবে। এখানে যে চর হয়েছে সেখানের বালি সরিয়ে দেয়ার জন্য এলাকাবাসী প্রস্তাব দিয়েছে। নদীতে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের পাশাপাশি মেইনটেন্যান্স ড্রেজিং করতে হবে। সরকারকে রেগুলেটর আর ড্রেজিং দুটোর কথাই ভাবতে হচ্ছে। সবচেয়ে কার্যকর কোনটি হবে তা আমরা ভেবে দেখব। যেটি কার্যকর হবে সেটিই আগে বাস্তবায়ন হবে।’


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন