শ্বেতি রোগ

যথাযথ চিকিৎসায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শ্বেতি রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব

ডা. এহছান-উজ-জামান খান

ছবি : বণিক বার্তা

শ্বেতি রোগ হলো এক ধরনের অটোইমিউন ডিজিজ, রোগে শরীরের ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধকারী ক্ষমতা নিজের শরীরের কোষ ধ্বংস করে। শ্বেতি রোগের ক্ষেত্রে শরীরের রঙ নির্ণয়ের যে রঞ্জক মেলানিন তার উৎপাদন হ্রাস পায় বা ধ্বংস হয়ে যায়।

কারণ

 জেনেটিক বা বংশগতীয়: ৩০টির বেশি জিনের শ্বেতি রোগের ওপর প্রভাব আছে বলে মনে করা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, ৩০ ভাগ শ্বেতি রোগীর ক্ষেত্রে তাদের পরিবারের অন্য কোনো সদস্যের মাঝে রোগ আছে।

 শারীরিক বা মানসিক চাপ: এর ফলে মেলানোসাইট      উৎপাদন কমে যায়।

  বিভিন্ন প্রসাধনী, রাসায়নিক, দীর্ঘদিন ধরে প্লাস্টিকের স্যান্ডেল বা বেল্টের ব্যবহার। শ্বেতি রোগী যদি কোথাও আঘাত পায় বা কেটে যায় সেই জায়গায়ও শ্বেত দেখা দিতে পারে।

বিশ্বজুড়ে প্রাদুর্ভাব

পৃথিবীর দশমিক থেকে শতাংশ মানুষ রোগে আক্রান্ত।

কোন বয়সে কাদের বেশি হয়: রোগ যেকোনো বয়সে হতে পারে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ২০-৩০ বছরের মধ্যে প্রদর্শিত হয়। তবে চল্লিশের পরে রোগে আক্রান্তের সংখ্যা খুবই কম। এখানে উল্লেখ্য যে চার ভাগের এক ভাগ শ্বেত রোগীর ক্ষেত্রেই ১০ বছরের আগেই লক্ষণ প্রকাশ পায়। নারী পুরুষ উভয়েই সমানভাবে রোগে আক্রান্ত হয়।

কীভাবে রোগটি প্রকাশ পায়: আক্রান্ত রোগী শরীরে দুধ সাদা বা চকের মতো সাদা দাগ বা চাকা দেখতে পায়। এসব আক্রান্ত স্থানে কোনো জ্বালাপোড়া, চুলকানো বা অন্য কোনো সমস্যা দেখা দেয় না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রোগী অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে অনেকে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। শরীরের যেকোনো স্থানে রোগ দেখা দিতে পারে এমনকি মুখগহ্বর, মাথার চুলসহ তালু, যৌনাঙ্গও আক্রান্ত হতে পারে।

প্রকারভেদ

জেনারেলাইজড: শরীরের অনেক অংশে যখন একসাথে রোগ দেখা দেয়।

সেগমেন্টাল: শরীরের একপাশে যখন রোগ দেখা দেয়।

লোকালাইজড: যখন শরীরের একটি মাত্র অংশে রোগের আবির্ভাব হয়।

অ্যাক্রোফেশিয়াল: মুখ হাত, বিশেষ করে ঠোঁট ফিঙ্গার টিপ আক্রান্ত হয়।

অন্যান্য রোগের সঙ্গে সম্পর্ক: অন্যান্য অটোইমিউন ডিজিজ যেমন থাইরয়েড ডিসঅর্ডার, ডায়াবেটিস, এলোপেসিয়া এরিয়াটা, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস ইত্যাদি শ্বেতি রোগের সঙ্গে প্রকাশিত হতে পারে। সাধারণত ১০-১৫ শতাংশ শ্বেত রোগী থাইরয়েড ডিসঅর্ডারে ভোগেন।

খাবারের সঙ্গে সম্পর্ক: সাধারণত খাবারের সঙ্গে রোগ বেড়ে যাওয়ার তেমন কোনো সম্পর্ক নেই। তবে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টযুক্ত খাবার যেমন সবুজ শাকসবজি, চিনাবাদাম ইত্যাদি শ্বেতি রোগের জন্য উপকারী।

রোগ নির্ণয়ে পরীক্ষা: শরীরের যেকোনো সাদা দাগ হলেই শ্বেতি রোগ নয়। একজন বিশেষজ্ঞ চর্মরোগ চিকিৎসক উডস ল্যাম্প পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ সহজেই নির্ণয় করতে পারেন। তবে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে রোগের সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য অটোইমিউন ডিজিজ নির্ণয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যেতে পারে।

চিকিৎসা: শ্বেতি রোগের চিকিৎসা যদি শুরুতেই সঠিকভাবে শুরু করা যায় তাহলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। যত কম বয়সে চিকিৎসা শুরু করা যাবে ফলাফল তত বেশি ভালো হবে। রোগে বিভিন্ন ধরনের ক্রিম (কর্টিকোস্টেরয়েড, ক্যালসিনুরিন ইনহিবিটরস), মুখে খাবার ওষুধ (স্টেরয়েড, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট) ব্যবহৃত হয়। শ্বেতি রোগের চিকিৎসায় ফটোথেরাপি অত্যন্ত কার্যকর। বাংলাদেশের কয়েকটি সেন্টারে অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে থেরাপি দেয়া হয়।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্বাভাবিক চামড়া/কোষ নিয়ে আক্রান্ত স্থানে বসানো হয় যাকে আমরা বলি শ্বেত রোগ সার্জারি। ধরনের সার্জারি বর্তমানে বাংলাদেশে বেশকিছু সেন্টারে সফলভাবে করা হয়।

ডিপিগমেন্টেশন থেরাপি: যখন ত্বকের ৬০-৮০ ভাগেরও বেশি অংশ শ্বেত রোগে আক্রান্ত হয় তখন ওষুধের মাধ্যমে শরীরের স্বাভাবিক অংশের চামড়াকে শ্বেত রোগের চামড়ার সঙ্গে মিলিয়ে দেয়া হয়।

পরিশেষে: শ্বেতি রোগের চিকিৎসা একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া, ধৈর্য সহকারে সঠিক চিকিৎসা নিলে আমরা রোগে আক্রান্ত রোগীদের ভালো ফলাফল দেখতে পাই। রোগ মোটেই ছোঁয়াচে নয় এবং রোগে আক্রান্ত রোগীদের বিয়েশাদি সন্তান জন্মদানে কোনো রকম বাধা নেই।

লেখক: চর্ম, যৌন অ্যালার্জি রোগ বিশেষজ্ঞ

কনসেপ্ট হাসপাতাল, ফেনীw

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন