অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের পর শ্রীলংকায় প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আগামীকাল

বণিক বার্তা ডেস্ক

ছবি : বণিক বার্তা

নজিরবিহীন অর্থনৈতিক বিপর্যয় ও সেখান থেকে প্রায় পুনরুদ্ধারের পর শ্রীলংকায় প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামীকাল। রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, দেশটির প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীরা নির্বাচনের ৪৮ ঘণ্টা আগে বুধবার তাদের প্রচারণা শেষ করেছেন। এবারের নির্বাচনে ভোট দেয়ার কথা রয়েছে ১ কোটি ৭০ লাখেরও বেশি শ্রীলংকানের। 

২০২২ সালে অর্থনৈতিক মন্দার কারণে বিক্ষোভের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ ত্যাগ করেন তখনকার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজপাকসে। পরে ওই বছরের জুলাইয়ে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা গ্রহণ করেন ৭৫ বছর বয়সী রনিল বিক্রমাসিংহে। রাজাপাকসে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তার সরকারের মেয়াদের বাকি সময় দায়িত্ব পালনের জন্য বিক্রমাসিংহেকে নির্বাচিত করে দেশটির পার্লামেন্ট। 

তিনি ক্ষমতা গ্রহণের পর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণসহায়তা নিয়ে দেশের অর্থনৈতিক বিপর্যয় অনেকটাই কাটিয়ে তুলেছে শ্রীলংকা। ২০২২ সালে দেশটিতে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭০ শতাংশ। আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী, সেটি এখন ৫ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। স্থানীয় মুদ্রা শক্তিশালী হওয়ার পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও নিরাপদ মাত্রায় উঠে দাঁড়িয়েছে। তবে এক্ষেত্রে দেশটির সরকারের চেয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীন ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ এবং সংস্কারকে কৃতিত্ব দেয়া হয় বেশি।  

তবে রনিল বিক্রমাসিংহে দায়িত্ব নেয়ার পর সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছেন চীনসহ দ্বিপক্ষীয় ঋণদাতাদের সঙ্গে ৪৬ বিলিয়ন ডলারের বিদেশী ঋণ পুনর্গঠনে সাফল্যের জন্য। রাজাপাকসে প্রশাসন খেলাপি হওয়ার পর আইএমএফের বেইলআউটসহ বৈদেশিক ঋণ নিয়ে দ্বিপক্ষীয় ও আন্তর্জাতিক সহযোগীদের সঙ্গে সফলতার সঙ্গে আলোচনা সমাপ্ত করতে সক্ষম হয়েছেন রনিল বিক্রমাসিংহে। তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর শ্রীলংকার অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানো এবং খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধ ঘাটতির অবসান ঘটানোকে সামনে এনে রনিল বিক্রমাসিংহে নতুন করে ম্যান্ডেট চাইছেন এবার। 

যদিও রয়টার্সের এক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, তার সরকারের কর বৃদ্ধি ও উদার ইউটিলিটি ভর্তুকি প্রত্যাহার করে লেনদেন ভারসাম্য বজায় রাখার নীতি জনগণের কাছে বেশ সমালোচিত হয়েছে। 

এ নির্বাচনে অনুরা কুমারা দিসানায়াকাসহ কয়েকজন শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বীর মুখোমুখি হবেন বিক্রমাসিংহে। একসময়ের প্রান্তিক মার্ক্সবাদী নেতা দিসানায়াকার দল ১৯৭০ ও ১৯৮০-এর দশকে দুটি ব্যর্থ অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেয়। তার পর থেকেই জনপ্রিয়তার তলানিতে থাকা দিসানায়াকার দলটি গত সংসদ নির্বাচনে ৪ শতাংশেরও কম ভোট পায়। তবে দ্বীপের দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতির সংস্কৃতি পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি নিয়ে নির্বাচনের প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। 

এবারের নির্বাচনে আরেকজন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিদ্বন্দ্বী বিরোধী নেতা সজিথ প্রেমাদাসা। কয়েক দশক ধরে চলা গৃহযুদ্ধের মধ্যে ১৯৯৩ সালে নিহত সাবেক প্রেসিডেন্ট রানাসিংহ প্রেমাদাসার ছেলে সজিথ। এ নির্বাচনে তিনি বেশ ভালো করবেন বলে মনে করা হচ্ছে। নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি আইএমএফের কাছ থেকে শিথিল শর্ত আদায় ও জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

এছাড়া নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন প্রভাবশালী রাজাপাকসে পরিবারের বংশধর নামাল রাজাপাকসে। তার বাবা মাহিন্দা ও চাচা গোতাবায়া। বিক্রমাসিংহের জয় মোকাবেলায় দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখার কঠিন কাজের মুখোমুখি হতে হবে তাকে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এবারের নির্বাচনে জয়লাভ নামালের লক্ষ্য নয়। বরং পরবর্তী নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবেই এবার ভোটে দাঁড়িয়েছেন তিনি। 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন