মানিকগঞ্জে খাল খনন ও ওয়াকওয়ে নির্মাণ

সময় ও ব্যয় বাড়িয়েও শেষ করা হয়নি প্রকল্পকাজ

মনিরুল ইসলাম মিহির, মানিকগঞ্জ

মানিকগঞ্জ শহরের গঙ্গাধরপট্টিতে নির্মীয়মাণ ওয়াকওয়ে ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

মানিকগঞ্জ শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া খালটির দৈর্ঘ্য ছয় কিলোমিটার। শহরের অংশে খাল খনন ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ শুরু হয় ২০২২ সালে। প্রকল্পের আওতায় তিনটি সেতু, একটি পাবলিক টয়লেট ও দুই পাশে ওয়াকওয়ে নির্মাণের কথা রয়েছে। এ কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৫ কোটি ১ লাখ ৫৯ হাজার ৪ টাকা। চলতি বছরের জুনে কাজটি শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে এখন পর্যন্ত ৬০-৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এরই মধ্যে প্রকল্পের ব্যয় আরো ৩ কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ আরো ছয় মাস বাড়ানোর জন্যও আবেদন করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

পৌরসভার বাসিন্দাদের অভিযোগ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণেই খাল খনন ও দুই পাশে ওয়াকওয়ে নির্মাণে ধীরগতি। সড়ক খুঁড়ে রাখার কারণে ভোগান্তিতে পড়েছে পৌরবাসী। আর  লোকসান গুনছেন ওই এলাকার ব্যবসায়ীরা।

পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮ সালে পৌর শহরের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া খালের প্রথম সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ শুরু হয়। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে প্রায় ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সে সময় খালটির দুই পাড় ব্লক দিয়ে বাঁধানো হয়। এছাড়া খালের এক পাড়ে চার ফুট চওড়া ওয়াকওয়ে (হাঁটার রাস্তা) এবং পথচারীদের বসার জন্য বেঞ্চও নির্মাণ করা হয়। ২০২২ সালে দ্বিতীয় নগর অঞ্চল উন্নয়ন (সিআরডিপি-২) প্রকল্পের আওতায় খালটি পুনঃখনন ও সৌন্দর্যবর্ধন, তিনটি সেতু এবং একটি পাবলিক টয়লেট নির্মাণ প্রকল্প আহ্বান করে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। এজন্য ব্যয় ধরা হয় ২৫ কোটি ১ লাখ ৫৯ হাজার ৪ টাকা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অ্যাপেক্স এন্টারপ্রাইজ ও মেসার্স কামরুল অ্যান্ড ব্রাদার্স (জেভি) কাজটি পায়।

এ ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অ্যাপেক্স এন্টারপ্রাইজের প্রতিনিধি লাবলু মিয়া বণিক বার্তাকে বলেন, ‘খাল পুনঃখনন, সৌন্দর্যবর্ধন, তিনটি সেতু ও একটি টয়লেট নির্মাণ শেষ হয়েছে। গঙ্গাধরপট্টি সড়কে মার্চ থেকে স্যুয়ারেজ ড্রেনের কাজ চলমান।’ প্রকল্পের কাজ নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করতে না পারায় শহরবাসীকে সাময়িক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বলেও স্বীকার করেন তিনি। তবে আগামী ছয় মাসের মধ্যে কাজটি শেষ করার কথা জানান তিনি।

সরজমিনে দেখা গেছে, তিনটি সেতু ও একটি টয়লেট নির্মাণ শেষ হলেও খালের দুই পাশে ওয়াকওয়ের কাজ অর্ধেকও শেষ হয়নি। চলতি বছরের মার্চের মাঝামাঝি খোঁড়াখুঁড়ির কারণে গঙ্গাধরপট্টি সড়ক ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। বর্তমানে ওই সড়কে স্যুয়ারেজ লাইনের কাজ চলছে। গঙ্গাধরপট্টি আবাসিক এলাকায় এক হাজারের বেশি বাড়িঘর রয়েছে। বেশকিছু সরকারি ও আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। ওই সড়ক ধরে সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ ও সরকারি মহিলা কলেজে যাতায়াত করে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। তারাও চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। দীর্ঘদিন সড়কটির কাজ বন্ধ থাকায় আশপাশের অর্ধশতাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানও লোকসান গুনছে।

গঙ্গাধরপট্টি এলাকার লিটন এন্টারপ্রাইজের মালিক কাজী হুমায়ূন কবির লিটন বলেন, ‘আমার রড ও সিমেন্টের ব্যবসা প্রায় চার মাস ধরে বন্ধ। সড়ক খোঁড়াখুঁড়ির কারণে আমি পণ্য বিক্রি করতে পারছি না। এখানে কোনো গাড়ি আসতে পারে না। কিন্তু আমার বিদ্যুৎ বিল, প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীর বেতন দিতে হচ্ছে। আগে প্রতি মাসে গড়ে ১ লাখ টাকার মতো লাভ হতো। আর এখন জমানো টাকা থেকে খরচ করতে হচ্ছে।’

স্থানীয় বাসিন্দা কাজী ফারুক আহমেদ বলেন, ‘এর আগেও পৌরসভা খাল খননের নামে অর্থ অপচয় করেছে। সংস্কার হয়নি।  কিছুদিন যেতে না যেতেই খালটি আগের অবস্থায় ফিরে আসে। এখন আবার শুরু হয়েছে। কাজ চলছে ধীরগতিতে। কখন কাজ শেষ হবে, তাও বলা যাচ্ছে না। আমাদের চলাফেরা করতে সমস্যা হচ্ছে।’

পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তসলিম মিয়া বলেন, ‘নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ না হওয়ার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানই দায়ী। তাদের নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করার জন্য বারবার পৌরসভা থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে। কাজ শেষ না হওয়ায় অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।’

এ ব্যাপারে পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী গিয়াস উদ্দিন খান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘চলতি বছরের জুনে সিটি রিজিয়ন ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের (সিআরডিপি-২) কাজটি শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে নির্দিষ্ট সময়ে তা শেষ হয়নি। সব মিলিয়ে প্রকল্পের প্রায় ৬০-৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্প পরিচালক বরাবর ছয় মাস সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন করা হয়েছে। জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় প্রকল্পের ব্যয় আরো ৩ কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন