রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার মতবিনিময়

সংবিধানের বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মতবিনিময় করেন ছবি: পিআইডি

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সংবিধান সংস্কারের দাবি উঠছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে সুস্পষ্ট প্রস্তাব চেয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় গতকাল বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা মতবিনিময় করেন। 

দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘সংবিধান সংস্কারের বিষয়টি কীভাবে বাস্তবায়ন হবে, মতবিনিময় সভায় তা নিয়ে বেশ কয়েকটি প্রস্তাব এসেছে। আদালতের মাধ্যমেও এ সিদ্ধান্ত আসতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলোও এ বিষয়ে কিছু পরামর্শ দিয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন গণভোটের কথা। কেউ বলেছেন আপাতত একটা সংবিধানবিষয়ক কমিশন তৈরি করে সংবিধানে কী ধরনের পরিবর্তন দরকার, তা নির্ধারণ করা। তবে এসব বিষয়ে এখনো কোনো স্পষ্ট ধারণা আসেনি। প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলো থেকে লিখিত আকারে মতামত চেয়েছেন। সবার মতামত পর্যালোচনার করে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংবিধান সংশোধন অথবা পরিবর্তন বা পরিবর্ধন যেটা প্রয়োজন হয়, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।’

মতবিনিময় সভা শুরু হয় বেলা ৩টায়। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে প্রথমে বৈঠক করেন ছয়টি ইসলামী দল—খেলাফত মজলিস, নিজামে ইসলাম, হেফাজতে ইসলাম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলন ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের জ্যেষ্ঠ নেতারা। এরপর বিকাল ৪টায় ইসলামী আন্দোলনের নেতারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ধারাবাহিকভাবে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), জাতীয়তাবাদী সমন্বয় জোট, ১২ দলীয় জোট, বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, গণফোরাম ও জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করেন, যা চলে রাত ৮টা পর্যন্ত।

বৈঠকে সরকারের পক্ষে আরো উপস্থিত ছিলেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, ধর্ম উপদেষ্টা এএফএম খালিদ হোসেন ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম। 

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এ মতবিনিময় একটি চলমান প্রক্রিয়ার অংশ বলে জানান প্রেস সচিব শফিকুল আলম। প্রয়োজনীয় রাষ্ট্রীয় সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকারকে যৌক্তিক সময় দেয়ার ব্যাপারে দলগুলো একমত হয়েছে বলেও জানান তিনি। 

প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, রাষ্ট্রকে মেরামতের জন্য এ সময়টা জাতির জন্য একটা সুবর্ণ সুযোগ। এ সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে হবে। সবাইকে এ সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে, যাতে আমরা দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার করতে পারি। এ সংস্কারটা যেন অনেক অনেক বছর থাকে। বাংলাদেশের মানুষ যাতে এটার সুফল উপভোগ করতে পারে।’

ইসলামী দলগুলো ২০১৩ সালে হেফাজতের আন্দোলন, ২০১৬ ও ২০২১ সালে নরেন্দ্র মোদির আগমনকে ঘিরে হওয়া প্রতিবাদে নিহতের ব্যাপারে দ্রুত তদন্ত চেয়েছে। এ তথ্য জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, ‘ইসলামী দলগুলোর অনেকে শিক্ষানীতি সংস্কারের কথা বলেছেন। অনেকে প্রপোরশন অব রিপ্রেজেন্টেটিভের (আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) বিষয়ে কথা বলেছেন। এটা নিয়ে অনেক জায়গায় বিতর্ক আছে। এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানতে চেয়েছেন উপদেষ্টা। সবকিছু নিয়ে একটা সুস্পষ্ট প্রস্তাব চেয়েছেন তিনি। এরপর সামনে একটা রূপরেখা দেবেন।’

ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা সংস্কারের রূপরেখা দেবেন। এর ভেতরেই অন্তর্ভুক্ত থাকবে কখন, কীভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হবে। গণ-অভ্যুত্থানের ভিত্তিতে সরকার গঠিত হয়েছে। সরকারের দায়িত্ব রাষ্ট্র মেরামত। এজন্য রাজনৈতিক দলগুলো তাদের প্রস্তাবের মধ্য দিয়েই বলে দেবে তারা বর্তমান সরকারকে কতটুকু সময় দেবে। তার পরই ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয় আসবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন