সাগরে গভীর নিম্নচাপ

ভারি বৃষ্টিতে প্লাবিত হতে পারে আট জেলার নিম্নাঞ্চল

নিজস্ব প্রতিবেদক

টানা বৃষ্টিতে লক্ষ্মীপুরের নিম্নাঞ্চলে তৈরি হয়েছে জলাবদ্ধতা ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে দেশের অধিকাংশ স্থানে বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও অতিভারি বর্ষণ হতে পারে বলেও আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। অন্যদিকে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, ভারি বৃষ্টির কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার কিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে।

আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক জানান, দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি ঘনীভূত হয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়ে যশোর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছিল। এটি বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থান করছে। এটি আরো পশ্চিম ও উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় গভীর সঞ্চরণশীল মেঘমালা সৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও সমুদ্রবন্দরগুলোর ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। তাই চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলেছে আবহাওয়া অফিস।

আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আজ রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে অতিভারি বর্ষণ হতে পারে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।

এদিকে টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে কয়েক দিন ধরে পানিবন্দি ছিল কক্সবাজারের কয়েক লাখ মানুষ। গতকাল প্লাবিত গ্রামগুলো থেকে পানি নামতে শুরু করে। তবে ঘরবাড়ির পাশাপাশি রাস্তাঘাট, খেতখামার ও মাছের ঘেরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পানিতে ডুবে ও পাহাড়ধসে মৃত্যু হয়েছে নয়জনের। অন্যদিকে ট্রলারডুবির ঘটনায় চারজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। 

আবহাওয়া অফিস কক্সবাজার কার্যালয়ের কর্মকর্তা আবদুল হান্নান গতকাল দুপুরে জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজারে ২১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। ভারি বৃষ্টিতে কক্সবাজারের প্রায় ৯০ শতাংশ এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। তলিয়ে যায় প্রধান সড়কসহ শহরের ৫০টি উপসড়ক।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বিভীষণ কান্তি দাশ জানান, টানা বৃষ্টির কারণে কক্সবাজারের অনেক এলাকা পানির নিচে। পানিবন্দি মানুষকে সহায়তার জন্য নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। এদিকে সাগরে গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে চাঁদপুর নদীবন্দর থেকে নারায়ণগঞ্জ নৌপথে সব ধরনের নৌ-চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। চাঁদপুর বিআইডব্লিউটিএর উপপরিচালক বশির আলী খান জানান, শুধু ঢাকা ও চাঁদপুরের মধ্যে নৌযান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।

বরিশালের অভ্যন্তরীণ ১০ রুটের লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নদীবন্দর কর্মকর্তা ও বিআইডব্লিউটিএ বরিশালের উপপরিচালক মো. আব্দুর রাজ্জাক।

টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে বরিশাল নগরীর বিভিন্ন এলাকা। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা।

এদিকে শুক্রবার রাত থেকে গতকাল দিনভর বৃষ্টি হওয়ায় জলাবদ্ধতা আরো স্থায়ী হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে নোয়াখালীতে। বন্যার কারণে গত মাসের প্রায় পুরো সময় পানিবন্দি ছিল নোয়াখালীর অন্তত ২১ লাখ মানুষ। বেশি দুর্ভোগে ছিল সদর, কবিরহাট, বেগমগঞ্জ, সেনবাগ, সোনাইমুড়ি, চাটখিল ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মানুষ। 

জেলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার দুপুর ১২টা থেকে ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ১২৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী দুই-তিনদিন বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে।

বৈরী আবহাওয়ার কারণে হাতিয়ার সঙ্গে নৌ-যোগাযোগ বন্ধ ঘোষণা করেছে উপজেলা প্রশাসন। এর আগে শুক্রবার বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ছয়-সাতটি মাছ ধরার ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটে। এসব ট্রলারের মাঝিমাল্লারা অন্যান্য ট্রলারের সহযোগিতায় তীরে ফিরে আসেন। 

বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে লক্ষ্মীপুরে ভারি বর্ষণ হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে শুরু হওয়া বৃষ্টিপাত গতকালও অব্যাহত ছিল। বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে বিভিন্ন এলাকায়। নিম্নাঞ্চলে ফের বন্যার আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে। 

স্থানীয়রা জানান, যেসব এলাকা বন্যায় তলিয়ে ছিল, কয়েক দিন ধরে ওইসব এলাকার পানি নামতে শুরু করে। কোনো কোনো এলাকা থেকে পানি একেবারে নেমে যায়। তবে শেষ দুদিনের বৃষ্টিতে আবারো কোথাও কোথাও পানি উঠে গেছে। তলিয়ে গেছে চলাচলের রাস্তা। 

আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র অবজারভার সোহরাব হোসেন গতকাল দুপুরে জানান, শুক্রবার থেকে ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত আছে।

ফেনীতে এ মুহূর্তে বন্যার আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদ শাহরিয়ার। তিনি বলেন, ‘জেলায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। স্থানীয় নদ-নদীর পানি এখনো স্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছে। মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রাবহিত হচ্ছে। আপাতত বন্যার কোনো আশঙ্কা নেই।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন