ডিলারশিপ ছাড়তে চাপ, অনেকে পলাতক

যশোরে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিতরণ নিয়ে সংশয়

আব্দুল কাদের, যশোর

ছবি : বণিক বার্তা ( ফাইল ছবি)

সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে ডিলারের মাধ্যমে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিতরণ করে সরকার। যশোরে ডিলার রয়েছেন ২৬২ জন। ৫০০ কার্ডের বিপরীতে একজন ডিলার নিয়োগ দেয়া হয়। তার কাছ থেকে একজন কার্ডধারী ১৫ টাকা কেজি দরে ৩০ কেজি চাল কিনতে পারেন। তবে অধিকাংশই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর থেকেই পলাতক রয়েছেন অধিকাংশ ডিলার। অনেককে ডিলারশিপ ছাড়তে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ অবস্থায় ডিলার সংকটের পাশাপাশি চলতি মাসে চাল বিতরণ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মণিরামপুরে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির সেপ্টেম্বরের জন্য ৭০০ টন চাল বরাদ্দ এসেছে আগস্টে। ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে চাল তুলে বিতরণের জন্য ডিলারদের নির্দেশনা দিয়েছিল খাদ্য মন্ত্রণালয়। নির্ধারিত সময় পার হলেও এখন পর্যন্ত কোনো ডিলার ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে চাল উত্তোলন করেননি।

কারণ অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ২৩ হাজার ১৯৫ জন উপকারভোগী রয়েছেন। ১৭টি ইউনিয়নে উপকারভোগীদের কাছে ১৫ টাকা কেজি দরে ৩০ কেজি করে চাল বিক্রির জন্য ডিলার রয়েছেন ৪৬ জন। যাদের সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগের পর অধিকাংশের কাছ থেকে জোর করে কাগজে সই করিয়ে ডিলারশিপ কেড়ে নেয়া হয়েছে। বিষয়টি তারা তাৎক্ষণিক উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক ও নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়েও প্রতিকার পাননি।

নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে কয়েকজন পরিবেশক বলেন, ‘মার্চ, এপ্রিল, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর—এ পাঁচ মাস কার্ডধারীদের কাছে চাল বিক্রি করা হয়। সেপ্টেম্বরের চাল বিতরণের জন্য গত সপ্তাহে খাদ্য অফিস থেকে জানতে চাওয়া হয়েছে, আমরা চাল উত্তোলন করব কিনা। তারা “‍হ্যাঁ” কিংবা “‍না” জবাব চেয়েছে। পরে আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছি। বর্তমান পরিস্থিতিতে নিরাপদে চাল তুলে বিতরণ করতে পারব কিনা সে বিষয়টি নিয়ে আমরা চিন্তিত। এজন্য কেউ চাল তুলতে ব্যাংকে টাকা জমা দেননি।’

মণিরামপুর উপজেলায় এক ডিলার বলেন, ‘রাজনীতির পটপরিবর্তনের পর থেকে চালের ডিলারশিপ ছেড়ে দিতে আমাকে চাপ দেয়া হচ্ছিল। ২০-২৫ জন লোক জোর করে প্রত্যাহার কাগজে সই করিয়ে নিয়েছে। লোকজন সরে যাওয়ার পর আমি বিষয়টি উপজেলা কমিটিকে ফোনে জানিয়েছি।’

নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে আরেক ডিলার বলেন, ‘কিছু লোক এসে আমাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে কাগজে সই করতে বাধ্য করেছে। পরিস্থিতি দেখে কথা বলতে সাহস পাইনি।’

এ ব্যাপারে সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মাজহারুল আনোয়ার বণিক বার্তাকে বলেন, ‘উপজেলা পর্যায়ে ইউনিয়নভিত্তিক খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলার নিয়োগের তালিকাসহ বিভিন্ন কাজের “‍প্রসেসিং” করেন উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক। এ-সংক্রান্ত কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিটিং করে ডিলার নিয়োগ দেন। সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বরের চাল তোলার জন্য ৯ সেপ্টেম্বর ব্যাংকে চালান জমা দিতে হয়। অনেক ডিলার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী হওয়ায় পলাতক রয়েছেন। চালান জমা দেয়ার সময় বোঝা যাবে কয়জন ডিলার অনুপস্থিত থাকছেন। যদি একটি ইউনিয়নের কোনো ডিলার অনুপস্থিত থাকেন, তাহলে ওই ডিলারের চাল বিক্রির দায়িত্ব পাবেন অন্য ডিলার। অনুপস্থিত ডিলারের তালিকা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে মাধ্যমে খাদ্য অধিদপ্তরে পাঠানো হবে। সেই সঙ্গে নতুন ডিলার নিয়োগ দেয়া হবে।’

ডিলাররা বলছেন, সরকার ৪৮-৫০ টাকা কেজি দরে চাল কিনে ভর্তুকি দিয়ে ১৩ টাকায় ডিলারদের কাছে বিক্রি করে। সেই হিসেবে প্রতি ডিলারকে ৫-৬ লাখ টাকার চাল দেয়া হয়। এ চাল উত্তোলন করে ঘরে নেয়ার পথে যদি বেহাত হয়ে যায়, সঠিকভাবে বিতরণ করা না যায়, তখন তার দায় সংশ্লিষ্ট ডিলারের ওপর বর্তাবে। তাকে বাড়তি জরিমানাও গুনতে হবে। উপকারভোগীদের কাছে ১৫ টাকায় চাল বিক্রি করে তাদের ২০-২৫ হাজার টাকা লাভ থাকে। চাল বেহাত হলে তখন লাখ টাকা জরিমানা গুনতে হবে। এ ভয়ে তারা চাল নিতে সাহস পাচ্ছেন না।

মণিরামপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ইন্দ্রজিৎ সাহা বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সেপ্টেম্বর মাসের চালের বরাদ্দের চিঠি এসেছে ১৯ আগস্ট। ১০ সেপ্টেম্বর চাল উত্তোলনের জন্য ডিলারদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। কোনো ডিলার এখন পর্যন্ত ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে চাল উত্তোলন করেননি। কয়েকজন ডিলার আমাদের জানিয়েছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা চাল বিতরণের জন্য উত্তোলন করতে নিরাপদ মনে করছেন না। অনেক ডিলার পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। পরিস্থিতি বিবেচনায় মন্ত্রণালয় থেকে চাল উত্তোলনের সময় বাড়িয়ে ২২ সেপ্টেম্বর করা হয়েছে।’

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির সভাপতি জাকির হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। দেখি কি হয়।’

চাল উত্তোলনের সময় যেসব ডিলার অনুপস্থিত থাকবেন তাদের বাদ দিয়ে বিকল্প ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সেফাউর রহমান।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন