গোপালগঞ্জের ইকোনমিক হিটম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাত

মেহেদী হাসান রাহাত

ছবি : সংগৃহীত

সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা চৌধুরী নাফিজ সরাফাত ২০০৮ সালে রেইস ম্যানেজমেন্ট পিসিএল নামে একটি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানির লাইসেন্স নেন। তার সঙ্গে সহযোগী হিসেবে ছিলেন ড. হাসান তাহের ইমাম। সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানিটি সে সময়ে বিভিন্ন কর্মশালার মাধ্যমে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের মধ্যে বেশ সাড়া ফেলে দিয়েছিল। দেশের মিউচুয়াল ফান্ড খাতের পুরো চেহারাই বদলে দেয়ার কথা বলেছিলেন তারা। যদিও পরে দেশে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগকারীদের অনীহা চরমে ওঠার জন্য দায়ী করা হয় তাদের। পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) আনুকূল্যও পেয়েছেন বিভিন্ন সময়। বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয় থেকেও নানা সুযোগ-সুবিধা বাগিয়ে নিয়েছেন। এক সময়ের ব্যাংক কর্মকর্তা থেকে নাফিজ সরাফাত হয়ে উঠেছিলেন দেশের আর্থিক খাতের অন্যতম প্রভাবশালী মাফিয়া। বাড়ি গোপালগঞ্জে হওয়ার সুবাদে আওয়ামী লীগ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতাও ছিল তার। স্বয়ং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘ফুফু’ বলে সম্বোধন করতেন তিনি। এ ঘনিষ্ঠতাকে কাজে লাগিয়ে হয়ে উঠেছিলেন ক্ষমতাচ্যুত সরকারের আমলের দোর্দণ্ড প্রতাপশালী এক ইকোনমিক হিটম্যান। তার আক্রোশের শিকার হয়ে কারাগারে যেতে হয়েছে লেখক মুশতাক আহমেদ ও কার্টুনিস্ট আহমেদ কবীর কিশোরকে। দুজনের ওপরেই চালানো হয়েছিল ব্যাপক নির্যাতন। এর মধ্যে বন্দি অবস্থায় কারাগারেই মারা যান মুশতাক আহমেদ। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সম্প্রতি দুদকের পক্ষ থেকে নাফিজ সরাফাতের ব্যাংক দখল ও পুঁজিবাজার থেকে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে তদন্ত শুরু করা হয়েছে।

রেইস ২০০৮ সালে যাত্রা শুরুর পর ২০১৩ সালের মধ্যেই ১০টি মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের সম্পদ ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পায়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির অধীনে ১৩টি ফান্ড রয়েছে। মূলত এসব মিউচুয়াল ফান্ডকে ব্যক্তিস্বার্থে অর্থ উপার্জনের কাজে লাগিয়েছেন চৌধুরী নাফিজ সরাফাত ও হাসান ইমাম। ফান্ডের অর্থ বিনিয়োগ করে তৎকালীন ফারমার্স ব্যাংকের (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) শেয়ার কিনে ব্যাংকটির পর্ষদের পরিচালক বনে যান এ দুজন। ব্যাংকটির উদ্যোক্তাদের তালিকায় এ দুজন ছাড়াও নাফিজের স্ত্রী আনজুমান আরা শহীদও ছিলেন। যদিও এ বিনিয়োগ থেকে ফান্ডগুলোর কোনো লাভ হয়নি। কেলেঙ্কারির দায়ে ফারমার্স ব্যাংকের তৎকালীন চেয়ারম্যান ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর বিদায় নিলে চৌধুরী নাফিজ সরাফাত ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন। নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় পদ্মা ব্যাংক। পরবর্তী সময়ে অনিয়ম-দুর্নীতির দায়ে বিপর্যস্ত ব্যাংকটিকে উদ্ধারের জন্য ৭১৫ কোটি টাকার মূলধন জোগান দেয় রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ এবং রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক।

নাফিজ সরাফাত পদ্মা ব্যাংকের চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকেই দেশের আর্থিক খাতে তার বিচরণ বাড়াতে থাকে। ব্যাংক মালিকদের সংগঠনের সদস্য হওয়ার মাধ্যমে অভিজাত ব্যবসায়ীর তালিকায় নাম লেখান। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে নাফিজ সরাফাত দিন দিন অত্যন্ত প্রভাবশালী ও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। শেখ হাসিনাকে নাফিজ সরাফাত ফুফু বলে সম্বোধন করতেন। অন্যদিকে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদকে পরিচয় দিতেন কাজিন হিসেবে। সুসম্পর্ক ছিল গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে। এসব সংযোগ কাজে লাগিয়ে নাফিজ সরাফাত যখনই যে কাজে হাত দিয়েছেন, সেখানেই সফল হয়েছেন।

নাফিজ সরাফাতের সঙ্গে সালমান এফ রহমান, নজরুল ইসলাম মজুমদারসহ ব্যাংক ও আর্থিক খাতের প্রভাবশালীদের সুসম্পর্ক ছিল। নজরুল ইসলাম মজুমদারকে নিজের গণমাধ্যমের সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছেন নাফিজ সরাফাত। জনশ্রুতি রয়েছে; সালমান এফ রহমান যখন তার বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ারদর বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন জনকে বিনিয়োগে উৎসাহিত করছিলেন, তখন তাতে সাড়া দিয়ে নাফিজও তার ফান্ডের অর্থ কোম্পানিটির শেয়ারে বিনিয়োগ করেছেন। যদিও পরবর্তী সময়ে সালমান এফ রহমানকে না জানিয়ে বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ার বিক্রি করে দেয়ায় বাজারে কোম্পানিটির শেয়ারদর পড়ে যায়। এতে নাফিজ সরাফাতের ওপর ক্ষুব্ধ হন সালমান এফ রহমান।

সালমান এফ রহমানের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপড়েনের মধ্যে নাফিজ সরাফাত সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন। তৎকালীন অর্থ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গেও তার সখ্য ছিল। আ হ ম মুস্তফা কামালকে কাজে লাগিয়ে বেস্ট হোল্ডিংসের আইপিও ডিরেক্ট লিস্টিংয়ের অনুমোদন করিয়ে নেয়ার সুপারিশ আদায় করেছিলেন নাফিজ সরাফাত। যদিও শেষ পর্যন্ত এটি সফল হয়নি। এর কয়েক বছর পর বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের মাধ্যমে শেষ পর্যন্ত বেস্ট হোল্ডিংসকে তালিকাভুক্ত করাতে সক্ষম হন তিনি। বেস্ট হোল্ডিংসের প্লেসমেন্ট শেয়ার সাবেক আইজিপি বেনজীরের দুই মেয়ের নামে বরাদ্দ দেয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন নাফিজ সরাফাত। মূলত প্লেসমেন্ট শেয়ার বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তি ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের উপহার দেয়ার মাধ্যমে নাফিজ তার প্রভাব বজায় রাখতেন। এ প্রভাব কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন সুবিধাও আদায় করে নিয়েছেন তিনি। এ কারণে সরকারের কোনো দপ্তরে নাফিজের কোনো কাজ আটকে থাকত না। ফলে অনেকেই তার সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে নিজেদের স্বার্থ আদায় করেছে। এক্ষেত্রে লবিংয়ের জন্য নাফিজ সরাফাত তাদের কাছ থেকে বড় অংকের অর্থ নিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। 

নাফিজ সরাফাত সব সময় বড় প্রকল্পকে লক্ষ্য করেই তার পরিকল্পনা সাজাতেন। কিন্তু কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজের মতো ছোট কোম্পানির আইপিও অনুমোদন করিয়ে দেয়ার জন্য তার লবিং করার বিষয়টি অনেককেই অবাক করে দেয়। মূলত কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজের প্লেসমেন্ট শেয়ার অনেক প্রভাবশালীদের দিয়েছিলেন নাফিজ সরাফাত। এ কারণে কোম্পানিটিকে যেকোনোভাবেই হোক পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির জন্য তিনি উঠেপড়ে লেগেছিলেন। অবশ্য কপারটেকের আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়মের সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে বিষয়টি আটকে যায়। নিরীক্ষকের বিষয়ে তদন্ত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করে ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (এফআরসি)। এর ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট নিরীক্ষক আহমেদ অ্যান্ড আখতারকে নিষিদ্ধ করে আইসিএবি। সে সময় কপারটেক ইস্যুতে এফআরসিতে লবিংয়ের জন্য গিয়েছিলেন নাফিজ সরাফাত। 

এ বিষয়ে এফআরসির সাবেক চেয়ারম্যান সিকিউকে মুসতাক আহমেদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘কপারটেকের আইপিও বিষয়ে আমার কাছে সেসময় চৌধুরী নাফিজ সরাফাত এসেছিলেন। আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম তিনি তো এ কোম্পানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট না, তাহলে তিনি কেন এ বিষয়টি নিয়ে এসেছেন? তবে তিনি এ বিষয়ে আমার ওপর প্রভাব খাটাতে পারেননি। আমি কোম্পানিটির নিরীক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করেছিলাম। আইপিও বন্ধ করার ক্ষমতা আমার কাছে ছিল না। পরবর্তী সময়ে আইপিওটি অনুমোদন হয়ে যায়। এ কোম্পানির আইপিও নিয়ে আমার কাছে সে সময় তৎকালীন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলামও ফোন করেছিলেন।’

নাফিজ সরাফাত ডিএসইর প্রয়াত এক সভাপতিকে দিয়ে শেষ পর্যন্ত কপারটেককে তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে আইনি ছাড়ের জন্য স্টক এক্সচেঞ্জটির পক্ষ থেকে বিএসইসির কাছে চিঠি পাঠাতে সক্ষম হন। এরই ধারাবাহিকতায় আইনি ছাড় দেয় বিএসইসি এবং শেষ পর্যন্ত কপারটেক তালিকাভুক্ত হয়। কোম্পানিটির আইপিও প্রক্রিয়ায় ইস্যু ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন এমটিবি ক্যাপিটালের প্রধান নির্বাহী খায়রুল বাশার আবু তাহের মোহাম্মদ। তাকে পরবর্তী সময়ে ডিএসইর প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিআরও) হিসেবে নিয়োগের ক্ষেত্রে সহায়তা করেন নাফিজ সরাফাত। তিনি এখনো ডিএসইর সিআরওর দায়িত্বে রয়েছেন।

স্টক এক্সচেঞ্জের বিরূপ মন্তব্য সত্ত্বেও বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম খায়রুল হোসেনের সময়ে অনেক আইপিও অনুমোদন করা হয়েছে। তবে কপারটেক ইস্যুতে সমালোচনা শুরু হলে কমিশন স্টক এক্সচেঞ্জের মতামত ছাড়া আইপিও অনুমোদন না করার নীতি গ্রহণ করে। মূলত এক্ষেত্রে কৌশলে কপারটেকের আইপিও অনুমোদনের দায় ডিএসইর ওপর চাপানোর কৌশল নেয়া হয়। যদিও আইপিওর বাতিলের আইনি ক্ষমতা কমিশনের ছিল। তাছাড়া রেইসের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও খায়রুল কমিশন কোনো ধরনের তদন্ত বা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এমনকি একবার রেইসের কার্যক্রম পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও পরবর্তী সময়ে সেটি আর বাস্তবায়ন হয়নি। এছাড়া অর্থ মন্ত্রণালয়ের সুপারিশের বরাত দিয়ে মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের মেয়াদ আরো ১০ বছর বাড়ানোর জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করে খায়রুল কমিশন। মূলত বিনিয়োগকারী নামধারী কিছু ব্যক্তির মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে মিউচুয়াল ফান্ডের মেয়াদ বাড়ানোর দাবি জানানো হয়। এর ভিত্তিতে অর্থ মন্ত্রণালয় বিএসইসির কাছে মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের মেয়াদ বাড়ানোর সুপারিশ করে এবং তাতে সম্মতি দিয়ে বিএসইসি প্রজ্ঞাপন জারি করে। যদিও পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করার পূর্ণ আইনি এখতিয়ার বিএসইসির ছিল।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম খায়রুল হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমি এককভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি। কমিশন সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাছাড়া মিউচুয়াল ফান্ড বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন কমিশনার নিজামী। তার কাজেও আমি হস্তক্ষেপ করিনি। রেইসের কার্যক্রম পরিদর্শনের জন্য আমি নির্দেশ দিয়েছিলাম। পরবর্তী সময়ে সেটি কেন কার্যকর হয়নি তা কমিশনার নিজামী ভালো জানেন। মিউচুয়াল ফান্ডের মেয়াদ বাড়ানোর ক্ষেত্রে আমার কোনো ভূমিকা ছিল না অর্থ মন্ত্রণায়লের নির্দেশের কারণে মেয়াদ বাড়াতে হয়েছে। এমনকি আমি অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়টি যথাযথ হবে না উল্লেখ করে চিঠিও পাঠিয়েছিলাম।

খায়রুল কমিশনের সময়ে মিউচুয়াল ফান্ড বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিশনার অধ্যাপক হেলাল উদ্দীন নিজামী রেইসকে বিভিন্নভাবে আনুকূল্য দেখিয়েছিলেন। মিউচুয়াল ফান্ড সম্পর্কিত সিদ্ধান্তের বিষয়ে ড. এম খায়রুল সাবেক কমিশনার নিজামী সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। অবশ্য অধ্যাপক হেলাল উদ্দীন নিজামীর সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

সম্প্রতি বেস্ট হোল্ডিংসের বন্ডে ৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের জন্য চৌধুরী নাফিজ সরাফাত চাপ দিয়েছিলেন বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়েছেন বাংলাদেশ ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফাইন্যান্স ফান্ড লিমিটেডের (বিআইএফএফএল) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরমানুল ইসলাম। সে সময় তৎকালীন অর্থ সচিব আব্দুর রউফ চৌধুরীর অফিস কক্ষে সালমান এফ রহমান ও চৌধুরী নাফিজ সরাফাত উপস্থিত ছিলেন বলে তিনি জানিয়েছেন। অবশ্য এ সাক্ষাতের কিছুদিন পরই ফরমানুল ইসলামকে প্রতিষ্ঠানটি থেকে পদ্যতাগে বাধ্য করা হয়।

পদ্মা ব্যাংকের পরে নাফিজ সরাফাতের চোখ যায় সাউথইস্ট ব্যাংকের দিকে। তিনি ব্যাংকটির সাবেক দুই চেয়ারম্যান এমএ কাশেম ও আজিমুদ্দিন আহমেদকে কৌশলে পর্ষদ থেকে সরিয়ে দেন। এক্ষেত্রে সাউথইস্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যান আলমগীর কবির ব্যাংকটিতে তার নিয়ন্ত্রণ নিরঙ্কুশ করতে নাফিজের শরণাপন্ন হন। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়মের অভিযোগ তুলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মাধ্যমে আজিম ও কাশেমের বিরুদ্ধে আইনি কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় অনিয়মের অভিযোগ তুলে তাদেরকে ব্যাংকটি পর্ষদ পরিচালক পদ থেকে অপসারণ করা হয়। পরবর্তী সময়ে কৌশলে নাফিজ সরাফাত তার স্ত্রী আনজুমান আরা শহীদকে ব্যাংকটির পরিচালক বানান। তিনি তার ছেলে চৌধুরী রাহিব সরাফাতকেও ব্যাংকটির পরিচালক করতে চেয়েছিলেন। যদিও তার পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে সেটি আর সম্ভব হয়নি।

নাফিজ সরাফাত পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেশকিছু কোম্পানির নিয়ন্ত্রণও নিয়েছিলেন। এর মধ্যে ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস, ন্যাশনাল টি কোম্পানি অন্যতম। তিনি ইউনিক হোটেলের উদ্যোক্তা নূর আলীর প্রতিষ্ঠানের মনোনীত পরিচালক হিসেবে কোম্পানিটির পর্ষদে পরিচালক হয়ে আসেন। পাশাপাশি ইউনিক মেঘনাঘাট পাওয়ারের মালিকানায়ও যুক্ত হন নাফিজ সরাফাত। মূলত তার মালিকানাধীন স্ট্র্যাটেজিক ফাইন্যান্স লিমিটেডের মাধ্যমে তিনি ইউনিক মেঘনাঘাট পাওয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব নেন। ৫৮৪ মেগাওয়াট সক্ষমতার এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মূল বিনিয়োগ ইউনিক গ্রুপের হলেও বিভিন্ন ধরনের দরকষাকষি ও অনুমোদন পাইয়ে দেয়ার বিষয়টি দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন নাফিজ সরাফাত। ফলে কম বিনিয়োগ করেও তিনি এ প্রকল্প থেকে আকর্ষণীয় মুনাফা করতে সক্ষম হন। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে এসএফএলের ৩৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ, ইউনিক হোটেল অ্যান্ড সিসোর্টসের ৩৭ দশমিক ২৪ শতাংশ এবং কাতারভিত্তিক নেব্রাস পাওয়ারের ২৪ শতাংশ মালিকানা রয়েছে। নেব্রাস পাওয়ারের কাছে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির ২৪ শতাংশ শেয়ার ২ কোটি ৪০ লাখ ডলারে বিক্রি করা হয়। এক্ষেত্রে ৫১ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করেছে নাফিজের প্রতিষ্ঠান এসএফএল ও ৪৯ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করেছে ইউনিক হোটেল। এ শেয়ার বিক্রি করে নাফিজের প্রতিষ্ঠান শতকোটি টাকার বেশি মুনাফা করেছে। 

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ন্যাশনাল টি কোম্পানির পর্ষদে ফাইনেক্স সফটওয়্যার লিমিটেডের মনোনীত পরিচালক হিসেবে চৌধুরী নাফিজ সরাফাত জায়গা করে নেন। কোম্পানিটি নতুন শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে ২৭৯ কোটি টাকার মূলধন বৃদ্ধির জন্য বিএসইসির কাছ থেকে অনুমোদন পেয়েছে। সম্প্রতি মূলধন বৃদ্ধির জন্য শেয়ার ইস্যুর সাবস্ক্রিপশনের সময়সীমা ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। 

ডিরেক্ট লিস্টিংয়ের জন্য অনুমোদন না দিয়ে বেস্ট হোল্ডিংসকে আইপিওতে আনতে নাফিজ সরাফাতের প্রচেষ্টা রুখে দিয়েছিলেন শিবলী কমিশন। যদিও এই কমিশনই পরবর্তী সময়ে কোম্পানিটিকে তালিকাভুক্তির অনুমোদন দিয়েছে। তাছাড়া শিবলী কমিশনের সময়ে রেইসের বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। এ বিষয়ে জানতে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম ও রেইসের চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

রেইসের প্রতিষ্ঠার পর থেকে চৌধুরী নাফিজ সরাফাত ও ড. হাসান তাহের ইমাম যুগপৎভাবে ফান্ডের বিষয়টি দেখভাল করছিলেন। তবে গত তিন-চার বছর ধরে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। এমনকি রেইসের মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি আদালতেও গড়িয়েছে। রেইসে নাফিজ সরাফাতের ২৫ শতাংশ এবং হাসান তাহের ইমামের ৭৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। নাফিজ সরাফাতের পাশাপাশি হাসান তাহের ইমামের বিরুদ্ধেও রেইসের ফান্ডগুলোর অপব্যবহারের মাধ্যমে অর্থ কামানোর অভিযোগ রয়েছে। তাছাড়া সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে রেইসের প্রশ্নবিদ্ধ বিনিয়োগের বিষয়টিতে তিনিও সম্পৃক্ত ছিলেন। রেইসের বেশকিছু ফান্ডের ট্রাস্টির দায়িত্বে ছিল বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি (বিজিআইসি)। বিভিন্ন প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের নামে শেয়ার কিনে বিজিআইসির পর্ষদে তিনজন পরিচালক বসিয়ে দেন হাসান ইমাম। তাছাড়া মাল্টি সিকিউরিটিজে বেশি কমিশনে রেইসের ফান্ডগুলোর লেনদেন করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। যেখানে অন্যান্য গ্রাহকের ক্ষেত্রে অর্ধেক কমিশন নিয়েছে ব্রোকারেজ হাউজটি। মাল্টি সিকিউরিটিজের মালিকানায় রয়েছে রেইস। মাল্টি সিকিউরিটিজসহ রিজেন্ট স্পিনিংয়ের করপোরেট বন্ড ও পদ্মা ব্যাংকের মতো বিতর্কিত বিনিয়োগ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রেও তার দায় রয়েছে বলে মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেইস ম্যানেজমেন্ট পিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাসান তাহের ইমাম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘রিজেন্ট স্পিনিংয়ের বন্ডে বিনিয়োগের সময় প্রতিষ্ঠানটির অবস্থা ভালো ছিল। পদ্মা ব্যাংকের ক্ষেত্রেও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে বিনিয়োগ করা হয়েছে। মাল্টি সিকিউরিটিজের মাধ্যমে রেইসের ফান্ডের লেনদেনে বেশি কমিশন দেয়া হলেও সিকিউরিটিজের কাছ থেকে আমরা বিনিয়োগের বিপরীতে রিটার্ন পেয়েছি। সেটি সমন্বয় করা হলে কমিশন ব্যয় কমে আসবে। নাফিজ সরাফাতের সঙ্গে বেশকিছু বিনিয়োগের বিষয়ে একমত হতে না পারার কারণেই দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। এ কারণে আমাকে গত কয়েক বছর নানাভাবে হয়রানি ও নির্যাতন করা হয়েছে। বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াতও নানাভাবে আমাকে হয়রানি করেছেন। নাফিজ সরাফাতসহ বিএসইসির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আমি মামলা করেছি। রেইসের যেসব ফান্ডের ট্রাস্টি হিসেবে বিজিআইসি রয়েছে সেগুলোর মাধ্যমে কোম্পানিটিতে বিনিয়োগ করা হয়নি, করা হয়েছে প্রাইভেট কোম্পানির মাধ্যমে। ট্রাস্টির পর্ষদে থাকলেও এক্ষেত্রে কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত প্রভাবিত করার ক্ষেত্রে আমাদের কোনো ভূমিকা ছিল না।’

রেইস ম্যানেজমেন্টের বিরুদ্ধে মিউচুয়াল ফান্ড বিধিমালা লঙ্ঘন করে নিজেদের ব্যবস্থাপনাধীন ফান্ডের মাধ্যমে ব্লক মার্কেটে বড় ধরনের লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত রেইসের ব্যবস্থাপনাধীন ফান্ডগুলোর ব্লক মার্কেটে লেনদেন স্থগিত করেছে বিএসইসি। পাশাপাশি মাল্টি সিকিউরিটিজ অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেডের ব্লক মার্কেটে লেনদেন সুবিধা স্থগিত করা হয়েছে। গত ৪ জুলাই বিএসইসির পক্ষ থেকে এ-সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করা হয়েছে।

যদিও এ বিষয়ে রেইসের হাসান তাহের ইমামের দাবি, এসব লেনদেনে আইনের ব্যত্যয় হয়নি। বিএসই‌সি আ‌ইনব‌হির্ভূতভা‌বে এ নি‌র্দেশ দি‌য়ে‌ছে। 

শিবলী কমিশনের সময়ে মিউচুয়াল ফান্ড বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন সাবেক কমিশনার অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান। জানতে চাইলে তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘এক বছরের বেশি সময় ধরে রেইসের সম্পদ ও বিনিয়োগের বিষয়ে তদন্ত করে উল্লেখযোগ্য কোনো বিচ্যুতি পাওয়া যায়নি। তবে বিজিআইসির পর্ষদে রেইসের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের থাকার বিষয়টি জানতে পেরে কমিশনের আদেশে ফান্ডগুলোর ট্রাস্টির দায়িত্ব থেকে বিজিআইসিকে বাদ দেয়া হয়েছে। এটি স্বার্থগত দ্বন্দ্বের বিষয়।’ 

রেইসের ফান্ডগুলোর মাধ্যমে ফ্রন্ট রানিংয়ের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের তদন্তের সময় এ বিষয়টি টার্মস অব রেফারেন্সে ছিল না। তাছাড়া এটি বেশ সময়সাপেক্ষ কাজ। যেহেতু অভিযোগ আছে, তাই কমিশন চাইলে এ বিষয়ে বিশদ তদন্ত করে দেখতে পারে।’

রাজউকের পূর্বাচল উপশহর প্রকল্পে নিয়মবহির্ভূতভাবে নাফিজ সরাফাতের মালিকানাধীন কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশকে প্লট দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে অভিযোগ হলো নাফিজ সরাফাত প্রভাব খাটিয়ে প্লটটির বরাদ্দ নিয়েছিলেন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদকেও সম্পৃক্ত করেছিলেন তিনি। এছাড়া পদ্মা ব্যাংককে মূলধন দিয়ে সহায়তা করার পুরস্কার হিসেবে আইসিবির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী সানাউল হককে অবসরের পর ডিএসইর এমডি বানিয়েছিলেন নাফিজ সরাফাত। যদিও এক্সচেঞ্জটিতে তিনি বেশিদিন দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। পরে তিনি রূপালী ব্যাংকেরও চেয়ারম্যান হয়েছিলেন, সম্প্রতি তাকে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে।

নাফিজ সরাফাতের প্রভাব-প্রতিপত্তি আরো বাড়তে শুরু করে ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর। সে সময় নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য বেশকিছু বিদেশী পর্যবেক্ষক বাংলাদেশে এসেছিলেন। তারা সেই বিতর্কিত নির্বাচনকে সুষ্ঠু হয়েছে বলে মতামত দিয়েছিলেন। এই বিদেশী পর্যবেক্ষকদের আনার ক্ষেত্রে মূল দায়িত্ব পালন করেছিলেন নাফিজ সরাফাত। এরপর থেকেই তিনি সরকারের আরো আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন। নাফিজ সরাফাতের ব্যাংক দখল নিয়ে ফেসবুকে কার্টুন আঁকার অপরাধে ২০২০ সালের মে মাসে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার হন কার্টুনিস্ট আহমেদ কবীর কিশোর ও লেখক মুশতাক আহমেদ। সে বছরের ২ মে কার্টুনিস্ট কিশোরকে বাসা থেকে তুলে নেয়া হয়। মুশতাক আহমেদকে তুলে নেয়া হয় ৪ মে। আটকের পর তাদের মারাত্মক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। এর পর ৫ মে তাদের র‍্যাবের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। সে সময় ১০ মাসের মধ্যে অন্তত ছয়বার তাদের জামিনের আবেদন নাকচ হয়ে যায়। আটক অবস্থায় ২০২১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে মুশতাক আহমেদ মারা যান। পরে ওই বছরের মার্চে জামিনে ছাড়া পান কিশোর। ছাড়া পাওয়ার পর গণমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারে কিশোর জানিয়েছিলেন তাকে হেফাজতে নিয়ে নির্যাতনের সময় একটি ব্যাংকের চেয়ারম্যানকে নিয়ে কার্টুন আঁকার বিষয়টি নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে কিশোর ও মুশতাককে নির্যাতনের সময় নাফিজ সরাফাতও উপস্থিত ছিলেন। মূলত সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদকে দিয়ে কার্টুন আঁকার কারণে কিশোর ও মুশতাককে অমানুষিক নির্যাতন করিয়েছিলেন নাফিজ সরাফাত। ২০২১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি মুশতাক আহমেদের মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর ঘটনায় সে সময় শোক ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক, নরওয়ে, স্পেন, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত এবং যুক্তরাজ্য ও কানাডার হাইকমিশনার। এ ১৩ দেশের রাষ্ট্রদূতরা তাদের বিবৃতিতে কী পরিস্থিতিতে মুশতাক আহমেদের মৃত্যু ঘটেছে তার দ্রুত, স্বচ্ছ ও স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানান। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল বাশেলেটও সে সময় বাংলাদেশের কারা হেফাজতে লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ঘটনা ও কার্টুনিস্ট কিশোরকে নির্যাতনের অভিযোগের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে দ্রুত, স্বচ্ছ ও স্বতন্ত্র তদন্ত নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। এছাড়া আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচও এক বিবৃতিতে মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর স্বচ্ছ ও স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানিয়েছিল। দেশেও কিশোর ও মুশতাকের ওপর নির্যাতনের ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেয় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও টিআইবি।

রেইসের সর্বশেষ পোর্টফোলিও প্রতিবেদন অনুসারে, এ বছরের ৩০ জুন শেষে সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানটির পরিচালিত ১২টি ফান্ডের ক্রয়মূল্যে মোট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ২৩৭ কোটি টাকা। বাজারমূল্যে এ সম্পদের পরিমাণ ২ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। এসব সম্পদের মূল্য কমেছে ৮৮৭ কোটি টাকা। এ সময়ে এসব ফান্ড থেকে বাজারমূল্যে ৫৯৯ কোটি টাকা অতালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করা হয়েছে। এসব বিনিয়োগের ক্রয়মূল্যে সম্পদের পরিমাণ ছিল ৬৩৩ কোটি টাকা। এসব বিনিয়োগের সিংহভাগই করা হয়েছে পদ্মা ব্যাংক, মাল্টি সিকিউরিটিজ ও রিজেন্ট স্পিনিংয়ের বন্ডে। গত ৫ বছরে রেইসের মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর এনএভি (নিট সম্পদমূল্য) রিটার্নের চক্রাকার বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার (সিএজিআর) ছিল ঋণাত্মক ১ দশমিক ১ শতাংশ। 


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন